– ব্যারিস্টার আবুল আলা ছিদ্দিকী
প্রত্যেকটা দেশের এগিয়ে যাওয়ার পিছনে যে শক্তিটা কাজ করে সেটি হচ্ছে যুবসমাজ।
বাংলাদেশেরও আছে সম্ভাবনাময় প্রচুর সেই খনি, কিন্তু আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মুল্যবান উপাদানকে নৈতিক ও দেশপ্রেমের শিক্ষা দিয়ে যথাযতভাবে গড়ে তুলতে পারছি না।
অতীতে একটা দেশ অন্য দেশের স্বার্থের বিরূদ্ধে গেলে যুদ্ধের মাধ্যমে পরাস্ত করে প্রতিশোধ গ্রহন করতো।
কিন্তু আধুনিক বিশ্বে অর্থনৈতিক কারনে সরাসরি যুদ্ধ ব্যাতীত (কয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া) এক দেশ অন্য দেশের বিরূদ্ধে প্রতিশোধ নেয় ভিন্নভাবে। তা হতে পারে সাংস্কৃতিক,সন্ত্রাসী, মরনঘাতি মাদক আগ্রাসন দিয়ে।
আমরা জাতি হিসাবে খুবই আরামপ্রিয়! তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় খুব কম! নিজ দেশের এগিয়ে যাওয়া ও অবক্ষয় নিরোধ সম্পর্কে চিন্তা, গবেষনা করিও কম।
প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশও আজ জর্জরিত অনেক সমস্যায়। আর এই অন্যতম কয়েকটা সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে মরণ নেশা ইয়াবা।
ইয়বা তৈরির মুল রাসায়নিক উপদান এম্পিটামিন থেকে মেথএম্পিটামিন প্রথম তৈরি হয় ১৯১৯ সালে জাপানে।
যদিও এই দুই রাসায়নিক উপদান মেথএম্পিটামিন ও এম্পিটামিন নাকের ছিদ্র খোলা রাখার ঔষধ (Nasal Decongestant) এবং ব্রংকিয়াল ইনহেলার হিসাবে ব্যাবহার করা হত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান তাদের সৈনিকদের শ্রান্তির, যুদ্ধক্ষেত্রে জাগিয়ে রাখা সহ মানষিক ভাবে উৎফুল্ল রাখা এবং শত্রুপক্ষের উপর হামলা করা আত্ত্বঘাতি সৈন্যদল তৈরি করার জন্য সৈন্যদের ইয়াবা সেবন করতে দেওয়া হত।
১৯৫০ সালের দিকে ইয়াবা সাধারন জনগণের নাগালে আসার পর ইয়াবার ক্ষতির রহস্য ক্রমান্বয়ে উন্মেচিত হয়। এরপর জনগনদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য পশ্চিমা বিশ্বে মরণ নেশা ইয়বাকে নিষিদ্ধ করে।
পরবর্তীতে আনুমানিক ১৯৮৯ সালে মিয়ানমারের (বার্মা) থাইল্যান্ড সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মাধ্যমে থাইল্যান্ডে ও ছড়িয়ে পড়ে ইয়াবা।
বাংলাদেশে ইয়াবার প্রথম আবির্ভাব হয় ১৯৯৭ সালে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার(বার্মা) সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে সারা দেশ সয়লাব হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে ও ২০১৫ সাল পুর্ববর্তী সময়ে রাজধানী শহর ঢাকায় বেশ কিছু ইয়াবা কারখানার সন্ধান পায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, যেগুলোর মালিক ছিল প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তির সন্তানেরা।
প্রথমদিকে ইয়াবার মুল্য চড়াও হলেও এখন সহজলভ্য হওয়ার কারনে অনেকের ক্রয়সীমার নাগালে। সহজে প্রতীয়মান হয় সহজলভ্য হওয়ার কারনে এই মরণ নেশা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয় এবং শহর থেকে গ্রাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত।
মরণঘাতি ইয়াবা অনেক ক্ষতিকর একটা নেশা।
আমিরেকার ন্যাশনাল ড্রাগ ইন্টালিজেন্স সেন্টার জুন ২০০৩ সালে প্রকাশিত তাদের গবেষনা পত্রে উল্লেখ করেন ইয়াবা সেবন করার ফলে মারাত্বক দুরারোগ্যে আক্রান্ত হয় যার দরূন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দ্রুত চলে যায়।
এইবার দৃষ্টিপাত করি ইতিহাসের পাতায়ঃ
১৯ শতক পুর্ববর্তী সময়ে ব্রিটিশরা সহজে ভারত বর্ষ দখল নিয়ে নেয়। কিন্তু তৎসময়ে চীনারা জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে যায় অনেক তাই ব্রিটিশরা সহজে তাদেরকে পরাস্ত করতে পারেনি। ব্রিটিশরা কম যায় না কূঠ-কৌশলে। তারা একটা জিনিষ লক্ষ্য করল চীনা যুবক থেকে শুরু করে বয়স্কদের ক্ষেত্রেও, তা হচ্ছে এরা সবাই আফিমকে বিভিন্ন চিকৎসার ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করে।
চতুর ব্রিটিশরা পেয়ে যায় মারণাস্ত্রের চেয়ে নিজেদের ক্ষতিহীন নিরব ঘাতক অস্ত্র চীনাদের আফিম প্রীতির রহস্য! এইবার কাজ শুরূ তারা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে চীনে প্রচুর পরিমানে আফিম পাঠাতে শুরু করেন। ক্রমান্বয়ে চীনা অভিজাত শ্রেনী থেকে শুরু করে ক্রয়ক্ষমতার নাগালে থাকা মানুষেরা মাদক হিসাবে অত্যাধিক আফিম নেওয়া শুরু করল। যুব সমাজ মাদাকাসক্ত হয়ে যুদ্ধ করার ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে।
ব্রিটিশদের কুঠ-কৌশল বুঝতে পেরে চীনা সম্রাট চিয়া চিং ১৮০০ সালের দিকে চীনে আফিমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে কিন্তু দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তারা কে শুনে কার কথা।
শুরু হয় নিজ দেশের যুব সমাজ থেকে শুরু করে বয়স্কদের মাদকাসক্ত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য প্রথম আফিম যুদ্ধ(১৮৩৯-১৮৪২) এবং দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ(১৮৫৬-১৮৬০) সাল পর্যন্ত যদিও ব্রিটিশদের কাছে এটা বানিজ্য যুদ্ধ নামেই অধিক পরিচিত।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস চীনাদের যুব সমাজ বিশেষ করে সৈন্যরা মাত্রাতিরিক্তভাবে আফিম সেবনের কারনে যুদ্ধে পরাজয় বরন করেন আর ব্রিটশরা হংকং থেকে শুরু করে অনেক এলাকা দখল করে নিয়ে ছিলেন।
এইবার আসুন আমাদের দেশের দিকে তাকায়ঃ
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নততর জাতি হিসাবে মাথা তুলে দাড়ানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এই দেশের দেশপ্রেমিক জনতা। কিন্তু আমাদের দেশের অগ্রযাত্রা রোধ করে দেওয়ার জন্য অনেক দেশ ও ধুতি পরিহিত সংস্থা উদগ্রীব হয়ে আছে যাতে তাদের দেশকে অতিক্রম করে উন্নত স্থানে যেতে না পারে প্রিয় বাংলাদেশ।
আমাদের দেশে ওইসব সংস্থা কিংবা দেশের এই দেশীয় দুসর ও আছেন। এই দুসর শ্রেনীরা আমাদের দেশের বিভিন্ন দলের নেতা কিংবা কর্মী। তারাই সুযোগ করে দিচ্ছেন দেশের দক্ষিন-পুর্ব সীমান্তে ইয়াবা আর অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে ফেন্সিডিল প্রবেশ করিয়ে দেশে মাদক সহজলভ্য করার জন্য।
আবার আরেক শ্রেনীর বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ আছেন যারা অন্য দেশের আকাশ অপ-সংস্কৃতি বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়ে যুব সমাজ ও পারিবারিক শান্তি ধ্বংস করায় লিপ্ত।
উল্লেখ্য কয়েকদিন আগে একটা জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম ছিল বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ দ্রুত বার্ধ্যক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আসুন আমরা সবাই মাদক চোরাকারবারি থেকে শুরু করে দেশের যুব সমাজ অবক্ষয়কারী ও দেশ ধ্বংসকারী উপাদান মরন নেশা ও অপসংস্কৃতি সত্যিকার আমদানীকারক ব্যাক্তি যেই দলেরই সমর্থক হোক না শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য সহায়তা করে নিজ সমাজ ও দেশকে রক্ষা করে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে মাথা তুলে দাড়ানোর জন্য সহযোগিতা করি।