কাফি আনোয়ার

উন্নয়নের গণতন্ত্র,শেখ হাসিনা মূলমন্ত্র, শ্লোগানকে ধারণ করে বাংলাদেশকে বিশ্বপরিমন্ডলে নতুন আঙ্গিকে পরিচয় করাতে সক্ষম হয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা থেকে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ। ডিজিটালাইজেশন,খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা,দারিত্রতা বিমোচন,জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি ও দূর্যোগ মোকাবেলা, নারী ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যু হ্রাস,বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সক্ষমতাবৃদ্ধি, ভৌত ও অবকাঠামো উন্নয়ন,সমুদ্রসীমাজয়, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিদমন ,প্রতিবেশী ও উন্নয়নযোগী দেশের সাথে বন্ধুত্ব ও পারষ্পারিক সহযোগিতা সুদৃঢ়করণ’সহ সর্বক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ, জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সফলতার স্বীকৃতি পৃথিবীজুড়ে।

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরিন চ্যালেঞ্জ মোকবিলা করে মাথপিছু আয় ১৩১৪ ডলারে উন্নীতকরণ , দারিদ্রের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশ হ্রাস’সহ টেকসই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর সাহসী,দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী , বিচক্ষণ ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের মহিমায় বাঙ্গালী আজ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে বিশ্বপরিমন্ডলে সর্বক্ষেত্রে গৌরব ও সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ও দেশের নাগরিক যে স্বমহিমায় আলোকিত হতে পারে সেই আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্ন কখনো কেউ জাতির প্রাণে সঞ্চারিত করতেই পারেনি । সেই মর্যাদাহীনতার হতাশা ও দৈন্যতা জাতির আত্মশক্তিকে জিম্মি করে রেখেছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি ফিরে পেয়েছে আত্মগৌরবের মহিমা ও ঘুরে দাঁড়ানোর অসম সাহসী প্রাণশক্তি ।

এই উত্তরণপর্বে তাঁর নের্তৃত্বকে পাড়ি দিতে হয়েছে হাজারো দেয়াল ও পুঞ্জীভুত জঞ্জালের স্তুপ। জাতির কলংক ও শাপমোচনে দিতে হয়েছে বেশুমার আত্মদান।

মানবিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন দেশের জাতীয় ও গ্রামীন অর্থনীতিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সমুদ্রনগর কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পবিকাশ ও বঙ্গোপসাগরজুড়ে বিস্তৃত অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কক্সবাজারকেন্দ্রিক উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা পাল্টে দিয়েছে সমুদ্র উপকুলের জীবন-জীবিকা ও সমৃদ্ধির মানচিত্র ।

প্রকৃতির অকৃপন হাতে ঢেলে দেয়া নৈসর্গিকতাকে কাজে লাগিয়ে এই সমুদ্র অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি জাতীয় প্রবৃদ্ধির সূচককে যেভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার উন্নয়নে কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন , সেই ঋণও অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা হবে।

শুধু কক্সবাজারকে ঘিরে যেসকল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল, নজিরবিহীন ও অভূতপূর্ব । এটা সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা, সাহস, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, দেশপ্রেম, দুরদর্শী ও নিবেদিতপ্রাণ মনোবৃত্তির জন্য ।

ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০সাল নাগাদ দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হবে ককসবাজার নির্ভও পর্যটনশিল্প। সেই লক্ষেই বাস্তবায়িত হচ্ছে ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প।

অর্থনীতিবিদদের মতে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি যে হারে বাড়ছে তাতে সরকারের গৃহীত প্রকল্পসমুহ বাস্তবায়িত হলে প্রবৃদ্ধি গড় হবে ৮শতাংশের বেশি।

ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমাবিরোধ নিষ্পত্তির ফলে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের যে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত তার আয়তন আরেক বাংলাদেশের সমান। এতে সমুদ্র অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনি বিকাশ ও প্রসারের অফুরন্ত সম্ভাবনার যে ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে তার কেন্দ্রবিূন্দু হচ্ছে পর্যটননগরী কক্সবাজার। উন্মোচিত হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত ।

সামগ্রিকভাবে কক্সবাজারকেন্দ্রিক মহাপরিকল্পনায় উন্নয়ন মহাসড়কে যেসকল প্রকল্প সংযুক্ত হয়েছে।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ : কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কটি ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন ১৬ ইসিবি ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকারের সময়ে ৪৮ কিমি প্রকল্প গৃহীত হয়। ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। বর্তমানে সড়কটি ৪৮ কিমি দৈর্ঘ্য থেকে বেড়ে ৮০ কিমি উন্নীত করা হয়েছে। কাজের গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগের সদস্যরা মূল সড়ককে তিন ধাপে ভাগ করে প্রথম ধাপে কলাতলী থেকে ইনানী পর্যন্ত ২৪ কিমি , দ্বিতীয় ধাপে ইনানী থেকে শিলখালী পর্যন্ত ২৪ কিমি,তৃতীয় ধাপে শীলখালী থেকে টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত কিমি সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে । প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৩ শ কোটি টাকা ।

দোহাজারি-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প : ২০১১ সালে কক্সবাজার জেলে পার্কের জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৮ কিমি রেল্পথ নির্মাণের ঘোষণা মাধ্যমে এই প্রকল্প গ্রহন করা হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮হাজার ৩৪ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পের অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।

ইতোমধ্যেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাস নাগাদনির্মান কাজ শুরু হবে বলে জানা জানা গেছে ।

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প : কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ কার্যক্রম মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ২০১৫ সালের ২ জুলাই উদ্বোধন করেন। বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে ৬৬৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯০০০ ফুটে উন্নীত হবে । এ প্রকল্পে ব্যয় ১হাজার ১২৩কোটি ৩২লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য কুতুবদিয়াপাড়া,সমিতিপাড়া,ফদনারডেইল এলাকার ৪ হাজার ৪০৯ টি পরিবারকে বাঁকখালী নদীর উত্তরপার্শ্বে খুরুশকুল মৌজায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পে পুণর্বাসন করা হচ্ছে। আশ্রয়ন প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য বাঁকখালী নদীর উপর এলজিইডি নির্মিতব্য সেতু ও সংযোগ সডকের জন্য ২০০কোটি টাকা , পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়িত পুর্ণবাসন প্রকল্প উন্নয়ের জন্য ২১০কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গত ২৯ এপ্রিল সুপরিসর বিমান বোয়িং-৭৩৭ কক্সবাজার বিমানবন্দরে পরীক্ষামুলকভাবে অবতরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পথে একধাপ এগিয়ে গেছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে। এই বিমানবন্দর চালু হলে বিদেশী পর্যটক আকর্ষনের পাশাপাশি কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পকে বিশ্বজুড়ে বিকশিত ও প্রসারিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রামু সেনানিবাস (১০ম পদাতিক ডিভিশন) : দেশের সীমান্ত অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরীয় নিরাপত্তা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষে রামু উপজেলার খুনিয়াপালং,দক্ষিণ মিড়াছড়ি ও রাজারকুল মৌজার ১ হাজার ৭৮০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত রামু সেনানিবাস । এটি দেশের ১০ম পদাতিক ডিভিশন, যার অধীনে রয়েছে ১০ম আর্টিলারী ব্রিগেড, ৯৭ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড, ২৩ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী ,৬০ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ৩৬ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট। ২০১৫ সালের ১ মার্চ এই সেনানিবাস উদ্বোধন করা হয়।

মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রজেক্ট : দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো লক্ষে জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার ও বাংলাদেশ সরকারে যৌথ অর্থায়নে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রজেক্ট। ওই প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট । প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫হাজার ৯ শত ৮৪ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা মৌজার ১৪১৪ একর ৬৫ শতক জমি অধিগ্রহণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত ককসবাজার’সহ দক্ষিণাঞ্চলে নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত হবে ।

এল এন জি ও কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র : বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এলএন জি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য মহেশখালী উপজেলার ৬টি মৌজায় (হোয়ানক, তেতালিয়া, কালারামারছড়া, হরিয়ারছড়া,পানিরছড়া, অমাবশ্যাখালী) ৫হাজার৬৪৬ একর ভুমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চূডান্ত পর্যায়ে রয়েছে ।

মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রজেক্ট : আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী বাংলাদেশ লিঃ ৭০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য মাতারবাডী মৌজার ১২০০ একর জমি অধিপ্রহন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইজিসিবি জেনারেশন কোম্পানী বাংলাদেশ লিঃ ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্প নির্মাণের জন্য পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ও করিয়ারদিয়া মৌজার ১ হাজার ৫৬০ একর জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলছে ।

সাবরাং অর্থনৈতিক জোন : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) টেকনাফ উপজেলার সাবরাং মৌজার ৮৮২একর জমিতে গড়ে তুলছে সাবরাং অর্থনৈতিক জোন। ইতোমধ্যে ভুমি অধিগ্রহণ চুড়ান্ত হয়েছে। এলজিইডি , বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপদ বিভাগ প্রকল্পটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ।

নাফ ট্যুরিজম পার্ক, জালিয়ারদ্বীপ : নাফ নদীর নান্দনিক দ্বীপ জালিয়ারদ্বীপে ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ের নির্মিত হচ্ছে নাফ ট্যুরিজম পার্ক । এটি দেশের প্রথম বিশেষায়িত পর্যটন অঞ্চল। এটি বাস্তবায়িত হলে বিদেশী পর্যটকে মুখরিত হবে টেকনাফ’সহ সমগ্র কক্সবাজার। এটি বাস্তবায়নের লক্ষে ইতোমধ্যে ওই দ্বীপের ২৭১একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) অনুকুলে হস্তান্তর করা হয়েছে । ৬ মে ২০১৭ ,শনিবার এই ট্যুরিজম পার্কের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ১৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার ফ্রি ট্রেড জোন : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা)মহেশখালী উপজেলার ১১ হাজার ৭৮৪একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলছে ওই ফ্রি ট্রেড জোন। এই প্রকল্পের জন্য হামিদরদিয়া মৌজার ৮৪৩একর, কুতুবজোম মৌজার ২ হাজার ২৮৩একর, ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৮হাজার ৬৫৮একর জমি অধিগ্রহণের জন্য অনুমোদন চুড়ান্ত করা হয়েছে ।

মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) মহেশখালী উপজেলার ১ হাজার ৪৩৮একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভুমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করেছে । তন্মধ্যে ছোট মহেশখালী মৌজার ৪৩০একর, পাহাড় ঠাকুরতলা মৌজার ১৪২একর, ঠাকুরতলা মৌজার ৫০৭একর, গোরকঘাটা মৌজার ৩৫৯ একর।

মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-২ : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) মহেশখালী উপজেলার উত্তর নলবিলা মৌজার ৮২৭ একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা বলে জানা গেছে ।

মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩ : মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা মৌজার ৮২৭ একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) ।

সোনাদিয়া পর্যটনকেন্দ্র : মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া উপদ্বীপে আন্তর্জাতিকমানের ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র স্থাপন করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা)। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ওই পর্যটনকেনন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য সোনাদিয়াদ্বীপের ৯হাজার ৪৬৭একর খাস জমি বেজার অনুকুলে হস্তান্তর করেছে। ইতোপূর্বে মহেশখালী উপজেলার ওই উপদ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথা থাকলেও ভু-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণ সরকার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে।

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ : আধুনিক ও বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ভবণের নির্মান কাজ উদ্বোধন করেন। এটি দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও মনোরম মেডিক্যাল কলেজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। কক্সবাজার সরকারী কলেজের পাশে ঝিলংহা মৌজার ৩২ একর জমির উপর ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে দেশের সেরা মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক ভবণ নির্মাণ করা হয়েছে ।

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম : পর্যটন নগরী কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টের সমুদ্রসৈকতের ঢিলছোঁড়া দুরত্বে দেশের ক্রিকেটসংস্কৃতি বিকাশ ও স্পোর্টস ট্যুরিজমের প্রসারের লক্ষে নির্মিত হয়েছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম । পর্যটন করপোরেশনের গলফ মাঠের ৫১একর জমির উপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ৩০কোটি টাকা ব্যয়ে এই ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করে ।

সাবমেরিন স্টেশন, পেকুয়া : বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসম্পদ রক্ষা, সমুদ্রনিরাপত্তা শক্তিশালীকরণের লক্ষে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতাবৃদ্ধির জন্য স্থাপন পেকুয়ায় স্থাপিত হচ্ছে দেশের প্রথম সাবমেরিন স্টেশন। মগনামা মৌজার ৪৬৬একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে এই সাবমেরিন স্টেশন। ইতোমধ্যে ভুমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার কক্সবাজারকেন্দ্রিক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, সমুদ্র গবেষনা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা , বিজিবি ব্যাটালিয়ন স্থাপন ,আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস স্থাপন , ১৫০কোটি টাকা ব্যয়ে রামু’র চেইন্দাতে নির্মিতব্য আইটি পার্ক , কক্সবাজারের ৫টি বেসরকারী কলেজকে সরকারীকরণ, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ভেটেনারী এন্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা , কক্সবাজার নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার ঘোষনা ও আধুনিক বিমানবাহিনী ঘাঁটি স্থাপন’সহ অজ¯্র উন্নয়ন প্রকল্প কক্সবাজারের ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক মানচিত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে তাতে এই নগরী হবে আগামীদিনের সিঙ্গাপুর কিংবা হংকং , নগরী যা বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির চিত্রকে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পর্যায়ে নিয়ে যাবে ।

তথাপি কক্সবাজারের সম্পদ ও অপার সম্ভাবনাকে পরিপূর্ণভাবে এঅঞ্চলের গণমানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে প্রয়োজন দক্ষ মানবসম্পদ। যার জন্য দরকার সুষম পরিকল্পনা , সমন্বিত কর্মকৌশল ও টেকসই প্রযুক্তি।

কক্সবাজারের লবণশিল্পকে অর্থকরীখাত হিসেবে গড়ে তুলতে জাতীয় লবণবোর্ড গঠন , মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনকে শক্তিশালীকরণ অপরিহার্য।

এতো প্রাপ্তি মধ্যেও কক্সবাজারের মানুষের মনে খচখচানি যে নেই এমন নয়। ভু-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র্রবন্দর নির্মাণে সরকার পিছু হটলেও এঅঞ্চলের মানুষ এখনও গভীর সমুদ্রবন্দরের স্বপ্ন দেখে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সমুদ্র উপকুলের জীবন-জীবিকা রক্ষা ও আন্তঃমহাদেশীয় যোগাযোগে সিল্ক রোড় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাবিত সীতাকু–চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কক্সবাজারকে নিরাপত্তা ও পূর্ণতা দিবে। আন্তঃউপজেলা ও আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে গত ৮ বছরে অভুতপূর্ব উন্নতি হয়েছে, যা কল্পনাতীত। স্থানীয়ভাবে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ,পরিকল্পিত নগরায়ন ও গ্রামীণ জনপদে আধুনিক নগরসুবিধা নিশ্চিত করতে জেলার বৃহত্তম বাণিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁও’কে পৌরসভায় রূপান্তরের দাবী দীর্ঘদিনের।

বঙ্গোপসাগরনির্ভর ব্লু-ইকোনমি বা সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা ও বঙ্গোপসাগরের ‘স্ট্রীং অব পার্ল’ খ্যাত সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের বদলে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা কক্সবাজার’সহ দেশের মানুষের মনে নতুন করে আশা সঞ্চার করেছে । এটি বাস্তবায়িত হলে সরকারের গৃহীত সকল প্রকল্প ও মহাপরিকল্পনা টেকসই উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

সকল সফলতার ধারাবাহিকতা নির্ভর করছে সুশাসন, জবাবদিহিতা, সুনাগরিকতা এবং সুদুরপ্রসারী ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব। সৎ, নিবেদিতপ্রাণ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বই গড়ে তুলবেূ অপার সম্ভাবনা-সমৃদ্ধির সোনার বাংলা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। যার পুরোটাই দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব রয়েছে, এই বাংলার যোল কোটি মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস। যার বদৌলতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।