জাগোনিউজ : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, খালেদা জিয়ার `ভিশন-২০৩০’ একটি ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন। এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। জাতির সঙ্গে একটি তামাশা ও প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আজকের এই ভিশন-২০৩০ একটি মেধাহীন, অন্তঃসারশূন্য, জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির ভিশন হচ্ছে হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার ভিশন। ’

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ সময় দলের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, পরের মেধা চুরি করা একটি নৈতিক অপরাধ। এটা এক ধরনের পলিটিক্যাল ডিজঅনেস্টি। একটি রাজনৈতিক দল কতটুকু দেউলিয়া হলে অপর একটি রাজনৈতিক দলের দেয়া আইডিয়া এবং চিন্তা নির্লজ্জভাবে চুরি করতে পারে, অনুকরণ করতে পারে। কিন্তু উদ্ভাবন করতে পারে না।

ভিশন-২০৩০ সাল পর্যন্ত পৌঁছার পথ তাদের জন্য খোলা নেই। বেগম জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’বলে যে কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছেন এসবের অনেক কিছুই আওয়ামী লীগের ‘ভিশন-২০২১’এ রয়েছে। বিএনপির ভিশন যেমনই হোক এতে কোনো নতুনত্ব নেই।

লিখিত বক্তব্যে কাদের বলেন, মূলত খালেদা জিয়ার আজকের বক্তব্য তার দলের অজ্ঞতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। তিনি অনেক বিষয় উপস্থাপন করেছেন যেগুলো ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। তাদের কাছে সততার বুলি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মানবাধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা শোনা জাতির জন্য খুবই অপমানজনক।

তিনি বলেন, তাদের নেতা জিয়াই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বাংলাদেশে বিচারহীনতার নজির স্থাপন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত চেতনা ও মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের চরিত্র পরিবর্তন করেছিল। আজকে তারা ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চায়।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারত নয়, ভৌগোলিক আয়তনের দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র। এখানে কোনো প্রদেশ নেই যে এখানে একটি ফেডারেল সরকার কার্যকর আছে। এটা নিয়ে স্বয়ং বিএনপির স্থায়ী কমিটি বৈঠকেও মতবিরোধ হয়েছে যা আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমি তাকে প্রশ্ন করতে চাই, বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তিনি এ ধরনের ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে কাদের খুশি করতে চান?

তিনি বলেন, উনি কি করে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান দেবেন? ক্ষমতায় থাকতে তো তিনি তার দলের রাষ্ট্রপতিকে বিনা কারণে অপসারণ করেছিলেন। দেশবাসী ভুলে যায়নি, বিএনপির সন্ত্রাসীদের হামলায় রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী জীবন বাঁচাতে মহাখালীর রেললাইন ধরে পালিয়েছিলেন। তার কথায় মনে হয় তিনি রাষ্ট্রপতি আর তার দুর্নীতিবাজ পুত্র তারেককে প্রধানমন্ত্রী বানাতে চান। তিনি সংসদকে কার্যকর করার কথা বলেছেন, অথচ তিনি তো বিরোধীদলীয় নেতা থাকতে মাত্র ১০ দিন সংসদে গিয়েছিলেন। তার মুখে সংসদ কার্যকরের কথা মানায় না। তিনি বরাবরের ন্যায় এবারও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন। তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে আছেন এবং পক্ষেই থাকবেন। উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিয়েই তারা রাজনীতি করবে। তাদের ভিশন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার ভিশন, সন্ত্রাসবাদ কায়েমের ভিশন, দেশ বিক্রির ভিশন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ইতিহাস নেতিবাচক রাজনীতির ইতিহাস। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির স্রষ্টা বিএনপি। তাদের আন্দোলন করার মতো শক্তিমত্তা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের পদতলে দলিত হয়ে গেছে।