আহমদ গিয়াস :

পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষের খাদ্য ভাত। তাই বিশ্বের ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে হলে ধানের উৎপাদন বাড়াতেই হবে। এ লক্ষে কাজ করে ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট বা ‘ইরি’র মতো অনেক সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট-(ব্রি)র বিজ্ঞানীরাও। কিন্তু ড. ওয়াজেদ মিয়ার স্বপ্ন ছিল ভিন্ন। তাঁর এ স্বপ্ন যদি কোনদিন বাস্তবায়ন হয়, তাহলে বিশ্বের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে এক বড় ‘ভূমিকম্প’ সৃষ্টি হবে।
আজ থেকে ২৪ বছরেরও বেশি সময় আগের কথা (সম্ভবত ৯৩ সালের প্রথম দিকে)। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকার আগাঁরগাওস্থ বিজ্ঞান জাদুঘরে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। ওইদিন সকালে জাদুঘর প্রাঙ্গণে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পর দুপুরে একটি কক্ষে বিজ্ঞান বিষয়ক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেখানেই আলোচক ছিলেন পরমাণু শক্তি কমিশনের তৎকালীন সদস্য ড. মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ মিয়া। অনুষ্ঠানে ড. এম শমসের আলীসহ আরো কয়েকজন বিজ্ঞানী আলোচনা করেন। তবে ওই সময়ের এক নগণ্য বিজ্ঞানকর্মী হিসাবে আমার মনে তাঁর একটি স্বপ্নের কথা এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়।
ড. ওয়াজেদ মিয়া আলোচনা করছিলেন আর, ভবিষ্যতে বড় বিজ্ঞানী হয়ে বাংলাদেশী হিসাবে বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেব এমন স্বপ্নে বিভোর এক তরুণ যুবা আমি নিবিষ্ট মনে শুনছিলাম তাঁর কথা। এতদিনে কোন কথাই মনে নেই, তাঁর ‘ধানবৃক্ষ’র স্বপ্নটি ছাড়া। তিনি বলছিলেন, যদি আমরা জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ধানের ডিএনএ-তে পরিবর্তন এনে বৃক্ষে রূপান্তর করতে পারি, তাহলে প্রতিবছর কয়েকবার করে ধানের চারা রোপন বা এত যতœ-আত্তি করে খাদ্য উৎপাদন করতে হবে না। অন্যান্য বৃক্ষের চারার মতোই একবার ধানের চারা রোপন করলে সেটা ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠবে এবং বৃক্ষে পরিণত হয়ে বছরের পর বছর ধরে ফলন দেবে। বৃক্ষের বয়স যত বাড়বে, উৎপাদনও তত বাড়বে। এভাবে, বাংলাদেশতো বটেই বিশ্বের ক্রমবর্ধমান মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। ড. ওয়াজেদ মিয়ার এই স্বপ্ন নিয়ে দেশে কোথাও আলোচনা হয়েছে বলে শুনিনি। তাঁর এই বক্তব্যটি কি সবাই একটি ‘পাগলামি’ হিসাবে ধরে নিয়েছে? তাঁর আলোচনাকালে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজ্ঞানী-গবেষকদের কাউকে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে তো দেখিনি? তাহলে কি এটা অসম্ভব? আপাতত তাই। একদিন আকাশে উড়ার স্বপ্নও দেখেছিল মানুষ কল্পনাতে।

০৯ মে, ২০১৭ ইং