বিএনপি রাজি, ভারতের সবুজ সংকেত !

ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরি করেছে। তারা একাধিক প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে দুটি প্রস্তাব দিতে চায়। এর একটি হচ্ছে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে তার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন। সেই হিসাবে বর্তমান সরকার থাকবে না।নির্বাচনকালীন সরকারের হাতে তারা দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন ৯০ দিনের জন্য। এর মধ্যে ওই সরকার নির্বাচন করবে।
বিএনপির প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী যদি আওয়ামী লীগ ও সরকার নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে রাজি হয় তাহলে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার সম্ভাবনা হচ্ছে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। কারণ ২০১৮ সালের শেষভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসাবে তিনিই হবেন সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে প্রধান করে তার অধিনে সুশীল সমাজের আরও দশকে নিয়ে সরকার গঠন করা হবে। ওই দশজন ঠিক করা হবে আওয়ামী লীগ জোট ও বিএনপি জোটের কাছ থেকে ৫ জন করে নাম নিয়ে। এই সরকারের নাম আওয়ামী লীগ যাই করুক বিএনপির আপত্তি নেই। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে তা হবে। বিএনপি এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করেই করতে চাইছে। সংলাপেও বসতে চাইছে সরকারের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই ব্যাপারে তারা আলোচনা করবে। এই ধরণের সরকার তারা দুই মেয়াদে রাখার জন্য প্রস্তাব দিতে পারে। সূত্র মতে, এই প্রস্তাবে নাকি ভারতেরও সবুজ সংকেত আছে।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, তারা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান অপশনটি বেছে নিচেছ কারণ ওই সরকার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মেনে নিয়েছিল। তবে আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে সরকার। এই অবস্থায় সরকার নতুন করে সংবিধান সংশোধন করতে রাজি নয়। কিন্তু বিএনপি এই সরকারের অধিনে নির্বাচনে যেতে সম্মত নয়। এই অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার চাইছে। নাম যাই হোক তা নিয়ে বিএনপির আপত্তি নেই। বিএনপি এই পদ্ধতি প্রবর্তন করানোর জন্য চেষ্টা করবে। কারণ বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে আওয়ামী লীগ নিয়োগ করেছে। সেই হিসাবে আওয়ামী লীগ তার ব্যাপারে আপত্তি করবে না বলেই বিএনপি এই ধরণের প্রস্তাব দিতে চাইছে।
সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে আরো বিচার বিশ্লেষণ করে ও পর্যালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে। তিনি ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রস্তাবটির বিভিন্ন দিক আলোচনা করে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ও জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর চুড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিবেন।প্রথম প্রস্তাবটি নিয়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে। কোন কারণে না হলে বিএনপি এই সরকারের অধিনে নির্বাচনে যাবে না সেটাই বলবে। আর এর পাশাপাশি আর একটি প্রস্তাবও তারা তৈরি রাখবে। যদি প্রথম প্রস্তাবে সম্মত না হয় আওয়ামী লীগ ও সরকার তাহলে বিকল্প প্রস্তাব হবে এই সরকারের অধিনে নির্বাচন। সেই সরকার থেকে দায়িত্ব ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার, জনপ্রশাসন মন্ত্রী। তবে এই ব্যাপারে আরও পর্যালোচনা করেই করবেন।
বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, দুটি প্রস্তাবের একটি সরকার গ্রহণ করতে পারে। এই ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে সমঝোতা করতে হবে। প্রয়োজন হলে ও সমঝোতা হলে এমও হতে পারে শেখ হাসিনা সরকারের দায়িত্ব থেকে অবসরে যেতে রাজি না হলে পদত্যাগ করবেন না। তিনি থাকবেন সরকারে। তবে কোন কাজ করতে পারবেন না। যাবেন ছুটিতে। ওই সময়ে তিনি কোন কাজ করতে পারবেন না। এবং সরকারের নির্বাচন সংক্রান্ত কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যোগাযোগও করতে পারবেন না। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরাও পদত্যাগ করবেন। তারা কোন কাজ করবেন না। ওই সময়ে ওই সব মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধিনে কাজ করবে।
বিএনপির বিশ্বস্ত সূত্র আরও জানায়, নির্বাচনকালীন সরকারের দুই প্রস্তাব ছাড়াও তাদের দাবি হবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এই জন্য খালেদা জিয়া প্রস্তাব দিবেন। সেখানে বলা হবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চায়ের দাওয়াত দিবেন রাষ্ট্রপতি। তাকে দাওয়াত দিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বলতে পারেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি তাকে অবসরে যেতে বলবেন। সমঝোতার ভিত্তিই সমাধান হবে। তিনি বিদায় নিবেন। এখন নির্বাচন কমিশনের চারজন কমিশনারের মধ্যে একজন বিএনপি, একজন আওয়ামী লীগ ও দুই জন তরিকত ফেডারেশনের। বিএনপি মনে করছে, দুইজন তরিকত ফেডারেশন রাখা যাবে না। কারণ তারা তরকিত ফেডারেশনের হলেও আওয়ামী লীগেরই লোক। সেই হিসাবে তাদের দুইজনকে পদত্যাগ করাতে হবে। সেখানে একজন বিএনপি ও একজন অন্য সব দলের প্রস্তাব দেওয়া নাম থেকে দিতে হবে। আর যদি তা করা না হয় তাহলে বিএনপি থেকে একজনকে নিতে হবে।
নির্বাচন কমিশন এর পুনর্গঠন করার জন্য সেখানে এমন একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করানো হবে যাতে তিনি বিতর্কিত না হন। সবাই অন্তত মেনে নেন। যোগ্য হন। বিএনপির দাবি, এখনকার সিইসি অযোগ্য। বিতর্কিত। তার সচিব হিসাবেও কাজের কোন অভিজ্ঞতা নেই। তিনি যুগ্ম সচিব মর্যাদার একজন কর্মকর্তা ছিলেন। যুগ্ম সচিবের পর সব কাগজে কলমে পদোন্নতি পেয়েছেন। তাই তাকে নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে অবশ্যই যোগ্য সিইসি লাগবে।
বিএনপির একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া তার গুরুত্বর্পূর্ণ ও কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তৈরি করাচ্ছেন। সেখানে ওইসব নেতারা দুটি প্রস্তাব তৈরি করছেন। একটি না মানলে আর একটি দেওয়া হবে।
বিএনপির প্রথম ও প্রধান চেষ্টা থাকবে নিদর্লীয় ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার করানোর। এই জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা হবে একজন সরকার প্রধান। আর দশজন মন্ত্রী/উপদেষ্টা, পরামর্শক এর হাতে থাকবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ওইসব ব্যক্তিরা কোন দলের হবেন না। তবে ওই সরকারের দশ জনের পাঁচজন নেওয়া হবে বিএনপির প্রস্তাবিত নাম থেকে। আর পাঁচজন সরকারি জোট থেকে। যোগ্য, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিতে হবে। সরকার প্রধান কে হবেন এটা আলোচনা করেই ঠিক করা হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপি রূপরেখায় কারো নাম বলবে না। তবে তাদের দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হতে পারেন। তিনি সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি হিসাবে ওই সরকারের প্রধান হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তাছাড়া তাকে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে প্রধান বিচারপতি পদে বসালেও বিএনপি তার নাম প্রস্তাব করবে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান হিসাবে। তার অধিনে দশজন দিয়ে সরকার গঠন করার কথা বলবে। এ নিয়ে আলোচনা হবে।
বিএনপি আপাতত এই দুটি রুপরেখা নিয়েই কাজ করছে। কারণ বিএনপি জানে যে, এবার তারা সংসদে নেই। তাই সংসদে তাদের প্রতিনিধি না থাকার কারণে এর আগে শেখ হাসিনা বিএনপির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ যে সব মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিতে চেয়েছিল সেই সব মন্ত্রণালয় নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সরকার চাইলে সেখানেও সমঝোতা হতে পারে। এই ব্যাপারে আলোচনা করেই সব করা হবে।
বিএনপির সূত্র জানায়, তারা প্রথম অপশণটি চান। কোন কারণে অওয়ামী লীগ সমঝোতা করতে রাজি না হলে এরপর তারা দ্বিতীয়টি নিয়ে চিন্তা করবেন। এই রূপরেখার কাঠামো তৈরি করার পর এ নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতাদের একাধিকবার বৈঠক হবে। বৈঠক করেই তা চুড়ান্ত করা হবে। এরপর তা আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেই ঘোষণা করবেন। সেখানে তিনি রাষ্ট্রপতিকেও অনুরোধ করবেন যাতে করে তিনি এই ব্যাপারে সংলাপের উদ্যোগ নিবেন।
রূপরেখার ঘোষণা দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির তরফ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছেও পাঠানো হবে। সময় চাওয়া হবে তার সঙ্গে আলোচনার জন্য।