হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:

টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচারের ধরণ দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। ইয়াবা চোরাচালানীরা নিত্য নতুন কলাকৌশল অবলম্বন করে পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সেকালের পাচার ও বর্তমান পাচার কাজের মধ্যে অনেক তফাৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশ যতই ডিজিটালের যুগে এগিয়ে যাচ্ছে সীমান্ত এলাকার ইয়াবা পাচারকারীরাও ডিজিটালের মাধ্যমে পাচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় টেকনাফে ইয়াবার গোড়াপত্তন শুরু হয় ২০০০ সালে। সে সময় লোকজন শরীরের বিভিন্ন অংশে ফিট করে পাচার কাজ চালিয়েছে। সে সময় এ ইয়াবার চাহিদা ও মূল্য কম থাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এর প্রতি নজর কম রাখত। দিন দিন ইয়াবার চাহিদা ও মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এর প্রতি আবাল বৃদ্ধবনিতা সকলেরই নজর পড়েছে। ফলে এর চাহিদা যেমনি বাড়ছে তেমনি বাড়ছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কড়া নজর। ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে সীমান্ত এলাকার অনেক যুবক, যুবতী বৃদ্ধা, বিভিন্ন পেশার মানুষ এমনকি শিশু পর্যন্ত আটক হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কড়া নজর আরোপ করায় ইয়াবা পাচারকারীরা তাদের ধরণ, স্থান, পাচারকারী ও পাচারের সমস্ত কিছু বদলিয়ে নতুন পদ্ধতিতে চলছে যাচ্ছে ইয়াবা পাচার। অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়েও পাচার করা হয় বলে জানা যায়। অতীতে সড়ক পথে ইয়াবা পাচার হত। বর্তমানে এ রুটকে পরিবের্তন করে গভীর বঙ্গোপসাগর দিয়ে পণ্যবাহী বড় বড় ট্রলার ও শীপ যোগে পাচার করা হচ্ছে। সড়ক পথে বিভিন্ন পণ্যের ভেতর লুকিয়ে ও যাত্রীবাহী গাড়ির মাধ্যমে বিভিন্ন অংশে চুম্বক ফিট করে নিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা। মহিলাদের স্পর্শকাতর অঙ্গে এবং পুরুষের পায়ুপথে ভরে পাচার হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কলাকৌশলে এ ট্যাবলেটগুলো নিয়ে যাচ্ছে। পায়ুপথে ভরে ইয়াবা পাচার করতে গিয়ে নিহত হওয়ার একাধিক ঘটনাও ঘটেছে। সুতরাং এক কথায় বলতে গেলে পাল্টে গেছে ইয়াবার সম্পূর্ণ পাচারকাজ।

অতীতে এ ইয়াবা পেশায় নি¤œবিত্ত পরিবারের লোকজন জড়িয়ে পড়েছিল। সেসময় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকজন এ ইয়াবা ব্যবসাকে ঘৃণার চোখে দেখা হত। বর্তমানে এ পেশায় সুইপার হতে আরম্ভ করে আলালের ঘরের দুলালেরা পর্যন্ত নিয়েজিত হয়ে পড়েছেন। অতীতে এ ঘৃনীত ইয়াবা পাচার হত নিকৃষ্ট স্থান দিয়ে, কদর ছিল কম। বর্তমানে এ নিকৃষ্ট পণ্য রাজার হালতে ভিআইপি উড়োজাহাজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। নিয়ে যাচ্ছে আলালের ঘরের দুলাল ও ভিআইপি লোকজন। কদর বেড়েছে আকাশ ছোয়াঁ । এর যেমনি কদর বেড়েছে তেমনি বেড়েছে মূল্য। ইয়াবার অল্প দিনের ব্যবসায় হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার মালিক। আলীশান বাড়ি-গাড়ির মালিক। বিশাল ভু-সম্পত্তির মালিক। যে লোকজন এ ব্যবসার আগে নুন আনতে পান্তা ফুরাত, সে সমস্ত লোকজনের বাড়িঘর অট্রালিকা বিল্ডিং। বাড়ি, গাড়ি, নারীতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। নিচতলার লোকজন আকাশে স্থান নিচ্ছে। ইয়াবার বদৌলতে দ্রুত কোটিপতিদের দৌরাতেœর ফলে এলাকার নামীদামী সম্ভ্্রান্ত পরিবারের নাম নিশানা মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমান সরকার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারকে পর্যটকদের জন্য সৌন্দর্যের লীলাভ’মি করার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এ ঘৃণ্যতম ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে না পারলে সকল পরিকল্পনা ও প্রকল্প ভেস্তে যাবে বলে সচেতনমহলের ধারণা।