ডেস্ক নিউজ:

শেষ পর্যন্ত জনগণের করের টাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে মূলধন ঘাটতি পূরণ করতে বাজেট থেকে এই ব্যাংকটিকে শিগগিরই আরও ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

অবশ্য চলতি অর্থবছরের বাজেটেও সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।

জানা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংক থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে যায়। সরকার এরপর দুই বছরে ব্যাংকটিকে ২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দিয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

জনগণের করের টাকায় বেসিক ব্যাংক বাঁচানোর উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করাই আসল সমাধান নয়। এই ব্যাংকগুলোয় সুশাসন জরুরি।’ তিনি বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকে যে সমস্য হয়েছে, তা দুর্নীতির কারণে সৃষ্ট। যারা দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে জনগণের টাকা থেকে মূলধনের জোগান দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।’

এর আগে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে আর্থিকভাবে দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সুদমুক্ত বন্ড চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ব্যাংকটি। ১০ থেকে ২০ বছর মেয়াদি মোট ২৬টি বন্ডের মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়ার আবেদন করা হয়। তবে সরকার বন্ড ছাড়ার অনুমতি না দিয়ে ব্যাংকটিকে বাজেট থেকেই টাকা দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয়।

অবশ্য অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মূলধন ঘাটতি পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আপাতত বাজেট থেকেই টাকা দেওয়া হবে। বেসিক ব্যাংক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই ব্যাংকের সমস্যাগুলো অন্যদের চেয়ে আলাদা। ব্যাংকটিকে পরিচর্যা করতে হবে। বেসিক ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এ জন্য কিছু করা হবে।’

জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের এখন মূলধন ঘাটতি রয়েছে ২ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। মূলধন কমে যাওয়ায় এই ব্যাংকটি পণ্য আমদানিতে সরাসরি এলসি খুলতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এ মজিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকে দুরবস্থার মধ্যে রেখে গেছে শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু পর্ষদ। সেখান থেকে এই ব্যাংকটি লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। এখন ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘মূলধন ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হলে বেসিক ব্যাংক আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।’

এদিকে ২০১৬ সাল শেষে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) ঘাটতি হয়েছে ৪ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে লাভে থাকা এই ব্যাংকটি ২০১৩ সালে এসে প্রথমবারের মতো লোকসানে পড়ে। ওই বছর নিট লোকসান হয় ৫৩ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে লোকসানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১১০ কোটি টাকা। আর ২০১৫ সালে তা ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। অবশ্য ২০১৬ সালে সামান্য লাভ করে ব্যাংকটি।

বেসিক ব্যাংকের বাইরে আরও ৫টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে আরও ৭৭১ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক পাবে ৩০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ১৪৯ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) ১০০ কোটি ও গ্রামীণ ব্যাংককে দেওয়া হবে ২২ কোটি টাকা ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোনালী, বেসিক, কৃষিসহ পাঁচ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সরকার সোনালী, বেসিক, জনতাসহ সাত ব্যাংককে নগদ ৭ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। এই টাকা দেওয়া হয়েছে কখনও মূলধন ঘাটতি পূরণ, কখনো মূলধন পুনর্গঠনের নামে।

জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা আর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি এখন ৭৪৩ কোটি টাকা।