এস. এম. তারেক :

সুদীর্ঘকাল ধরে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক জেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ঈদগাঁও। সুপ্রাচীন কাল থেকে অদ্যাবধি এ জনপদ সম্পদ ও প্রাচুর্য্যের পরিচয় বহন করে চলেছে। ভৌগোলিক অবস্থান, আর্তসামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, শিক্ষা সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক অগ্রসরতা বিবেচনায় ঈদগাঁও উপ-শহরটি পর্যটন শহর কক্সবাজার জেলার অন্যতম জনগুরুত্বপূর্ণ জনপদ। ঈদগাঁও নদীর অববাহিকা জুড়ে গড়ে উঠেছে বৃহত্তর এ জনপদের সভ্যতা । সভ্যতার ক্রম বিকাশ ও প্রয়োজনের তাগিদে নদী নির্ভর বাণিজ্য প্রসারে ঈদগাঁও নদীর তীর ঘেঁষে বিস্তৃত হতে থাকে ঈদগাঁও বাজার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আবাসন ও বাণিজ্য প্রসারতাও। নাগরিক চাহিদার যোগান ও তাগিদ মেঠাতে হু হু করে বাড়ছে অবকাঠামো। যথাযথ কতৃপক্ষ না থাকার কারণে বলতে গেলে, যার পুরোটাই অপরিকল্পিত। ফলশ্রুতিতে সময়ের ব্যবস্থানুপাতিক হারে বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ, সৃষ্টি হচ্ছে নিত্য নতুন সমস্যা, সংকট ও জটিলতার চক্র। তাই এখনই উপযুক্ত সময় বৃহত্তর ঈদগাঁওকে উপজেলায় উন্নীতকরণের। ঈদগাঁওকে উপজেলায় উন্নীতকরণের দাবীতে প্রতিটি সরকারের নিকট বারংবার দাবী জানিয়ে আসছে ঈদগাঁও’র আমজনতা। জণগণের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে রামু কক্সবাজার থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমলও। ঈদগাঁওকে উপজেলায় উন্নীতকরণের জন্য মহান জাতীয় সংসদে জোরালো প্রস্তাব রেখেছিলেন তিনি। অনুরুপভাবে ঈদগাঁওকে উপজেলায় উন্নীতকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকে চাতক পাখির মত তাকিয়ে আছেন বৃহত্তর ঈদগাঁওবাসী। সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমলের উত্থাপিত সেদিনের প্রস্তাবের স্বীকৃতি অদ্যবধি না মিললেও কালের পরিক্রমায় বৃহত্তর ঈদগাঁও বর্তমানে বিশাল এক উপশহরে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। মর্যাদা সম্পন্ন এবং বাসযোগ্য ঠিকানা গড়া ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকারের প্রতি শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন সংগঠণের ব্যানারে ঈদগাঁও’র সর্বস্তরের মানুষ বারবার দাবী জানিয়ে আসছে ঈদগাঁওকে উন্নীতকরণের। সাবেক জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ও জালালাবাদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, নাগরিক মর্যাদা ও সেবা পাওয়া দেশের প্রতিজন নাগরিকের সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার। এ অধিকার আদায় ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বসতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা সদরের বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁওকে উপজেলায় উন্নীতকরণের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত ও আধুনিক ঈদগাঁও গড়ে তুলতে সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন তিনি। এদিকে ঈদগাঁও বাজার ও আশপাশের এলাকায় বিরাজমান নানাবিদ সমস্যা, সংকট নিরসনকল্পে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য ঈদগাঁওকে অবিলম্বে উপজেলায় রূপান্তরের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, পরিসেবা বৃদ্ধি ও ঈদগাঁওকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই বাসস্থান, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন, জেলার এীতহ্যবাহী ও প্রাচীণতম বিদ্যাপীঠ ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জান্নাতসহ এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। আবার নাগরিক সেবা বাড়ানো ও বিরাজমান সমস্যা নিরসনে প্রয়োজন যথাযথ কর্তৃপক্ষের। জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দূরে ঈদগাঁও বাজারের অবস্থান। ভৌগোলিক অবস্থান, বাণিজ্যিক ও নাগরিক গুরুত্ব বিবেচনায়ও ঈদগাঁওকে উপজেলায় উন্নীত করা এখন সময়ের দাবী বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন, সাংবাদিক কাফি আনোয়ার। দীর্ঘদিন ধরে ঈদগাঁওবাসী আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে উপজেলা পাওয়ার আশায়। বাজারে আগত সওদাপতিরা জানান, বিবিধ উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিশেষ করে বিশাল ঈদগাঁও বাজারের যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থা ও বাজারটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার স্বার্থে ঈদগাঁওকে উপজেলায় উন্নীতকরণের বিষয়টি এখন গণদাবীতে পরিণত হয়েছে। নিকট অতীতে দেশের অনেক অযোগ্য ইউনিয়ন যোগ্যতার সন্ধান পেয়ে উপজেলায় উন্নীত হলেও প্রায় ৫ লাখ অধিবাসীর গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ঈদগাঁও এদিক দিয়ে এখনো চরম অবহেলার শিকার বলে দাবী শিক্ষার্থী তাজনোভার। এতকিছুর মাঝেও চির অবজ্ঞায় পতিত আছে, ঈদগাঁও নামক অবহেলিত জনপদটি। বলতে গেলে বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজার। এই বাজারটি একটি বহুমুখী বাণিজ্য কেন্দ্র। ঈদগাঁও বাজারে পশ্চিমের মহেশখালীর লোকজন চৌফলদন্ডী হয়ে প্রতিদিন না হলেও অন্ততঃ প্রতি শনি-মঙ্গলবার নানান প্রকার পন্য সামগ্রী ক্রয়/বিক্রয়ের লক্ষ্যে ছুটে আসেন। গর্জনিয়া,বাইশারী, ঈদগড়, খুটাখালী, রশিদ নগর, জোয়ারিয়ানালা, ডুলাহাজারা, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ির লোকজনও বিভিন্ন পণ্য ক্রয়/বিক্রয়ের জন্য এই বাজারে অন্তত: সপ্তাহে ২ বার যাওয়া আসা করেন। বৃহত্তর ঈদগাঁও এলাকার আশপাশের লোকজন তো প্রতিদিন লেগেই আছে। সব মিলিয়ে হিসাব করলে দেখা যায় যে, সপ্তাহে দুইদিন ঈদগাঁও বাজারে কমপক্ষে ৩/৪ লাখেরও বেশি লোক ব্যবসার লক্ষ্যে যাতায়াত করে থাকেন। যে কারণে গোটা দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই ঈদগাঁও বাজারটি পরিণত হয়েছে একটি জনবহুল ও ব্যস্ততম বাজারে। অপরদিকে এই বাজার থেকে ফি-বছর লক্ষ-লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকেন সরকার। কিন্তু বাজারের চিত্র দেখে বুঝা যায়, বাজারটি বর্তমান উন্নত ব্যবস্থার চিন্তা -ভাবনা থেকে কতটুকু পিছিয়ে আছে। সত্যিকার অর্থে বিশাল এলাকাবাসীর সেই লালিত স্বপ্ন কবে পূর্ণ হবে এমন প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছে বৃহত্তর ঈদগাঁও’র বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে।

৫ মে’১৭