– হাসিনা আক্তার রিটা :

আজ মেহনতি মানুষ, শ্রমিকের রক্তঝরা সংগ্রামের ইতিহাস সৃষ্টির দিন মহান মে দিবস। বিশ্বের মেহনতি মানুষের সাথে আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশের ঐতিহাসিক গৌরবের দিন।

সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রমিক শ্রেণীর প্রাধান্যের কারনে অধিকাংশ সমাজতান্ত্রিক দেশে বেশ গুরুত্ব ও সংকল্প সহকারে মে দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশে মে দিবসে সরকারি ছুটি পালিত হয়। আমাদের দেশে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে মে দিবস পালিত হয়।

প্রায় দেড় শতাব্দি আগে কারখানার শ্রমিকদের দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘন্টা কাজ করতে হতো। কিন্তু কাজ অনুপাতে পারিশ্রমিক ছিলো খুব কম। ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে একদল শ্রমিক মালিকপক্ষকে দৈনিক আট ঘন্টা কর্মসময় নির্ধারণের দাবি জানায়। এ দাবি পূরণের সময় হিসেবে ১৮৮৬ সালের ১ মে-কে নির্ধারণ করেন শ্রমিকরা। কিন্তু কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের এ দাবি কানে তোলেননি। ফলাফলে ১৮৮৬ সালের ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেট নামক স্থানে ফের আন্দোলন গড়ে তোলেন শ্রমিকরা। এসময় হে মার্কেট স্কয়ারে শ্রমিক পক্ষে বক্তব্য রাখেন আমেরিকান লেবার অ্যাক্টিভিস্ট অগাস্ট স্পিস। উদ্বেলিত শ্রমিকদলের কিছু দূরেই ছিলো পুলিশ। এসময় কে বা কারা পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ করলে সেখানে নিহত হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে, পুলিশের গুলিতে নিহত হন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। পুলিশের ওপর কে বা কারা বোমা হামলা করেছিলো তা সঠিক জানা না গেলেও, পুলিশ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ও আটক করা হয় অগাস্টস্পিসসহ আরও আটজনকে। পরের বছর ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর অগাস্টস্পিসসহ অভিযুক্ত ছ’জনকে ফাঁসি দেয়া হয়। অভিযুক্ত বাকি দু’জনের একজন কারাবন্দি অবস্থায় আত্মহত্যা করেন ও অন্য একজনের ১৫ বছরের কারাদন্ড হয়। এ ঘটনার দু’বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের একশো বছর প‍ূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে, শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে উদযাপনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। পরের বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষে যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিলো ঠিক তখনই উন্মোচিত হয় শ্রমিক আন্দোলন ঘটনার এক মর্মান্তিক সত্য। প্রমাণিত হয় পুলিশের ওপর বোমা হামলার দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত অগাস্ট স্পিস ও বাকি সাতজন মূলত দায়ী ছিলেন না, তারা ছিলেন নির্দোষ। তবে আসল অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়নি। য‍াই হোক, ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থ‍ানে শ্রমিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়তে থাকে। ১৯০৪ সালে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী মে মাসের প্রথম দিন মিছিল ও শোভাযাত্রার আয়োজন করতে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল ও শ্রমিক সংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ আহ্বানের সাড়া হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব শ্রমিক সংগঠন ১ মে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিভিন্ন দেশে মে দিবস সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে উদযাপিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে রাশিয়া, চীন ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই দিনটির তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার দাবি। বাংলাদেশ সহ প্রায় আশিটি দেশ যথাযোগ্য মর্যাদায় আজকের এই দিনটিকে অর্ন্তজাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

লেখকঃ রাজনীতিক, শিল্পী ও সমাজসেবক যুগ্ন

সাধারণ সম্পাদক জেলা যুব মহিলা আওয়ামীলীগ কক্সবাজার