ডেস্ক নিউজ:

পাকিস্তানের প্রয়াত বুদ্ধিজীবী ওয়ারিশ মীরকে ২০১৩ সালে সম্মাননা প্রদান করে বাংলাদেশ। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ওই বছর ৬৯ জন বিদেশি বন্ধুকে সম্মাননা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্যে ওয়ারিশ মীর ছিলেন ১৩ নম্বরে। এই সম্মাননা গ্রহণ করতে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসেন ওয়ারিশ মীরের ছেলে সাংবাদিক হামিদ মীর। চার বছর পর তিনি এই সম্মাননা ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেন পাকিস্তানের একটি গণমাধ্যমের টকশো অনুষ্ঠানে। তার এ ঘোষণা নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বর্তমান সরকারের ও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা প্রসঙ্গে বলছেন, বাবাকে অসম্মান করেছেন ছেলে হামিদ মীর। বাবার অনুভূতির সঙ্গে ছেলে হামিদ মীরের সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা বেমানান। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর চাপে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
নীতি-নির্ধারকরা আরও বলেন, এই পুরস্কার আমরা হামিদ মীরকে দেইনি, দিয়েছি তার বাবা ওয়ারিশ মীরকে। তাই তার ঘোষণায় কিছু যায় আসে না। হামিদ মীরের এই ঘোষণা পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির ভাবধারার নামান্তর বলেও মনে করছেন ক্ষমতাসীনরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একাত্তরের ২৬ মার্চে পাকিস্তানিরা যেভাবে বর্বর হামলা চালিয়েছিল,ওয়ারিশ মীর তা মেনে নিতে পারেননি বলে তার লেখনীতে তুলে ধরেছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানো এবং লেখালেখি করার জন্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ওয়ারিশ মীরকে সম্মাননা দেয়। আর সেই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয় তার ছেলে হামিদ মীরের হাতে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সম্মাননা দিয়েছি ওয়ারিশ মীরকে, হামিদ মীরকে নয়।’
সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা সম্পর্কে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ওয়ারিশ মীর যে দৃষ্টিভঙ্গিতে সেদিনের ঘটনা দেখেছেন এবং লিখেছেন সেই দৃষ্টিভঙ্গি বা অনুভূতি হামিদ মীর ধারণ করেন না। তিনি পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির ভাবধারা অনুসরণ করে একই ধরনের আচরণ করছেন। সোজা কথা হলো, বাবার ফিলিংস ছেলের মধ্যে নেই।’

মতিয়া জানান, সম্পর্কের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকবে। সার্কের বিকল্প বিমসটেক হতে পারে না।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘একাত্তরের ভূমিকার জন্যে ওয়ারিশ মীরকে বাংলাদেশ সম্মান দেখিয়েছে। হামিদ মীরকে একজন প্রতিবাদী সাংবাদিক হিসেবে জানতাম। তিনি কেন এই ঘোষণা দিলেন তা বোধগম্য নয়। তার এই ঘোষণা বাবার (ওয়ারিশ মীর ) অনুভূতিকে অসম্মান জানানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই সম্মাননা দিয়েছি ওয়ারিশ মীরকে, হমিদ মীরকে নয়।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সম্মাননা আমরা হামিদ মীরকে দেইনি। একাত্তরের ২৬ মার্চের কালরাত্রিকে তিনি যেভাবে অনুধাবন করেছেন এবং তার লেখনীতে তুলে ধরেছেন, সেই কৃতজ্ঞতা থেকে ওয়ারিশ মীরকে আমরা সম্মাননা দিয়েছি। সেই সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার হামিদ মীর কে?’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের আইএসআই’র চাপে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে এই ঘোষণা দিয়েছেন হামিদ মীর।’ ড. রাজ্জাক বলেন, আমরা তো কোনও দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কও থাকবে,ঝগড়াও থাকবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা ওয়ারিশ মীরকে সম্মাননা দিয়েছি। হামিদ মীরকে নয়।ওয়ারিশের ছেলে হিসেবে এ সম্মাননা গ্রহণ করেছেন হামিদ মীর। তার এ ঘোষণায় কিছু যায় আসে না।’ তিনি বলেন, ‘হয়তো কোনও চাপে এই ঘোষণা দিয়েছেন হামিদ। যা-ই হোক সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে হামিদ মীর তার বাবাকে অসম্মান করেছেন। তার বাবা ওয়ারিশ মীর ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রকারান্তরে মানবতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু হামিদ মীর এ সম্মাননা ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে মানবতাকে অসম্মানিত করেছেন।পাকিস্তান যে বর্বর জাতি এ সম্মাননা ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সেটা আবারও প্রমাণ করলেন হামিদ মীর।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একাত্তরে গণহত্যার ঘটনাকে ওয়ারিশ মীর যেভাবে দেখেছেন তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তার লেখনীতে। কৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে আমরা তাকে সম্মাননা দিয়েছি। আর পরিবারের সদস্য হিসেবে হামিদ মীর শুধু সম্মননাটুকু গ্রহণ করেছেন। আমরা তো হামিদ মীরকে এই সম্মননা দিইনি। ফলে সম্মাননা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণায় আমাদের কি যায় আসে। ওয়ারিশ মীরের অনুভূতির সঙ্গে হামিদ মীরের সিদ্ধান্ত একেবারেই বেমানান।’