ইশতিয়াক আহমেদ জয়

সংগ্রামী জীবন আমার সেই শৈশব কাল থেকেই। খুব অল্প বয়সে (২০০৩ সালে) প্রথমে মা এবং (২০১০ সালে) প্রিয় বাবাকে হারানোর পর হঠাৎ করেই বদলে গেলো আমার সমস্থ পৃথিবী।

আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা বোধ সম্পন্ন হলেও অনেক বেশী তিতকুটে,মেঝাজী আর সাথে ঝাঁঝালো বাচনভঙ্গি। আর রক্তটাও আমার একটু নোনতা….

নিজের আত্নজীবনী লিখার মতোন বয়স কিংবা পান্ডিত্য কোনটাই হয়ে উঠেনি আমার। আর নিজের বায়োগ্রাফি লিখার মতোন অসাধারণ কেউ তো আমি একদম ই নই।

যাইহোক,
আমি বলছিলাম আমাদের প্রত্যকের জীবনে একটা নির্দিষ্ট স্বপ্ন বা লক্ষ্য অবশ্যই থাকা উচিত। না হয় আমরা হারার আগেই যে হেরে বসবো।

আমাদের প্রত্যেককেই প্রত্যেকের সাথে কানেক্টিভিটি পাবলিক রিলেশন এন্ড বন্ডিংস এবং সোশ্যাল কমিউনিকেশন আরো সূদৃঢ করতে এখন থেকেই মনোযোগী হতে হবে প্রশ্নাতীত ভাবে।

আমাদের স্বপ্নের পরিধি আরো বাড়াতে হবে। সোজা কথায় স্বপ্নের ব্যাপকতা সীমানা ছাড়িয়ে মিলাবে দূর দিগন্তে ..

নিজের দেশকে সার্ভাইভ করতে হলে এবং আমাদের নিজেদের গ্লোবালি আরও বড় পরিসরে তুলে ধরতে হলে বড় বড় স্বপ্ন আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে ধারন করা ছাড়া অন্যকোন বিকল্প নেই।

এইবার আমার ছেলেবেলার কিছু এলোমেলো স্বপ্নের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করি …

পিচ্চি কালে আমি প্রায় আজব আজব কিছু
স্বপ্ন দেখতাম বা মনে মনে ধারন কিংবা কল্পনা করতাম।

যেমন বাসায় কেউ বেড়াতে আসলে বা ফ্যামিলির সাথে কোথাও গেলে কেউ যখন আমায় জিজ্ঞেস করতো বড় হয়ে আমি কি হবো ?

তখন আমার ছটফট উত্তর ছিল..
বড় হয়ে আমি প্যারাগন চালাবো। মানে আমি বড় হয়ে প্যারাগনের ড্রাইবার হতে চাই!!
প্যারাগন মানে ভাইবেন না আবার আকাশে উড়ার উড়ান যান !!!

প্যারাগন হইলো,
ঐ সময়ের অর্থ্যাৎ নব্বই দশকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রোডে চলাচলকারী সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পরিবহনের নাম। বর্তমান সময়ের সৌদিয়া এসআলম টাইপের।

ক্লাস থ্রীর ফাইনাল এক্সামের পর শীতকালীন ছুটিতে আম্মার সাথে নানার বাড়ি সিলেট যাচ্ছিলাম চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে চড়ে। সিগমা আর ওজমা খুব সম্ভব ঐ সময়টাতে পৃথিবীতেই আসেনি। ঐ সময় রেল ভ্রমনে আমার সাথে ছোট্ট ইভু পাগলাই থাকতো সফর সঙ্গী হিসাবে। ট্রেনে আমাদের বিপরীত আসনে বসা এক নব দম্পতি ছিল সে বারে ।

যতটুকু মনে পড়ে উনারা খুব সম্ভবত মাজার জিয়ারত করতে সিলেট যাচ্ছিলেন। ট্রেন ছাড়ার ঘন্টা দুই পর তাদের সাথে আমার ভাব জমে উঠলো।

কথা বলতে বলতে একটা সময় ভদ্রলোক আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন ক্লাসে আমার রোল নম্বর কত। স্টুডেন্ট কত জন আমার ক্লাসে?এরকম আরো অনেক কিছু।

বড় হয়ে আমি কি হতে চাই —?
এই প্রশ্ন টা আমাকে করতেই আমার রেপিড উত্তর ছিল-

বড় হয়ে আমি “মতিন ভাই” হতে চাই!!

আমার উত্তর শুনে আমার আম্মার চোখ ইয়া বড় বড় !!
“মতিন ভাই”
হতে চাই শুনে উনারা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন মতিন ভাই হতে চাও?
ওয়াও !! তো মতিন ভাই টা কে ??
কি করেন তোমার মতিন ভাই??

আমি বললাম মতিন ভাই অনেক কিছু করে। সারাটা দিন মহা ব্যস্থ থাকে মতিন ভাই। স্কুলের গেইট পাহাড়া দেয়া থেকে শুরু করে টিফিনের সময় আমাদের প্রত্যেকের ক্লাসে টিফিন দেয়া, তারপর উনার ঝুপড়ি ঘরে লুকিয়ে আমাদের আচার বিক্রি করা ছাড়াও আরো কত কিছুই না করতে হয় মতিন ভাইকে।

আর সবচেয়ে উপভোগ করতাম মতিন ভাই যখন স্কুল পিতলের কাসায় কাঠের বেলাই দিয়ে ইশকুল ছুটির ঘন্টা বাজাতো !!

এই ছুটির ঘন্টা বাজানোর মূহুর্তটাই ছিল আমার প্রতি দিনের সবচেয়ে প্রিয় মূহুর্ত।

মূলত এইসব নানান কারনেই উনি ছিলেন আমার শৈশবের আইডল।

হুম। এই মতিন ভাই ই ছিলেন আমার শৈশবের প্রিয় ইশকুল কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাই স্কুলের দপ্তরি।

আমার চোখে প্রিয় মতিন ভাই ই ছিলেন ইশকুল বেলার আসল তারকা।

এই রকম আজব আজব স্বপ্ন আমার মাথায় প্রায় ভয়ংকর ভাবে ভর করে বসতো।

আবার আম্মার কঠোর শাষন আর বিপত্তির কারনে অনেক স্বপ্ন অযত্নে অবহেলায় আস্তে আস্তে স্মৃতিভ্রম হয়ে হারিয়ে যেত।

আমার অদ্ভুত ধরনের স্বপ্নের কথা শুনে অনেকেই আমাকে এ্যাবনরমাল মনে করতো বা মনে মনে হয়তো পাগল ও বলতো।

এতটা কাল পর আমার শৈশবের স্মৃতি আওড়ানোর কারন স্বপ্ন এখনো নিয়ম করেই দেখি। তবে স্বপ্নের ধরণ,বিষয় ,প্রেক্ষাপট সব কিছুই ভিন্ন।

অনেক যন্ত্রণা, না পাওয়া, ত্যাগ,অভিমান, বিষাদ আর শ্বাসরূদ্ধকর আবেগে পরিপূর্নতা মাখানো স্বপ্নগুলোকে অনেক যতনে আগলে রেখেছি মনের গহীন অগোচরে বহুদিন ধরে।

পরম সৃষ্টিকর্তার কাছে শক্তি চাই ,অনেক অনেক ধৈর্য চাই আমি যেনো আমার লালিত সব স্বপ্ন গুলো কে পরিপূর্নতা দিতে পারি।

অনন্ত এই মহাকালে সীমানার ক্রান্তিকাল পেরিয়ে যুগেযুগে সুন্দর,সত্য, পবিত্র স্বপ্নগুলোই জয়ী হয়েছে বার বার।

স্বপ্নের পিচঢালা পথে হাঁটতে গিয়ে কত বার যে হোঁচট খেয়েছি তার হিসেব আমার কাছে নেই।

স্বপ্নের পথে হাঁটতে গিয়ে যেখানেই অনিয়ম আর অন্যায় দেখেছি বুক চিতিয়ে লড়েছি। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে সরব থেকে চেষ্টা করেছি অনেক ভয়ংকর পশুর মুখোশ উন্মোচনের ।

পরিনামে চুপচাপ শুনেছি ওই মাফিয়াদের কাপুরুষিত হুংকার। এত কিছুতেইও একটুও বুক কাঁপেনি আমার। আমার নীতি নৈতিকতা ও অবস্হান থেকে এক চুল পরিমানও সরে আসিনি আমি।

কখনো কখনো নিজের আপনজনেরাই যখন বেঈমানী করে ফেলে তখন ঘাড়ের রগটা একটু বাঁকা করে আবারো চ্যালেন্জ্ঞ ছুঁড়ে দিয়ে নিজের দায়িত্বটুকু পালনের চেষ্টা করি..

যারা বুঝে না বুঝে,
কারনে অকারনে আমার ক্ষতি করার চেষ্টায় ব্রত থাকেন সবসময় আপনাদের বলছি…

“কুয়াতে তোমরা বড়ো হও,
আর জড়ো হও, হাতে চাতুর্য সম্ভার
অসীমের পথে দূর্দান্ত বেগে চলবো,
আর বলবো এইতো আমার অহংকার”

▪️জয় বাংলা•৲
▪️জয় বঙ্গবন্ধু••৲
▪️জয় দেশরত্ন•••৲

ইশতিয়াক আহমেদ জয়, সভাপতি,কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ।

লেখাটি তার ফেসবুক থেকে সংগৃহিত