দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পোড়ানো ছাইয়ের সমস্যায় ভুগছে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিসহ আশপাশের বাসিন্দারা।

১০ বছরেও ছাই অপসারণ না করায় এখন আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্টসহ নানা প্রকার জটিলতা।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিট চালু আছে। এতে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২ হাজার মে.টন থেকে ২ হাজার ২শ মে.টন কয়লা পোড়ানো হয়। ব্যবহৃত কয়লার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ ছাই হয়ে (বর্জ্য) হিসেবে জমা হয়। এই ছাই দুটি পুকুরে জমানো হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছরে ব্যবহৃত ছাই অন্যত্র অপসারণ না করায় এখন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য ছাই বাতাসের সঙ্গে উড়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর, দুধিপুর, টুনির আড়াসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের ঘর-বাড়ি আসবাবপত্রে পড়ছে। এতে তাদের শ্বাসকষ্টসহ নানা প্রকার স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপন্ন শুরু হয়। এরপর তাপবিদ্যূৎ কেন্দ্রের ছাই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলো কিনে নিয়ে যেত। এতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ছাই বিক্রি করে আয় করতো। কিন্তু ২০১০ সালে ছাই বিক্রির টেন্ডার নিয়ে একটি জটিলতা দেখা দেয়ায় টেন্ডারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। এতে করে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ছাই বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইগুলো একই স্থানে ডাম্পিং করা হচ্ছে। ফলে ব্যবহৃত মূল্যবান ছাই এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।

তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কয়লা পোড়ানো ছাই পার্শ্ববতী দুটি পুকুরে রাখা হচ্ছে। ছাই রাখার পুকুর দুটি ইতোমধ্যেই ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পুকুরে রাখা ছাই এখন বাতাসের সঙ্গে উড়ে যাচ্ছে। ফলে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী ধাপের হাট, দুধিপুর, রামভদ্রপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগে ভূগছে।

রামভদ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই উড়ে গিয়ে তাদের আসবাবপত্রসহ ব্যবহৃত পোশাক আশাকে পড়ছে। এমনকি ফসলের ক্ষেতেও পড়ছে। এতে তাদের নানা জটিল এবং কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

একই কথা বলেন, রামভদ্রপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ, দুধিপুর গ্রামের আব্বাস আলী, সোবহান মিয়া, দুধিপুর গ্রামের ভ্যানচালক শুকুমার রায় বলেন, তাদের একটি ১০ বছরের কন্যা সন্তানের হাতে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি অ্যাসিড জনিত ভাইরাসে এ আক্রান্ত হয়েছে। একই অবস্থা ওই এলাকার অন্যান্য শিশুদেরও।

এ বিষয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাবস্থপনা পরিচালক খায়রুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই নিয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের কোনো আশঙ্কা নেই। ছাই বিক্রির বিষয়টি আদালতে ঝুলে থাকায় সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।