রকমারী ডেস্কঃ

বিয়েতে যৌতুক হিসেবে একখানা দামী মোটরসাইকেল দাবি ছিল বরপক্ষের। অন্যায় হলেও সে দাবি মেনেও নিয়েছিল কনেপক্ষ। বলেছিলো সাধ্যানুযায়ী তাই দেবো মেয়ের সুখের জন্য।

সবকিছু ঠিকঠাক, নির্দিস্ট দিনে সানাই বাজিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে এলো বরযাত্রী। কনে পক্ষের বাড়িতে গিজ গিজ করা আত্মীয় স্বজন ব্যস্ত হয়ে পড়লো বরযাত্রীর আপ্যায়নে।

তবে শুরু হলো এক নতুন সমস্যা। কৌতুহল চেপে না রাখতে পেরে বরের বাবা আগে ভাগেই দেখে নিতে চায় প্রত্যাশিত মোটরসাইকেলখানা । বিপত্তি বাধলো ওখানেই।

যৌতুক হিসেবে কনেপক্ষ যে হিরো ১০০ সিসি মোটরসাইকেল কিনেছিল সেটা পছন্দ হলো না পাত্রের বাবার। বিয়ের আসরে মোহরের আগেভাগেই পাত্রের খ্যাপাটে বাবা দাবি করে বসে , এই বাইক চলবেনা, ১৫০ সিসি বাজাজ কোম্পানির নতুন মডেলের মোটরসাইকেল কিনে দিতে হবে ছেলেকে। বাক বিতন্ডার একও পর্যায়ে মুখে রুমাল চেপেই বিয়ের স্টেজ থেকে উঠে একফাকে মোটরসাইকেলখানা দেখে আসেন পাত্র মশাই নিজেও। নাহ! পছন্দ হয়নি পাত্রের নিজেরও। মুখে রুমাল চেপেই বাবার সাথে সুর মেলায় পাত্র।

ঘটনার আকস্মিকতায় থ মেরে যায় সবাই। বিয়ের আনন্দ ছাপিয়ে দুশ্চিন্তার ছাপ সবার চোখে মুখে।

এবার প্রশ্ন আসে পাত্রীপক্ষের কাছে থেকে, নইলে ? যদি না দেয়া হয় তবে ?

পাত্রপক্ষের স্পষ্ট জবাব, বিয়ে ভেঙ্গে যাবে তাহলে।
ভেতর থেকে কনে সাজেই এবার বেরিয়ে আসেন খোদ কনে । প্রতিবাদের সুরেই জানিয়ে দেন, এমন লোভী পাত্রের সাথে কোনভাবেই বিয়ে নয়! প্রয়োজনে আজীবন কুমারী থাকতে রাজী সে। তরুনী ঐ কনে এও জানিয়ে দেন, আল্লাহ যা করে মঙ্গলের জন্যই করে। পাত্রপক্ষের ভয়ানক লোভের চরিত্র আজ এই মুহুর্তে না জানলে সারাজীবন তাকে হয়তো ঘানি টানতে হইতো।

উপস্থিত সবাই একমত হয় কনের কথায়। একইসঙ্গে এমন নির্লজ্জ ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয় পুরো গ্রাম। ধর ধর মার-কাট শব্দে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী। অবস্থা বেগতিক দেখে সটকে পড়ে অধিকাংশ বরযাত্রীরা। এমনকি দু-চার ঘা খেয়ে পালিয়েছেন বরের বাবাও। তবে বিয়ের আসরে বসে থাকা বর মহাশয় ও তার ছোটভাই খুব একটা সুবিধে করতে পারলেননা । এরপর গ্রামবাসীর উদ্যোগে ফুলের মালা খুলে বর ও তার ছোটভাইয়ের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এলাকাবাসী। শুধু তাই নয়, মহা উৎসাহে এবার গ্রামবাসী জুতোর মালা সমেত বরকে প্রদক্ষিন করান পুরো গ্রাম ।

এসময়েই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, এরপর গ্রামের কোনো মেয়ের বিয়ের জন্য যৌতুক নিয়ে দরদাম করা হলে একই কাজ করা হবে।

গত বুধবার এ ঘটনা ঘটে ভারতের ঝাড়খান্ডের রাচি জেলার চান্দভি গ্রামে। এই ঘটনা স্থান পেয়েছে হাফিংটন পোস্ট, গালফ নিউজ সহ বিশ্ব গনমাধ্যমেও।

রাঁচীর সিকদিরির মুমতাজউদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল রুবিনা পারভিনের। রুবিনার বাবা বসিরউদ্দিন আনসারি বলেন, ‘পণ হিসেবে মোটরসাইকেল চেয়েছিল ছেলে। কয়েক দিন আগে তাকে রাঁচীর একটি শো-রুমে নিয়ে যাই। ছেলেই পছন্দ করেছিল মোটরসাইকেল। কিন্তু বিয়ের দিন বাপের কথায় ভড়কে গেল সে! ’

বসিরউদ্দিন আরও জানান, বিয়ের ঠিক আগে বরযাত্রীরা মোটরসাইকেল দেখে রেগে যান নতুন মডেলের নতুন রঙের মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার দাবি করা হয়।

এসব শুনে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান রুবিনাও।

তার পাশে দাঁড়ায় গোটা গ্রাম। গ্রামবাসীরা পাত্রপক্ষকে তখনই সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। বেগতিক দেখে সমঝোতার চেষ্টা করে বরযাত্রীরা। কিন্তু রুবিনা ছিলেন অনড়। ওই সময়ই স্থানীয়রা জুতার মালা তৈরি করে মুমতাজের গলায় পরিয়ে দেন।