জাগোনিউজ :
তিন দশকেরও বেশি সময় আগে প্রথম উপন্যাস লিখেছিলেন ইসলামী ভাবধারার উপন্যাসিক কাশেম বিন আবু বকর। ‘ফুটন্ত গোলাপ’ নামের সেই উপন্যাস এদেশের হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

এক ডজনেরও বেশি উপন্যাস লিখেছেন তিনি। উন্নয়নশীল বাংলাদেশে ইসলামী সমাজের চিত্র পরিবর্তন হয়েছে। ধীরে ধীরে আধুনিক ইসলামের দিকে ঝুঁকেছে। শুরুর দিকে বইয়ের পাণ্ডুলিপি নিয়ে প্রকাশকদের দ্বারে গিয়ে ফিরতে হয়েছিল তাকে। ইসলামী ভাবধারায় বই লেখার কারণেই প্রকাশকরা তার বই প্রকাশে তেমন আগ্রহ দেখাতেন না।

কিন্তু দমে যাননি তিনি। সত্তর দশক থেকেই লিখে চলেছেন উপন্যাস। সেই সময়ের স্মৃতি উল্লেখ করে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, প্রথম উপন্যাস লিখেছিলেন ১৯৭৮ সালে। কিন্তু প্রকাশকরা তার বই প্রকাশে আগ্রহ দেখাননি। তারা বলতেন, মোল্লার উপন্যাস বিক্রি হয় না। থেমে থাকেননি তিনি। এক দশক পর তার সেই বই বাজারে আসে; পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

ইসলামিক ভাবধারায় লেখা ‘ফুটন্ত গোলাপ’ উপন্যাস প্রকাশের পর থেকে তার কাছে শত শত চিঠি আসে। সেই চিঠিতে থাকে ভালোবাসার প্রকাশ কিংবা মিষ্টি অনেক আবদার। আবু বকর বলেন, তরুণীরা এখনও আমার কাছে নিজেদের রক্ত দিয়ে চিঠি লেখে। অনেকেই আমাকে বিয়ে করার জন্য এখনও মরিয়া।

বাংলাদেশে যেসব উপন্যাস লেখা হয় তার অধিকাংশই আধুনিক জীবনযাত্রা ও এলিট শ্রেণির। এর বাইরেও যে চিন্তাধারা আছে তার প্রতিফলন ঘটাতে ১৯৭০ সালে কলম হাতে তুলে নেন আবু বকর। তিনি নতুন এক ধরনের পাঠ তুলে আনেন; যা এর আগে কেউ কখনও চিন্তাও করেনি-বলেন বাংলাদেশি সাংবাদিক কদরউদ্দিন।

তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকায় আবু বকরের উপন্যাস এখনও তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকাদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।

মুসলিম পরিবারের কাছে বিয়ের সম্মতি আদায় নিয়ে দুই তরুণের ওপর লেখা তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশকরা প্রথমে পাত্তা দেননি। প্রকাশে আগ্রহ না দেখানোর কারণে আবু বকর ‘ফুটন্ত গোলাপ’র স্বত্ব মাত্র এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন। প্রকাশকরা মোল্লাদের বই বিক্রি হয় না বলে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বই প্রকাশের পর রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি।

বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ইসলামিক ভাবধারায় বই লিখতে চান এমন অনেক তরুণ লেখকের কাছে এখন প্রেরণার নাম আবু বকর। তিনি উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন এই লেখকদের।

বোরকা পরিহিত অনেক নারী ভক্ত ও পাঠক এখনও তার কাছে ছুটে আসেন অটোগ্রাফের জন্য। ভক্তদের চিঠি আসে শত শত। এতে থাকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ থেকে বিয়ের প্রস্তাবও। তবে ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে আবু বকরের। তিনি বলেন, সরকারি এক দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। তার উপন্যাস পড়েই দুর্নীতি থেকে সৎ পথে ফিরে এসেছেন ওই আমলা।

আবু বকর বলেন, প্রত্যেক দিন ডাক পিয়ন শত শত চিঠি নিয়ে আসেন। তিনি আমাদের পরিবারের স্থায়ী সদস্য হয়ে গেছেন।