এম.জুবাইদ ,পেকুয়া :

পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকায় মূর্তিমান আতংক দূর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার চুরি-ডাকাতি, বন নিধনসহ প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামী আলমগীর ডাকাত প্রকাশ ডাকাত সর্দার আলমগীর এখানো পুলিশের ধরা ছোয়ার বাহিরে! পেকুয়া পাহাড়ী দুই ইউনিয়নের নির্যাতিত বাসিন্দরা এখন ডাকাত আলমগীরের কীর্তিকলাপের কাহিনী বলতে শুরু করেছে। স্থাণীয়দের বর্ণনা দেওয়া ভয়ংকার কাহিনী শুনলে যে কারো গা শিউরে উঠবে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পেকুয়া উপজেলা দুই পাহাড়ী ইউনিয়ন বারবাকিয়া ও টইটংয়ের মধ্যবর্তীস্থানে গভীল জঙ্গলে ডাকাতদের আস্তানা গড়ে তোলে পাহাড়ের বাসিন্দাদের জিম্মি করে নানান ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত করে আসলেও বরাবরই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীর বাইরে ছিল। সম্প্রতি এ প্রতিবেদক পেকুয়ার পাহাড়ি ওই দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে পরিদর্শন করলে ডাকাত আলমগীর ও তার বাহিনীর অপরাধনামার বিস্তারিত ফিরিস্তি উঠে আসে। ডাকাত আলমগীর পেকুয়ার পাহাড়ের যেন অঘোষিত বন রাজা। আর সেখানে যারা বাস করেন তার প্রজা। পেকুয়ার পাহাড়ে ডাকাত আলমগীর ও তা বাহিনীর নির্দেশমতে সব কিছু চলে। বন বিভাগের পাহাড়ী ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, বন বিভাগের সৃজিত সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে বিক্রি, পাহাড়ি এলাকায় চুরি-ডাকাতি, পাহাড়ী এলাকার নারীদের অত্যাচারসহ আরো নানা ধরনের অপরাধই নিত্যসঙ্গী ডাকাত আলমগীর ও তার বাহিনীর। এখানে পাহাড়ের কোন বাসিন্দাই প্রকাশ্যে ডাকস্থানীয়দের ভাষ্যমতে, পেকুয়া উপজেলার মধ্যে বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে গহীন বন জঙ্গলে রাতে আলমগীরের ভয়ে মুখ খোলতে সাহস পায়না। কেউ প্রতিবাদ করলে গভীর রাতে বা দিনদুপুরে অস্ত্রধারী বাহিনী গিয়ে ওই প্রতিবাদী ব্যক্তির বসতঘরে হামলাসহ ওই বাড়ীর যুব নারীদের ধর্ষনের মতো হুমকি দেওয়া হয়। গত ৫ বছরে ওই পাহাড়ী এলাকার ১০টি গ্রামের অন্তত: অর্ধশতাধিক নারী ডাকাত আলমগীর ও তার বাহনীর সদস্যদের দ্বারা পাশবিক অত্যচারের শিকার হয়েছেন। যা সামাজিক মান সম্মানের ভয়ে প্রকাশ করতে পারছেন না ওই গ্রামের নির্যাতিত নারীদের পরিবার।

জানা গেছে, প্রায় প্রতিরাতে ডাক ডাক এর মধ্যে অধিকাংশ বন বিভাগের সংরক্ষিত বন ও সামাজিক বনায়নের এলাকা। এসব বনভূমিতে আস্তানা তালে াত আলমগীর ও তার বাহিনীর অস্ত্রধারী ক্যাডাররা পাহাড়ের কোন না কোন অসহায় পরিবারে হানা দেয়। এখানে তাদের থাবায় প্রথম শিকার হন নারী বা কিশোরীরা। এমনকি পিতা-মাতার সামনেই কিশোরীর ইজ্জত কেড়ে নেন ওই দূর্ধর্ষ আলমগীর বাহিনী। বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী গ্রামের জাফর আলমের পুত্র দূর্ধর্ষ ডাকত সর্দার আলমগীরের নেতৃতে অস্ত্রধারী অপরাধীরা সক্রিয় থাকলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নাগাল পাচ্ছেনা। ডাকাত সর্দার আলমগীরের নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার দূর্ধর্ষ অপরাধীরা এখানে সক্রিয় রয়েছে। এখানে বন বিভাগের সংরক্ষিত বন বিভাগের বন উজাড়, চুরি-ডাকাতি, নারী নির্যাতনসহ এমন কোন অপরাধ নাই যা ওই কুখ্যাত আলমগীর ও তার বাহিনী সংগঠিত করছেনা। ডাকাত বাহিনীর কারণে পাহাড়ের প্রায় ৫ হাজার বাসিন্দা চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে। ওই ডাকাত বাহিনীর বিরুদ্ধে পাহাড়ে কেউ মুখ খুললে তার উপর নেমে আসে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের খড়ক। তাই পাহাড়ের কোন বাসিন্দা ভয়ে আলমগীর ডাকাত ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, পেকুয়ার বারবাকিয়া ও টইটংয়ের পাহাড়ে অপরাধের ত্রাসের এক রাজত্ব কায়েম করেছে বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালী এলাকার জাফর আলমের পুত্র ও ডাকাতি, চুরি, সরকারী বননিধসহ নানান ধরনের অপরাধের কারণে কয়েক ডজন মামলার আসামী মো. আলমগীর (২৮) ওরফে আলমগীর ডাকাত। বনরাজা খ্যাত কুখ্যাত সন্ত্রাসী আলমগীরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ওই জনপদের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা মানুষ। এমন কোন অপরাধ নেই যা ওই আলমগীর ডাকাত ও তার বাহিনী পাহাড়ী জনপদে সংগঠিত করছেন না। ওই ডাকাত আলমগীল ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে বারবাকিয়া ও টইটংয়ের সরকারী বনভূমির মূল্যবান গাছ কেটে পাচার, পাহাড় কেটে মাটি পাচার, বালি দস্যুতা, নারী নির্যাতন, চুরি-ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্রবাজি, ধর্ষণ, হত্যার হুমকিসহ বহু অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। পেকুয়া থানা ও চকরিয়া আদালতে মামলাও রয়েছে কয়েক ডজন। এসব মামলার কয়েকটিতে বর্তমানে গ্রেফতারী পরোয়ানাও রয়েছে। ভূক্তভোগী এক পরিবারে বায়োবৃদ্ধ ব্যক্তি জানান, আলমগীর ডাকাতের নির্যাতনের কারণে এলাকার মেয়েদের বিয়ের উপযুক্ত হয়ে ওঠার আগেই অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে হয়। নয়তো শিকার হতে হয় আলমগীরের কু-লালসার। তার এক মেয়েকেও অনৈতিক প্রস্তব দিয়ে আসছিল ওই ডাকাত আলমগগীর। পরে মেয়েকে চট্টগ্রাম শহরের একটি পোশাক কারখানায় পাঠাতে বাধ্য হন এ পিতা। পরে সেখান থেকে মেয়েকে এলাকায় এনে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই রাখেন ওই পরিবার। কিন্তু এতেও নিস্তার মেলেনি। আক্ষেপের সাথে ওই বায়োবৃদ্ধ ব্যক্তি এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজিয়েছেন বেশ কয়েকবার। পরিশেষে নির্বিকার হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার চেয়ে টেনেছেন আলাপের ইতি। ডাকাত আলমগীরের নেতৃত্বে পাহাড়ী জনপদে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছে টইটংয়ের সোনাইছড়ি রমিজপাড়া, এবাদাতখানা, জুগিরছড়া, ধনিয়াকাটার পূর্বপাড়া, নতুনঘোনা, বারবাকিয়া ইউনিয়নের পাহাড়িয়াখালীসহ দুই ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। অস্ত্রের মুখে সাধারণ মানুষের দখলীয় ভূমি বা বসতঘরের মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করে দেয়া, পাহাড়ী ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করে চললেও বনবিভাগ থাকে নির্বিকার। তাই সরকারী ওই দপ্তরের দিকে অপরাধীদের সাথে আতাঁতের অভিযোগের আঙ্গুল স্থানীয়দের। এছাড়াও পাহাড়ি জনপদে মাদক ব্যবসা, নারী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে বনরাজা খ্যাত ডাকাত আলমগীরের এক ভাই সম্প্রতি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বেড়ে গেছে তার দাপট।

টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। ওইসব এলাকায় কিশোরী মেয়ে রাখতে পারছেন না অভিভাবকরা। পাহাড়ের মধ্যে ডাকাত আলমগীর ও তাদের পিতা জাফর মিলে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অন্যের জমি কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু ভোক্তভূগিদের জিম্মি করে রাখায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসছেনা। তারপরেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে স্থাণীয়রা ওই দূর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার আলমগীর ও তার অস্ত্রধারী বাহিনী সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য কক্সবাজার পুলিশ সুপার, র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।

পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন সন্ত্রাসী ও ডাকাতকে ছাড় দেওয়া হবেনা। অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।