বিশেষ প্রতিবেদক:
দীর্ঘদিন পরে হলেও অবশেষে রাহুমুক্ত হলো কক্সবাজারের পর্যটন সেবীদের সংগঠন ‘ট্যুর অপারেটরস অব কক্সবাজার’ (টুয়াক)। বহুল বির্তকিত রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে টুয়াক রাহুমুক্ত হলো। এতে টুয়াকের সাধারণ সদস্যরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এনিয়ে তারা আনন্দিত হয়েছেন। অন্যদিকে বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত করে করা হয়ে আহ্বায়ক কমিটি। এই আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে নতুন আশা বেঁধেছেন সংশ্লিষ্টরা।
টুয়াক সূত্রে জানা গেছে, নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকা-ের দায়ে গত শনিবার রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন টুয়াকের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এক বিশেষ সভা শেষে টুয়াকের নেতৃত্ববৃন্দসহ সাধারণ সদস্যদের নিবিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে এই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কমিটির বিলুপ্ত করার পাশাপাশি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি শক্তিশালী আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
টুয়াকের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হাসিব বাদল জানান, নির্ধারিত তিন মাস পেরিয়ে দশমাস অতিবাহিত হলেও কোন সুরাহা না করে বরঞ্চ সংগঠনকে ধ্বংসের মুখে পতিত করেছে। বর্তমান সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে চরম দ্বন্দ্বের কারণে আমাদের ১৪ বছরের ত্যাগে গড়া সংগঠনের ভাবমুর্তি ও কাঠামোকে উক্ত কমিটি ধুলায় মিশিয়ে দিতে চলেছে। অযোগ্য এই কমিটি সংগঠনের নিয়ম-নীতি অমান্য করে সাধারণ সদস্যদের অনুমোদনবিহীন ও নামভাঙ্গিয়ে বহিষ্কার আদেশ প্রদান, নির্বাচনকালিন গচ্ছিত অর্থ তচরুপ, সংগঠনের দেনা পরিশোধ না করা, হিসাব অনুমোদন না নেওয়া, অর্থ গ্রহনের মাধ্যমে অযোগ্য ও অফিসবিহীন সদস্যপদ প্রদান, সংগঠনের আয়ের খাত সমুহ বন্ধ করা, পর্যটন মেলা আয়োজনে ব্যর্থতা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অসস্মান করা, সংগঠন ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধাভোগ করা, সভা ও কার্যক্রম সমুহ নিয়মিতভাবে পরিচালনা না করা, ট্যুর অপারেটিং ব্যবসা বাস কাউন্টারের হাতে তুলে দেয়া, ভুয়া কার্যবিবরণি খাতা ব্যবহার করা, সংগঠনের নাম পরিবর্তনের প্রচেষ্টা করা, পত্র-পত্রিকায় জয়েন্ট স্টক নিবন্ধন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করাসহ নানা ধরনের অর্মাজনীয় অপরাধ সংগঠিত করেছে। তাই এই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে রয়েছেন, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও ফাউন্ডার কমিটির চেয়ারম্যান এম. এ. হাসিব বাদলকে প্রধান করে ঘোষিত আহবায়ক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- জনাব কামরুল ইসলাম (কক্সকুইন ট্যুরিজম), ছৈয়দুল হক (গ্রীন ভিউ ট্যুরস) আনোয়ার কামাল আনু (রাঙ্গাবালি কক্স ট্যুরিজম), আবু হেনা মোস্তফা শাহাজান (ড্রীম ট্যুরিজম সার্ভিস), ইফতেকার চৌধুরী (গ্রীন সাফারী ট্যুরস), আল আমিন বিশ্বাস তুষার (ফারসেম ট্যুরিজম), হোসাইন ইসলাম বাহাদুর (ফারহান এক্সপ্রেস ট্যুরিজম) এবং এস. এ কাজল (রাজধানী ট্যুরিজম)।
সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগ, সভাপতি নির্বাচিত হয়ে রেজাউল করিম টুয়াক ব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। সংগঠন ব্যবহার বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম, প্রভাব বিস্তার, স্বৈরাচারীর কা-, সংগঠনের সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহারসহ আরো অভিযোগ ছিলো রেজাউলের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে প্রায় সময় সংগঠনের সদস্যদের তার বাদানুবাদ হতো। এতে প্রতিবাদ করা বেশ কয়েকজন সদস্যকে তিনি নাজেহালও করেছেন।
সূত্র মতে, রেজাউলের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনামুলক কর্মকা-ে বাধা দেয়ায় সাধারণ সম্পাদক আসাফ উদ দৌলাকে বহিস্কার করা হয়েছিল। সেই সাথে টুয়াকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস.এম কিবরিয়া ও সাবেক অর্থ সম্পাদক শহীদুল্লাহ নাঈমকে সাধারণ সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। গঠনতন্ত্র অমান্য করেই তাদেরকে বহিস্কার এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রেজাউলের কার্যক্রমের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগ করেছিল টুয়াকের দায়িত্বশীল তিন সদস্য।
রেজাউলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, তিনি নিজের অযোগ্যতা, অক্ষমতা, অনিয়ম এবং ক্ষমতাকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দীর্ঘায়িত করা জন্য সংগঠন নিয়ে যাচ্ছেতাই কাজ করেছে। এর অংশ হিসাবে মিথ্যা অভিযোগের ধোয়া তুলে একে একে নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের সংগঠন থেকে বহিস্কার করেছে। বহিস্কারের ক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে সংগঠনের গঠনতন্ত্রকে।
টুয়াকের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়াম্যান এম.এ আসিফ বাদল বলেন, ‘টুয়াকের পরিচালনা কমিটির অভিভাবক হচ্ছে স্ট্যান্ডিং কমিটি। নেপথ্যে থেকে স্ট্যান্ডিং কমিটিই মূল ক্ষমতার অধিকারী। টুয়াকের মতো একটি সংগঠনের অস্থিত্ব সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছিল কমিটি। তাই এই দু:সময়ে আমরা এগিয়ে এসে টুয়াককে উদ্ধার করেছি। সংগঠনটি রাহুমুক্ত হলো। সকল সদস্যরা তাতে অত্যন্ত আনন্দিত।’