হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:

চকরিয়া জমজম হাসপাতালে টেকনাফের অসহায় ঠোট কাটা শিশু জিহানের সফল অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ৭ মাস বয়সী শিশু জিহান। অসহায় দিন মজুর পরিবারের জন্য অকল্পনীয় মানবিক সেবা প্রাপ্তিতে এবং শিশু জিহানের নির্মল হাসিতে আনন্দের ফল্গুধারা চলছে গোটা পরিবারসহ স্বজনদের মাঝে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় টেকনাফ পৌরসভাধীন কুলালপাড়া হাসান আহমদ ও রাজিয়া আক্তারের পুত্র মো: জিহান। জম্মগত ঠোঁট ও তালু কাটা নিয়ে জন্ম শিশু জিহানের। জিহানের বাবা-মা খুবই গরীব। তাদের ২ ছেলে। জিহান বাবা-মায়ের ছোট ছেলে। বাবা পেশায় দিন মজুর। ছোট ছেলে মোঃ জিহানের ঠোঁট ও তালু কাটা দেখে বাবা-মা খুবই চিন্তিত ছিলেন। মুখে কিছু খাওয়ালে নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে, ঠোঁট দিয়ে মায়ের দুধও খেতে পারতনা।

জম্মগত ঠোঁট ও তালু কাটা শিশু পুত্র জিহানের জন্য দু:চিন্তায় হতাশাগ্রস্থ অশিক্ষিত ও অসচেতন সহজ-সরল মা রাজিয়া একজন কবিরাজের শরণাপন্ন হন। কবিরাজ সব দেখে শুনে নাকি বলেছিলেন ১৭ দিনের মাথায় শিশু জিহান মারা যাবে। জিহানের মা ১৭ দিনের তথাকথিত ‘ফাঁড়া’ কাটানোর জন্য প্রতিদিন আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতেন। জম্মগত ঠোঁট ও তালু কাটা শিশু জিহানের জীবন ভিক্ষার ফরিয়াদ জানাতেন।

এমতাবস্থায় একদিন কুলালপাড়ায় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষ্যে টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে যান টেকনাফে কর্মরত আইসিডিডিআরবি’র ফিল্ড রিসার্চ সুপারভাইজার অমিত বণিক। অমিত বনিক জিহানকে দেখে মায়ের সাথে কথা বলেন। লায়ন মোখলেছুর রহমান ফাউন্ডেশন (এলএমআরএফ) এর মাধ্যমে সম্পূর্ন বিনা খরচে জিহানের চিকিৎসা হবে বলে পরামর্শ দেন। এতে খুশিতে নিরব কান্নায় তাৎক্ষনিক পারিবারিক সিদ্ধান্তে জিহানের ছবি তুলে এলএমআরএফ এর এরিয়া কো-অর্ডিনেটর সুধীর চন্দ্র দাশের কাছে পাঠানো হয়।

এলএমআরএফ থেকে সম্মতি পাওয়ার পর জিহানকে নিয়ে চকরিয়া জমজম হাসপাতালে যান বাবা-মা। পরিক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৭ মার্চ চকরিয়া জমজম হাপপাতালে সফল অস্ত্রোপচার করা হয় জিহানের। অপারেশন করেন এলএমআরএফ এর মেডিকেল টিমের প্রধান প্রখ্যাত প্লাস্টিক সার্জন ডা: মোহাম্মদ আইয়ুব আলী। জিহানকে খাওয়ানোর গাইড লাইন, অপারেশনের পূর্বে পরীক্ষাসমূহ, হাসপাতালে থাকা খাওয়া, অপারেশন, অপারেশনের পরে সেলাই খোলা এবং পরবর্তী দেখাশুনা ইত্যাদি সবই এলএমআরএফ বিনামূল্যে সেবা প্রদান করেছে।

অপারেশন তো দুরের কথা, জিহান বাচাঁনো যাবে কিনা সংশয়ে থাকা দু:চিন্তায় হতাশাগ্রস্থ বাবা-মা প্রতিক্রিয়ায় বলেন ‘লায়ন মোখলেছুর রহমান ফাউন্ডেশন’ এর কথা আগে কখনও শুনেনি। তাঁদের কারও সাথে পরিচয়ও নেই। মহান আল্লাহু তা’য়ালার অশেষ মেহেরবাণীতে তাঁদের সেবায় আজ আমার শিশুপুত্র সুস্থ। বর্তমানে খাওয়া দাওয়াসহ সবকিছু সুস্থ ও স্বাভাবিক। ওসিলা ছিলেন টেকনাফে কর্মরত আইসিডিডিআরবি’র ফিল্ড রিসার্চ সুপারভাইজার অমিত বণিক। আমরা লায়ন মোখলেছুর রহমান ফাউন্ডেশন (এলএমআরএফ) এবং অমিত বণিকের প্রতি কৃতজ্ঞ। ২৪ এপ্রিল টেকনাফে কর্মরত আইসিডিডিআরবি’র ফিল্ড রিসার্চ সুপারভাইজার অমিত বণিক বলেন মানবিক কারণে অসহায় পরিবারকে সহযোগিতা করেছি মাত্র।