সোয়েব সাঈদ, রামু :

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমেই গ্রামীণ সড়কের মাঝখানে পানি চলাচলে ছরাটি পানিতে টইটম্বুর হয়ে যেত। ফলে এলাকার লোকজনের যাতায়াতে দূর্ভোগের অন্ত ছিলো না। আবার এ ছরাটির কারনে ছাত্রছাত্রীদের স্কুল-মাদরাসায় যাওয়া বন্ধ হয়ে যেত। এলাকাবাসী বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও কোন সুফল পাননি।

গ্রামবাসীর এ চরম দূর্ভোগ অবশেষে নিরসন করলেন ওই এলাকারই উদ্যোমি যুবক মোহাম্মদ হোছাইন। সড়কের মাঝখানের ছরায় নিজ অর্থায়নে কালভার্ট স্থাপন ও মাটি ভরাট করে সড়কটি চলাচলের উপযোগি করে দিয়েছেন। তরুন ব্যবসায়ি মোহাম্মদ হোছাইনের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ পুরো এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। মোহাম্মদ হোছাইন রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পশ্চিম মনিরঝিল দরগাহ পাড়া এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে।

কালভার্ট নির্মাণকাজে অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে স্বেচ্ছাশ্রমে অংশ নেন, ওই এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন, মোস্তাফা, রশিদ ও আবদু ছমদ। তাঁরা জানান, কাঁচা এ সড়কটি দিয়ে আশপাশের প্রায় শতাধিক পরিবারের কয়েকশ মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ সড়কের অংশে থাকা ছরাটি পানিতে ডুবে গেলে যাতায়াত করা সম্ভব হয় না। কালভার্ট স্থাপনসহ মাটি ভরাটের সব কাজ এখন সম্পন্ন হয়েছে। ফলে সাম্প্রতিক কয়েকদফা ভারী বৃষ্টিপাতের পরও কালভার্ট দিয়ে পানি নিস্কাশন হওয়ায় ওই সড়ক হয়ে লোকজন অনায়াসে চলাচল করেছে।

ব্যতিক্রমী এ কাজের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ হোছাইন জানিয়েছেন, ইতিপূর্বে এখানে কালভার্ট আর মাটি ভরাট করার আশ্বাস দিয়ে অনেকে চেয়ারম্যান-মেম্বার হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর কেউ তা মনে রাখেনি। এমনকি তার দেয়া কালভার্ট স্থাপন ও মাটি ভরাট করার জন্য ইউপি মেম্বারের কাছে কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক চেয়েও পাননি। তাই অবশিষ্ট কাজও তিনি নিজ উদ্যোগে করেছেন।

মোহাম্মদ হোছাইন আরো জানান, একজন সামান্য ব্যবসায়ি হয়েও সমাজের জন্য কিছু কাজ করার মধ্যে যে আনন্দ রয়েছে তা এটা না করলে বুঝতে পারতাম না। তিনি এ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে যারা সহায়তা করেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আরো জানান, তাদের গ্রামটি খুবই অবহেলিত। এখানে নেই পাকা রাস্তা। নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। তাই তিনি এ গ্রামের একমাত্র সড়কটি ব্রিক সলিং করা ও অবিলম্বে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেন, যুবক মোহাম্মদ হোছাইন নিজ অর্থায়নে সড়কের বিচ্ছিন্ন অংশে কালভার্ট ও মাটি ভরাট করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সমাজের প্রতি মানুষের যে দায়বদ্ধতা তা তিনি অনুভব করেছেন বলেই এমন মহৎ কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ হোছাইনকে এমন ব্যতিক্রমী ও মহৎ কাজের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি তিনি মোহাম্মদ হোছাইনের মতো সবাইকে সমাজে কল্যাণমূলক কাজে ভূমিকা রাখার আহবান জানান।