নিজস্ব প্রতিবেদক :

পারিবারিক কলহ ও জমি বিরোধের জের ধরে পালিত কন্যাকে ধর্ষনের অভিযোগ তুলে বয়োবৃদ্ধ পিতাকে মামলার আসামী করায় অভিলম্বে মামলা প্রত্যাহার ও ঘটনার সুষ্টু তদন্ত চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার সন্তানরা।

২৩ এপ্রিল বিকালে কক্সবাজারের এক অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও সাজানো উল্লেখ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চট্টগ্রাম কোর্টের শিক্ষানবীশ আইনজীবি কামরুন্নাহার শারিকা।

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমাদের পরিবারে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিগত ২০০৫ সাল থেকে অদ্যবদি পারিবারিক সমাস্যা চলে আসছে। এমতাবস্থায় আমাদের আপন মামারা আমাদের পালিত বোন আমিনাকে দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য আমাদের পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করছে। গত ৪/৫ বছর ধরে আমার মায়ের মারমুখি অবস্থানের কারণে কমপক্ষেও ১০০বার পারিবারিক বৈঠক হয়েছে। আমার মায়ের বাড়াবাড়ি এবং এক কেন্দ্রিক আচরণের কারণে আমরা ১ম, ২য় শ্রেণী থেকে দূর দূরান্তে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে আসছি।

আমার মা আমার বাবাকে বাড়ি থেকে বের করার হুমকি দিত। সপ্তাহে ৩/৪দিন মেরে ফেলার, গুম করে ফেলার হুমকি দিত এবং চলমান মামলা গুলি তুলে নেওয়ার আমার মামা হারুনুর রশিদ ও হুমায়ন রশিদ প্রতিনিয়ত হুমকি দিত। আমার আব্বার প্রতিষ্ঠিত মোহাম্মদ শফির বিল ইসলামী মাদ্রাসাতে কমপক্ষ ৪০/৫০ বার হামলা হয়েছে, কেটে ফেলা হয়েছে সুপারি, আম, কাঠাল, নারিকেল সহ ৪০০/৫০০ গাছ। এই বিষয়টি ইতিপূর্বে উখিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহ জালাল চৌধুরী নেতৃত্বে গণ্যমান্য সবাই বিচার শালিস করেছে। অবহিত আছে ১নং জালিয়াপালং ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান এসএম ছৈয়দ আলম, আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার শফিউল আলম সাবেক মেম্বার গণ বিষয়টি অবগত আছেন। আমার মা তাহামিনা আক্তার, আমার মামা হারুনুর রশিদ ও হুমায়ন রশিদ মাদ্রাসা বন্ধ করে দিলে বর্তমান (তৎকালীন) চেয়ারম্যান ২০০৭/৮ জালিয়া পালং ইউনিয়নের সকল মেম্বার কে নিয়ে মাদ্রাসা খুলে দেয়ার জন্য এলাকাবাসীর সাথে সভা চলাকালিন সময়ে আমার মা তাহমিনা আক্তার, আমার মামা হারুনুর রশিদ ও হুমায়ন রশিদ সহ ১০/১৫ জনের একটি স্বশস্ত্র দল নিয়ে হামলা চালায় এবং আমার আব্বা সহ ১০/১৫ জন আহত হন।

আমার মা তাহমিনা বেগম গত ৩/৪ বছর ধরে আরো বেপরোয়া হয়ে যাওয়ার কারণে আমার মা তাহমিনা আক্তার, আমার মামা হারুনুর রশিদ ও হুমায়ন রশিদ বিবাদী করে থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে আমার বাবা আমাদের অনুরোধে আমার মাকে বাদ দিয়ে হারুনুর রশিদ ও হুমায়ন রশিদের নামে একটি জিডি লিপিবদ্ধ করে। যে কোন মূহুর্তে অঘটনের আশংকায় ভীত স্বশস্ত্র জীবনযাপন করেতে থাকে।

অনেকটা বাধ্য হয়ে গত ৩০/০৪/২০১৭ ইং আমার মামা হারুনুর রশিদ ও হুমায়ন রশিদ সহ অনেকের নামে উখিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন, যার নং- ১১৫৫।

ইতিপূর্বে আমার মা কাউকে কোন কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত। কোন কোন দিন ৮/১০ দিন পর্যন্ত খবর ছাড়া থাকত এবং মোবাইল বন্ধ থাকত। এই আচরণে অতিষ্ট হয়ে আমার মায়ের মামা মহিউদ্দিন চৌধুরী রাজাপালং বর্তমান (কক্সবাজার), আরেক মামা তোফাইল সিকদার বর্তমানে (কক্সবাজার), চাচা আব্দুস সালাম (ইনানী) আমার মা ভূল চিকিৎসার জন্য বার বার অভিযোগ করে আসছিল। আমরা উভয় পরিবারের নিস্পত্তির জন্য গত ২১/০৪/১৭ ইং শুক্রবার বিচারের দিন ধার্য ছিল। আমার মা বিচারের আগে গত ১২/০৪/১৭ ইং আমাদের পালিত বোন আমেনা কে নিয়ে এক ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। এই বার গ্রীস্মের ছুটিতে বাড়ীতে আসলে আমাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিরোধ নিস্পত্তির জন্য এক পারিবারিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। উশৃংখল, উগ্রভাবের ভুমি দস্যু আমার মামা হারুনুর রশিদ, হুমায়ুনুর রশিদ, আমাদের পালিত বোন আমেনা কে নিয়ে ষড়যন্ত্রের চক্রান্ত করে আমার বাবার আত্মসম্মান হানি করার মানসে আমার বাবার বিরুদ্ধে এহেন জগন্য মিথ্যা নাটক সাজানো হয়েছে। আমরা উক্ত ঘটনার সুষ্টু তদন্ত ও বয়োবৃদ্ধ আমাদের পিতার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি। আমি পরিস্কার করে বলতে পারি যে, আমার মা তাহমিনা বেগম আমার ভুমিদস্যু মামা হারুনুর রশিদ ও হুমায়ন রশিদ সহ তাদের পরিবারে অনেকে ষড়যন্ত্র করেছিল আমার বাবাকে ফাঁসানোর জন্য। সর্বশেষ এই ঘটনা যদি সঠিক নিরেপক্ষ ভাবে তদন্ত করা হয় তাহলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে, ধর্ষক কি আমার বাবা নাকি হারুন ও হুমায়ন? নাকি আমার মায়ের নাটক? এসময় অন্য ৩ ভাইয়েরা বলেন, আমরা অসহায়, আমাদের বাড়ি ঘর, বসত ভিটা, উচ্ছেদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে এবং আমাদেরকে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছে। ঠিক এই কারণে আমার বাবাকে মিথ্যা ধর্ষনের মামলা দিয়ে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। মায়ের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল আমার বাবাকে জেলে, আমাদের বসত ভিটা দখল করা।

এই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমাদের মামা হারুনুর রশিদ ও হুমায়ুন রশিদ গত ১২/০৪/১৭ ইং কক্সবাজার আদালত চত্বরে আমার বাবাবে টানা হিচড়ে করে মারধর করে।

পরে ১৪.০৪.১৭ ইং তারিখ আমার ভাই শারেক বাড়িতে আসলে মামাকে কেন আমার বাবাবে অপমান/মারধর করেছেন বলে আপত্তি করেন তখন দুই মামা তেলেবেগুনে জেলে উঠে বলেন, তোমাদের ৩ মাসের মধ্যে দেখে নেব ঘরছাড়া করব। ঐ ঘটনার একদিন পর ১৬ এপ্রিল আমাদের পালিত বোনকে দিয়ে বয়োবৃদ্ধ বাবাকে কথিত ধর্ষনের অভিযোগ এনে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে।

সংবাদ সম্মেলনে ইনানী দক্ষিন মোহাম্মদ শফির বিল এলাকার ডা: আজিজুল ইসলামের বড় মেয়ে শারিকা আরো বলেন, আমরা একটি শিক্ষিত পরিবার হিসেবে এলাকায় সু-পরিচিত রয়েছে। বর্তমানে আমি এলএলবিতে অনার্স করে চট্টগ্রাম আদালতে শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছি।

আমার ৩ ভাই বর্তমানে কামরুল ইসলাম শারেক রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে অনার্স ২য় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র, শামিমুল ইসলাম ফায়সাল চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ কামিল মাদ্রাসায় ১০ম শ্রেনী ও একদম ছোট ভাই আরেফুল ইসলাম চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত আছে।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, ইতোপূর্বে স্থানীয় মো: শফির বিল ইসলামীয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আজিজুল ইসলাম। ঐ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও হর্তাকর্তা আমার নানা ও মামারা হওয়ার জন্য আমার পিতার সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত। পক্ষে বিপক্ষে এ নিয়ে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান, গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ কতবার বৈঠক করেছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। মায়ের পক্ষ কোনভাবেই বিচার সালিশের তোয়াক্কা করে না। আমার পিতাকে বহুবার জানে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে। এ নিয়ে আমার পিতা জিডি করেছে। জিডি নং- ১১৫৬, তাং- ৩১/০৮/২০১৬ ইং (উখিয়া)। বিরোধীয় মামলা নং যথাক্রমে অপর- ১৭৯/২০১২ ইং, ১৯০/২০১৬ ইং। আমাদের ভিটেবাড়ী ছাড়া করার লক্ষ্যে তারা আমার মা, কে বশে নিয়ে আমার পিতার বিরুদ্ধে প্রসাদ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিকল্পনার অংশ আমার মামা হারুন, হুমায়ুন আমার মাকে নিয়ে পালক মেয়েকে ভিকটিম বানিয়ে আমার পিতার বিরুদ্ধে সূত্রোক্ত সাজানো ধর্ষণ মামলাটি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমার মা মেরিন ড্রাইভ রোডের ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৮-১০ লক্ষ টাকার একটি বিশাল অংকের টাকা পাই এবং টাকাগুলো আমার মামাদের হাতে জিম্মি। তাই উক্ত টাকাগুলো না দেওয়ার অজুহাত হিসেবে আমার মাকে দিয়ে মামলা সাজায়। যা মিথ্যা, ভিত্তিহীন, সাজানো। ইতোমধ্যে এলাকার জনগণ মানববন্ধন করে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে। সঠিক, নিরপেক্ষ তদন্তে ঘটনার আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। যাকে ভিকটিম বানিয়ে এ মামলাটি সাজানো হয়েছে সে ভিকটিমকে মাদ্রাসায় না পাঠিয়ে মানবাধিকার লংঘিত করে অতিমাত্রায় কাজের বুঝা তুলে দেওয়ায় আমার মাতাকে আমার পিতা কর্তৃক অনেক সময় বকাবকি করতে দেখেছি। যা হোক আমরা সন্তান হিসাবে অপরাপর সকল ভাই-বোন এবং পালিত বোন আমিনা খাতুনের পক্ষে সূত্রোক্ত মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত পূর্বক আসল রহস্য বের করার পক্ষে বিনীত নিবেদন জানাচ্ছি। নচেৎ আমাদের উঠতি পরিবার ধ্বংস হয়ে পথে বসবে। ইজ্জত সম্মান হারিয়ে আমরা সন্তানরা ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ব।

আমরা এঘটনা ন্যায় বিচারের স্বার্থে সূত্রোক্ত মামলার ঘৃণ্য অভিযোগটি সঠিক তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রুততম প্রচেষ্টা একান্তভাবে কামনা করছি।