ডেস্ক নিউজ:

বিস্তৃত হাওর এলাকার পানিতে ভয়াবহ ইউরেনিয়াম বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত সংলগ্ন মেঘালয় প্রদেশে একটি অসম্পূর্ণ ইউরেনিয়াম খনি থেকে এই বিপর্যয়ের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ কারণেই হাওরে গত সপ্তাহে মাছ ও হাঁসের মড়ক দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তারা এমন আশঙ্কার কথা এরইমধ্যে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

ইউরেনিয়াম দূষণের আশঙ্কা মাথায় রেখে এবং বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গবেষণা করে চিহ্নিত করতে এরইমধ্যে বিজ্ঞানীদের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সরকারের নির্দেশে পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আজই (শুক্রবার) হাওরাঞ্চলে যাচ্ছে বলে পরিবর্তন ডটকমকে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেজ ওসমান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেঁষা বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ‘ওয়েস্ট খাসি হিল’ এলাকায় ভারত একটি ইউরোনিয়াম খনি খননের কাজ শুরু করে। কিন্তু, স্থানীয় খাসিয়ারা ইউরেনিয়াম বিপর্যয় ও তেজস্ক্রিয়তার আশঙ্কায় ব্যাপক প্রতিবাদ  শুরু করে। এ কারণে সেই খনির কাজ এখনও শেষ করা যায়নি। খনি খননের কাজ শুরুর পর্যায়েই সেখানে বেশ কিছু খনির মুখ তৈরি করা হয় ইউরেনিয়ামের প্রাপ্তিস্থান পর্যন্ত। সেখানে ড্রিলিং করে বড় বড় গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। ফলে রয়ে যায় তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়ামের খোলা খনির মুখ। সে মুখগুলো আর বন্ধ করা হয়নি। সেসব জায়গা দিয়ে ব্যাপক পানি প্রবাহের পর ওয়েস্ট খাসি হিলে মাছের মড়ক দেখা দেয়। যা নিয়ে গত ১৭ মার্চ খাসিয়া ইউনিয়ন ফ্রন্ট ভারতে সংবাদ সম্মেলন করে ইউরেনিয়াম দূষণজনিত কারণে মাছের মড়ক হচ্ছে বলে জানায় এবং এর প্রতিকার চায়।

এদিকে বাঁধ ভেঙে হাওরে বন্যা দেখা দেওয়ায় গত সপ্তাহে মাছের পাশাপাশি পাখি ও হাঁসেরও ব্যাপক মড়ক দেখা দিয়েছে। পানি ব্যাপকভাবে বিষাক্ত হওয়ার কারণে এমনটা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষঙ্গরা। শুক্রবার সরকারি প্রতিনিধিদল সুনাগঞ্জের হাওর এলাকায় পানি পরীক্ষা করেও ওই পানিকে জলজ প্রাণীর জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী নয় বলে চিহ্নিত করেছেন।

পানিতে ইউরেনিয়াম ছড়িয়ে পড়লে মহামারি আকারে হাওর অঞ্চলে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়।

প্রায় প্রতিবছরই হাওরে অকাল বন্যা হলেও এভাবে মাছের মৃত্যু আগে কখনও দেখা যায়নি। এরই মধ্যে সুনামগঞ্জের তাহেরপুর সীমান্ত হয়ে ভারত থেকে ঢুকা জাদুকাটা নদীতে কিছু দিন আগেও মাছের মড়ক দেখেছেন স্থানীয়রা। তাছাড়া বড় হাওরগুলোর মধ্যে অন্যতম হাকালুকি এবং টাঙ্গুয়ার হাওরে জলজ প্রাণীর মধ্যে মাছ ও সাপ অস্বাভাবিকভাবে মরে যাচ্ছে। তাছাড়া ঐসব হাওরের পানি রংয়ে অস্বাভাবিক পরিবর্তনও এসেছে কোথাও কোথাও।

ইতোমধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও হাওরাঞ্চলের মৃত মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর মৃতদেহ সংগ্রহ করে বাংলাদেশ প্রাণী গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) এর কাছে পাঠিয়েছে।

যদিও স্থানীয় কর্মকর্তারা মনে এও মনে করছেন যে, যদি সত্যি সত্যি হাওরের পানিতে ইউরোনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা মিশে থাকে তাহলে জলজ প্রাণীর মৃত্যু আরও বড় আকারে হতো।

এ বিষয়ে ইয়াফেজ ওসমান বলেন, ইউরেনিয়ামের বিকিরণ এতো সহজ নয়। তারপরও এ বিষয়ে আমি এখনি কিছু বলতে চাই না। আমি বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিয়েছি দ্রুত পরীক্ষা করে ফলাফল জানাতে। এ বিষয়ে পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে আমি বলে দিয়েছি।

হাওরের অধিকাংশ মানুষ পরিশোধন না করে সরাসরি নদী ও হাওরের পানি পান করে থাকেন এবং রান্না ও গোসলে ব্যবহার করেন।