হাশমত আলী:

বর্তমান যুব সমাজ নিয়ে আমাদের অনেক উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ। অনেক দুঃশ্চিন্তা। অল্প বয়সেই ওদের অনেকে মাদকাসক্ত। পেয়ে বসেছে বখাটেপনায়। পিতা-মাতার প্রতি অবাধ্যতা দিন দিন বেড়েই চলছে। কারো কারো আবার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে। জড়িয়ে পড়েছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে। কেউ জড়াচ্ছে ছিনতাই-রাহাজানিতে। কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে ইভটিজিং করছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-মাদ্রাসাগামী তারই প্রতিবেশী কিংবা বোন-খালার মত মেয়েদের। প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফেরত এলে ছুড়ছে এসিড। নোংরামী পেয়ে বসেছে আমাদের সন্তানদের। পর্ণোগ্রাফিতে ডুবে আছে আমার আপনার সন্তানরা। ঘরের দরজা বন্ধ করে রুমের ভেতরে অন্য জগত খুঁজতে ব্যস্ত ওরা। এলাকায় সাধারণ মানুষ ওদের কখনো ভাল সার্টিফাই করতে পারেন না। যদিও তারা একশ্রেনীর মানুষের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই যুবকেরা ব্যবহৃত হচ্ছে তাদের কুকর্মের ঢাল হিসেবে।

হয়তো আমি-আপনি ভাবছিঃ
যাক বাঁচা গেল। অমুকের ছেলে অমুক খুব নষ্ট হয়ে গেছে। হেরোইনসেবী। মাদকাসক্ত।সন্ত্রাসীদের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ইভটিজার। ক্রিমিনালের সেরা ক্রিমিনাল। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন আমার ছেলে নাই। আমার ছেলে ভাল। এসবে নাই।

এত খুশী হওয়ার কিছু নেই। যুবসমাজের অধঃপতন আমাদের পরিবেশ-দেশের জন্য ভাইরাস। যেকোন সময়েই ঐ ভাইরাস আপনাকে আমাকে আঘাত করবে। শত এন্টি ভাইরাস দিয়েও আপনি রেহাই পাবেন না। প্রতিবেশীর বখাটে-মাদকাসক্ত-সন্ত্রাসী ছেলেটা আপনার উপরেই আঘাত হানতে পারে। আপনার সুখ-শান্তিতে ভরা পরিবারের সুখ ওরাই কেড়ে নিতে পারে। যে যুবকদের গরম রক্তের উপর ভর করে আপনি আজ বড় পদে আসীন সেই পদকেই কলুষিত করে ফেলবে আপনার দলে আশ্রিত একদল বখাটে-অবাধ্য-মাদকসেবী যুবকের দল। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম-খ্যাতি নিমিষেই নষ্ট করে দিতে পারে সন্ত্রাস- চাদাবাজিতে জড়িত কিছু ছাত্র।

চুপ থাকবেন? পার পাবেন না। ওই যুবক যে সমাজে বাস করে আপনি সে সমাজের নাগরিক। যে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সে প্রতিষ্ঠানের আপনি এক সদস্য। সবাই এক জাহাজের যাত্রী। যাত্রা চলছে নিরদ্দেশ্যের উদ্দেশ্যে। তীর ছাড়া বিশাল সাগরের মধ্যখানে আপনি-আমি। দুষ্ট কিছু যুবকের দুষ্টামি পুরো জাহাজকেই ডুবিয়ে দিতে পারে। আপনি আমি ওদের থামাতে ব্যর্থ হলে ওরা এই জাহাজের তলায় একটা ছিদ্র করে দিলেই ত হয়ে যায়। সেই জাহাজের কেউ রেহাই পাবেনা। আপনার সন্তান আত্মীয় নয় বলে আপনি শুধু ধুর ধুর বলে ওদের এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাড়িয়ে দিচ্ছেন।

ওদের থামাতে হবে। ওদের এগুতে দেয়া যাবে না এ কাজে। শুধু ওদের বাবা-মা, শিক্ষকের উপর দায় চাপাবেন না। নিজেও কিছু দায় নিন। আপনি আমি একা পারবোনা। তবে আমার বিশ্বাস, আমরা-আপনারা কয়েকজন আন্তরিক হলে আমার আশে-পাশের এই দুরবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি ঘটাতে পারবো। ওই যুবকদের আলোকিত করতে পারবো।

কিভাবে করতে পারি এ কঠিন কাজ? আমার প্রস্তাব হলোঃ
আপনার এলাকা/প্রতিষ্ঠানে কিছু আন্তরিক মানুষ বাছাই করুন। তারা বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন দলের হলে ভাল। উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দিন। প্রয়োজনীয়তাও ব্যাখ্যা করুন সবিস্তারে। যোগাযোগের কৌশল নির্ধারণ করুন। বক্তব্য নির্ধারণ করুন। কারা কাদের/কার সাথে কথা বলবে তাও নির্ধারণ করুন।এ ক্ষেত্রে সম্পর্ক কাজে লাগান। যাকে যে ম্যানেজ করতে পারবেন তাকেই দায়িত্ব দিন। সাথে সহযোগী দিন। কাজ শুরু করুন। মাঝে মাঝে বসুন। তাড়াহুড়ো নয়। ধীরে চলুন। একদিনে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন না। পরিবার-প্রতিষ্ঠান-দল সবকিছুর সাথে সমন্বয় করুন।

একজন বখাটে, নৈতিকতাহীন, মাদকাসক্ত-সন্ত্রাসী যুবক শুধু ওর পরিবারের সমস্যা নয়। ওরা আমার সমাজ, প্রতিষ্ঠান,দল কিংবা সমগ্র দেশের জন্য সমস্যা। ওদের ফিরিয়ে আনুন। ওদের শক্তি-সামর্থ্যকে গঠনমূলক-লাভজনক কাজে ব্যবহারের উদ্যোগ নিন। এতে যাদের সহায়তা নেয়া প্রয়োজন নিন, যাদের সহায়তা দেয়া প্রয়োজন দিন। কার্পণ্য করবেন না। অবহেলা করবেন না। অবজ্ঞা করবেন না। আপনার কারণে যদি একজন যুবক আসল পথে ফিরে আসে তবে আপনি অনেক বড় কাজ করলেন। অন্ধকারে নিমজ্জিত একটি প্রভাবশালী ও সম্ভাবনাময়ী গোষ্ঠিকে আলোর পথ দেখানোর মত বড় কর্ম আর কি হতে পারে।চলুন নেমে যাই। কে কি বলল তা উপেক্ষা করি। লক্ষ্য যখন স্থির হলো, তা পূরণের জন্য অস্থির হই।