মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আজাদ, ঈদগাঁও:

কক্সবাজার সদর উপজেলার বৃহত্তর ঈদগাঁওতে যেন নিয়মিত ডাকাতি হচ্ছে গরু। মালিকেরা শিকল দিয়ে গোয়াল ঘর বেঁধে অথবা নিজের শোয়ার জায়গায় গরু পাহারা দিয়েও রাখতে পারছে না। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। ডাকাতদল রাস্তা ছেড়ে অস্ত্র নিয়ে গোয়ালঘরে হানা দিচ্ছে। বিগত মাস দুয়েকের মধ্যে প্রায় শতাধিক গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ঈদগাঁও পুলিশ গরু চোর কিংবা ডাকাত ধরতে বৃহত্তর ঈদগাঁওর ৬/৭টি পয়েন্টে বাঁশকল বসিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, এ পর্যন্ত পুলিশের দেয়া বাঁশকলে গরুভর্তি কোন ম্যাজিক গাড়ী কিংবা মিনি ট্রাক আটকানো সম্ভব হয়নি। ২১ এপ্রিলও ঈদগাঁও ইউনিয়নের কালিরছড়া থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ৬টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। ইতিপূর্বে ঈদগাঁওর ভোমরিয়াঘোনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছৈয়দ ওমর, আওয়ামীলীগ নেতা ফিরোজ ও পাশর্^বর্তী আরেক বাড়ী থেকে একই রাতে আরো ৬টি গরু ডাকাতি হলেও এখনো পর্যন্ত কোন হদিস বা অংক মিলাতে পারেনি পুলিশ। বাহরাইন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ছৈয়দ ওমরের ছেলে আবুল কালাম এ প্রতিবেদককে জানান, আমার পিতা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে আজকে আমরা তার প্রতিদান পাচ্ছি। কিন্তু পুলিশ কেন গরু চুরির কাজে ব্যবহৃত ম্যাজিক গাড়ী কিংবা ডাকাত আটক করতে পারছে না? এছাড়া জালালাবাদের পালাকাটা গ্রামে মিজানের ৬টি গরু, নতুন মহালের নাছিরের ২টি গরু, বোয়ালিয়া পাড়ার চাঁদ মিয়ার ৩টি গরু, চৌফলদন্ডী পশ্চিম পাড়া গ্রামের হায়দারের ৩টি গরু, চাঁন্দের ঘোনার আবু বক্কর ছিদ্দিকের ২টি গরু (ডাকাতের গুলিতে আহত), গত সপ্তাহে ইসলামাবাদের পশ্চিম গজালিয়ায় একই রাতে ৭টি গরুসহ মাস দেড়েকের মধ্যে প্রায় ২ শতাধিক গরু ডাকাতি হলেও কাউকে এ পর্যন্ত আটক করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী, ডাকাতদল রাস্তা ছেড়ে গোয়ালঘর বেছে নিয়েছে। ডাকাতরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুখোশ বেঁধে বৃহত্তর ঈদগাঁওর বিভিন্ন গ্রামকে টার্গেট করে প্রতিনিয়ত অস্ত্র ঠেকিয়ে কিংবা ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে গরু গাড়ীতে তুলে প্রকাশ্যে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় কিংবা আঞ্চলিক পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায়, ঈদগাঁওতে কোন না কোন স্থানে গরু ডাকাতি হচ্ছে। সর্বশেষ গতরাত তিন টার দিকে সশস্ত্র ডাকাতদল কালিরছড়া বাজারে আসে একটি পিকআপ ও একটি ছারপোকা নিয়ে। দুদলে ভাগ হয়ে একদল বাজারে মৌলভী ওমরকে(৫০) ধরে ফেলে তাকে সাথে নিয়ে খোরশেদ আলমের পুত্র রাশেদের (৩২) দোকানে প্রবেশ করে কাটা রাইফেল তাক করে ৬টি মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল লুট করে।পরে তাদেরকে দোকানের ভিতরে বন্দী করে রাখে। অপরদল বাজারের পাশে শুক্কুর আহমদের পুত্র এনামের(৪৫) বাড়ী থেকে ৩টি গরু এবং নজির আহমদের পুত্র নুরুর(৬৫) বাড়ী থেকে ৩টি গরু নিয়ে বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপে তুলে আনুমানিক ৪ টার সময় চলে যায়। এসময় ইউসুফ ফকিরের পুত্র সাফাত উল্লাহ(৩০) বাজারে আসলে তাকে রাইফেলের বাট দিয়ে প্রহার করা হয়। চোরের দল চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে পুলিশ এসে দোকানে বন্দী থাকা ৪ জনকে মুক্ত করে। ভুক্তভোগী রাশেদ জানান, তাদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র ছিল তবে একজনের হাতে তালা কাটার যন্ত্র ছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছিল। ঈদগাও ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার কামাল বলেন, পাহাড়ে অপহরনকারীচক্র, রাস্তায় সশস্ত্র গরু চোরের দল আমরা কালিরছড়াবাসী খুব কষ্টে আছি। বার বার উদ্যোগ নেয়া সত্তেও তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। সচেতন মহলের দাবী, বাঁশকল কিংবা অন্য কিছু দিয়ে এদের দমানো সম্ভব না। পরিকল্পিতভাবে এসব ডাকাতদের গ্রেফতার করা না গেলে পুরো ঈদগাঁওর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।