এম. এ আজিজ রাসেল:

শেষ হলো রাখাইন সম্প্রদায়ের তিনদিনের মাহা সাংগ্রেং পায় বা মৈত্রিময় জলকলি উৎসব। ১৯ এপ্রিল বুধবার ঘোর অন্ধকার মাড়িয়ে আলোক জীবনের প্রত্যাশায় সামাজিক এই উৎসবের পরিসমাপ্তি হয়।

সমাপনী দিনে রাখাইন তরুণ-তরুণীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নববর্ষ উৎসবকে বর্ণিল করে তুলে। তারা পুরস্পর মঙ্গলুময় পানি ছিটিয়ে পুরনো সবকিছু ধুয়ে মুছে নতুনকে আহবান জানিয়েছেন।

বুধবার দুুপুরে শহরের জলকেলি প্যান্ডেল গুলো ঘুরে দেখা যায়, টেকপাড়া, হাঙর পাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, চাউল বাজার, ফুলবাগ সড়ক, পূর্ব-পশ্চিম মাছবাজার, আরডিএফ প্রাঙ্গন, ক্যাং পাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরা পাড়ায় রাখাইন সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা বাদ্য বাজনা বাজিয়ে দল বেঁধে এক প্যান্ডেল থেকে আরেক প্যান্ডেলে ছুটে যায়। প্যান্ডেল গুলোতে আগে থেকে অপেক্ষারত তরুণীরা মধ্যে সেজে দলবেঁধে আসা তরুণদের পানি ছিটিয়ে পুরনো বছরের হতাশা দূর করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে। রাখাইন সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও এতে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরাও জড়ো হয়েছিলেন। একই ভাবে পর্যটকরাও যোগ দেন তাদের সাথে।

জানা যায়, মূলতঃ ১৩৭৮ মগীসনকে বিদায় জানিয় ১৩৭৯ মগীসনকে বরণ করার জন্য রাখাইন সম্প্রদায় নতুন বর্ষ পালন করার উদ্দেশ্যে এই উৎসব পালন করা হয়। রাখাইন ভাষায় এ উৎসবকে বলা হয় মাহা সাংগ্রেং পোয়ে। এর বাংলা আভিধানিক অর্থ মৈত্রিময় জলকলি উৎসব। যা স্থানীয়দের মাঝে পানিখেলা নামেই বেশি পরিচিত। শহর ছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ সদর, হ্নীলা চৌধুরী পাড়া, রামু পানেরছড়া, চকরিয়ার মানিকপুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে সপ্তাহজুড়ে রাখাইন নববর্ষ পালনে নানা আনুষ্টানিকতা পালন করা হয়। জলকেলির প্যান্ডেল গুলো রঙিন ফুল আর নানা কারুকার্য ফুটিয়ে তোলা হয়। রাখাইন এলাকার প্রতিটি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবে বর্ণিল আবহ । নতুন বছরকে সানন্দে বরণ করার পাশাপাশি জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদশ বিনির্মাণে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আবাল বৃদ্ধা-বণিতা দৃঢ় কণ্ঠে শপথ নিতেু দেখা যায়। দুপুর থেকে বিকাল অবদি প্যান্ডেল গুলোতে জলকেলি শেষে সকলে মিলিত হয় বৌদ্ধ মন্দিরস্থ আরডিএফ প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান মঞ্চে। সেখানে রাখাইন শিল্পীরা সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজেদের সম্প্রদারসহ মনোমুুগ্ধকর বিভিন্ন গানে মাতিয়ে তোলে আগত দর্শনার্থীদের। এসময় ছোট শিশু থেকে শুরু করে প্রবীণরাও নেচে-গেয়ে মহা আনন্দে মেতে উঠে। অনুষ্ঠান সার্বিক তদারকি করেন সাবেক এমপি এথিন রাখাইন ও কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ, দৈনিক সমুদ্র বার্তাুর সম্পাদক ক্যথিং অং।

এনজিও কর্মকর্তা মং হ্লা ওয়ান, পুলিশ সুপার কার্যলয়ের কম্পিউটার অপারেটর বাওয়ান, বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট কাউন্সিলের উপদেষ্টা ক্যনাই, দুবাই প্রবাসী থেন থেন নাই, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী উঠান, চ লাইন, জনি, জ জ, মংসিয়াই, ইয়ুদি, জওয়ান, আক্য, আবুরি, ওয়ানশ, কিংজ, হাপু ও ওয়াহ ওয়াহ জানান, আধিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিক ভাবে সাংগ্রে পায় উৎসব পালন হয়ে আসছে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। আনন্দ উলাসে নতুন বছরকে বরণ করেছেন সবাই। এই উৎসবের মধ্যদিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুল এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এটি তাদের কাছে খুবই পবিত্র।

কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ পুঁ চ নু জানান, সাংগ্রে পায় বা জলকেলি রাখাইনদের সামাজিক উৎসব। সময়ের আবর্তে এই উৎসব সার্বজনীন রূপ নিয়েছে। এ পর্যন্ত মাহা সাংগ্রেং পায় বা জলকেলি উদযাপনে কোন বিশৃংখল ঘটনা ঘটেনি। এর জন্য রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ জেলা পুলিশসহ ও জেলা প্রশাসনের কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘রাখাইনদের জলকেলি উৎসবে ব্যাপক নিরাপত্তা ছিল। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বৃহৎ এই উৎসব।