বাংলাট্রিবিউন:

অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও রাজনীতির মাঠে এখন আলোচনায় হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটিতে ২০ দলীয় জোটের বেশ কয়েকজন নেতা থাকায় বিএনপির সঙ্গেই সখ্য ছিল হেফাজতের। কিন্তু এখনকার চিত্র খানিকটা ভিন্ন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সুসম্পর্ক দৃশ্যমান। আর তাতেই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে নতুন করে আওয়ামী লীগ, বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের হিসাব কষছে সংগঠনটি। কৌশলে দুই দলের সঙ্গেই সৌহার্দ্য রাখার পক্ষে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।
২০১২ সালে গঠিত হয় কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে তারা প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে ৫ মে, রাজধানীর মতিঝিলে সমাবেশ করে। শুরুর দিকে বিএনপির পক্ষে ও সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায় হেফাজতের। কিন্তু নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়ে এখন সরকারের দিকেই খানিকটা ঝুঁকে থাকতে দেখা যাচ্ছে সংগঠনটিকে।
সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল গণভবনের এক অনুষ্ঠানে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের প্রধান আহমদ শফীসহ কওমি মাদ্রাসার শীর্ষস্থানীয় আলেমরা উপস্থিত ছিলেন।
কওমিপন্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই সনদের স্বীকৃতি। বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠরা বরাবরই এই সনদের স্বীকৃতির বিরোধিতা করে এসেছেন। সেই দাবি পূরণ হওয়ায় সরকারের সঙ্গে খানিকটা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে হেফাজতের। ওই স্বীকৃতি ছাড়াও হেফাজত এখন ৫ মে’র ঘটনার মামলা প্রত্যাহারসহ নিজেদের অন্যান্য দাবি আদায়ে সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে।
কওমি সনদের স্বীকৃতিতে হেফাজত খুশি হলেও প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার সমালোচনা করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ১২ এপ্রিল তিনি বলেন, ‘এখন তিনি (শেখ হাসিনা) নিজেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। কওমি মাদ্রাসা সনদকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলে ধোঁকা দিচ্ছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের এক শীর্ষ নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হেফাজত অরাজনৈতিক চরিত্র নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে হেফাজতের মধ্যে যারা আছেন, তাদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগ আবার কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। এসব নেতাদের কারণে হেফাজতে রাজনৈতিক গন্ধ খোঁজে মানুষ। তবে হেফাজতের মূল লক্ষ্য নিজেদের দাবি আদায় করা। এজন্য সবার সঙ্গে সম্পর্কে আছে, থাকবে।’
হেফাজতের এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘এটা ঠিক, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বামপন্থীদের প্রভাব বাড়ে। সবশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজত আমিরকে গণভবনে ডেকেছেন, সম্মান দিয়েছেন। অথচ বামপন্থী নেতা ইনু, মেননসহ অনেকেই হেফাজত নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে যাচ্ছেন। জাসদ নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল বগুড়ার এক সভায় আলেমদের ‘কুকুরের বাচ্চা’ বলেও গালি দিয়েছেন। এর প্রভাবও সুখকর হবে না, ভোটের রাজনীতিতে ফল দেবে না।’
এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোট চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হেফাজত হেফাজতের গতিতে চলছে। হেফাজত কোনও রাজনৈতিক দল না। আগামীতেও হেফাজত কোনও রাজনৈতিক চরিত্র নিয়ে সামনে আসবে না। কেউ কেউ বলতে পারে, হেফাজত আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা বলব, হেফাজত সবার সঙ্গে আছে। সব মুসলমানদের সঙ্গেই হেফাজত আছে।’
ভোটের রাজনীতি প্রসঙ্গে মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী বলেন, ‘ভোটের রাজনীতি ভোটের সময় বোঝা যাবে। প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের মূর্তি সরানোর পক্ষে মত দিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে ঘটছে অন্য কিছু। প্রধানমন্ত্রী কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। এই স্বীকৃতি বাস্তবায়নের বাকি ধাপ পূরণে সরকার কতটুকু আন্তরিক থাকে, দেখা যাক। এগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’
হেফাজতের ঢাকা মহানগরীর সহ-সভাপতি ও খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘কওমি সনদের স্বীকৃতির দাবি দীর্ঘদিনের। এ দাবি পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এখানে কোনোভাবেই রাজনীতিকে জড়ানো উচিত নয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্য পেশাজীবীদের বৈঠকের মতোই একটি বৈঠক ছিল এটি। এখানে প্রধানমন্ত্রী হেফাজতকে ডাকেননি, হেফাজতের ব্যানারেও কেউ যাননি। সবাই ছিল মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট।’
আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘দাবি আদায়ের জন্য ক্ষমতাসীনদের সঙ্গেই বৈঠক হয়। এতে রাজনীতির কিছু নেই। তবে এটা ঠিক, সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য মাথায় রেখে কাজ করেছে। বিএনপিও ভোটের রাজনীতিকে মাথায় রেখেছে। আর আমরা দাবি পূরণ হলেই খুশি। হেফাজত কোনও রাজনৈতিক দল নয়, এটা সবার মনে রাখা উচিত।’