আইনশৃংখলা কমিটির সভায় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ ডিসি’র

বিশেষ প্রতিবেদক

মা-বাবাহীন পঞ্চম শ্রেনীর এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষন করেছে তাঁর পালক পিতা। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মুর্মূর্র্ষ অবস্থায় শিশুটিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ওসিসিতে নেয়া হয়নি। ভয়ে-আতঙ্কে মুষড়ে পড়েছে শিশুটি। তবে অভিযোগ পাওয়ার পর গতকাল সোমবার বেলা ১১ টার দিকে ধর্ষিত শিশুটিকে ওসিসি তে ভর্তি করা হয়। ঘটনাটি নিয়ে গতকাল কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন শিশুটিকে সার্বিক সহায়তা দিতে আইনশৃংখলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। ধর্ষক ওই পালক পিতা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানী মোহাম্মদ শফির বিল এলাকার মৃত মোহাম্মদ কালুর পুত্র আজিজুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজিজুল ইসলাম তাঁর ১৩ বছর বয়সী পালক মেয়ে সন্তানকে ধর্ষন করেন। ধর্ষনের পর রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে চিকিৎসা নিতে দেয়া হয়নি। আজিজ নিজেই ওষুধ নিয়ে মেয়েটিকে খেতে বাধ্য করতো। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে তাকে বিভিন্ন কৌশলে ঘরে আটকে রাখা হয়। মেয়েটির অবস্থা বেগতিক দেখে আজিজের স্ত্রী তাহমিনা শিশুটিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নীকে দেখান। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৩ এপ্রিল কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর সেখানে গত চারদিন ধরে যন্ত্রনায় ছটফট করছে শিশুটি। ভয়ে-আতঙ্কে মুষড়ে পড়েছে অসহায় এই শিশু। শিশুটির চিকিৎসা ও আইনী সহায়তা নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। গত রবিবার ঘটনাটি বেসরকারি সংস্থা নারী ও শিশু সুরক্ষা নেটওয়ার্কের নজরে আসলে তা সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়। অবহিত করা হয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরকে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে শিশুটিকে ওয়ান ষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। ধর্ষিত শিশু জানায়, তার পালক পিতাই তাকে ধর্ষন করেছে। এমনকি তাকে ওষুধ খেতে বাধ্য করা হতো। অসূস্থ হলেও তাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেয়া হয়নি। তার পালক মায়ের সহায়তায় সে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।’ শিশুটি তার প্রতি এই অবিচারের সুবিচার দাবী করেছে।

আজিজুল ইসলামের স্ত্রী ও শিশুটির পালক মা তাহমিনা বলেন, ‘শিশুটিকে চার বছর বয়স থেকে আমি লালন-পালন করে আসছি। তার মা ভারতে আর বাবা থাকেন মালয়েশিয়ায়। এ অবস্থায় আমার নিজের স্বামীকে শিশুটি বাবা বলে ডাকতো। কিন্তু সম্প্রতি আমি বাসায় না থাকার সুযোগে শিশুটিকে ধর্ষন করে। পরে তাকে চিকিৎসাও নিতে দেয়া হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন দেখলাম যে এভাবে থাকলে শিশুটি বিনাচিকিৎসায় মারা যাবে। তখন আমি বাধ্য হয়ে স্বামীর কথা না শুনেই শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি।’

ওসিসি’র প্রোগ্রাম অফিসার মো. শাহজালাল বলেন, ‘শিশুটির বক্তব্য শুনেছি। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে প্রথমে ওসিসিতে নেয়া হয়নি। সাধারণ বেডেই তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে। সোমবার সকালে শিশুটিকে ওসিসিতে নিয়ে চিকিৎসা এবং আইনী সহায়তা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়ার পর পরই শিশুটিকে ওসিসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।’

এদিকে ১৩ বছর বয়সী শিশু ধর্ষনের ঘটনাটি গতকাল কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন শিশু ধর্ষনের ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনশৃংখলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বেসরকারি সংস্থা নারী ও শিশু সুরক্ষা নেটওয়ার্কের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই ন্যাক্কারজনক ও জঘন্য। জেলা আইনশৃংখলা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। ওসিসিতে পুলিশ রয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল বলেন, ‘উখিয়ায় শিশু ধর্ষনের ঘটনাটির বিষয়ে জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। শিশুটিকে ওসিসিতে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও যা করার করা হবে। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের বলে দেয়া হয়েছে।