এফ এম সুমন , পেকুয়া

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দরিদ্র আবদুল মাবুদ (৮১)। একমাত্র বৃদ্ধা স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। দু’ছেলে থাকলেও তারা স্ত্রী সন্তান নিয়ে পৃথক সংসারে। দুঃখ কষ্টের সংসারে অল্প ভিটার জায়গা ও ছোট একটি ঘর ছাড়া আর কিছুই নাই। বয়সের ভারে ন্যুজ হওয়ায় রোজগারও করতে পারেননা। পাড়া প্রতিবেশিরা যা অল্প সাহায্যে করতো তা দিয়ে চলতো তাদের সংসার। তবুও শেষ সম্বল ভিটা ছেড়ে কোথাও যায়নি। এভাবেই চলছিল তাদের জীবন।
> কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বিগত দু’সপ্তাহ আগে প্রবণ বৃষ্টি ও বাতাসে ছোট ঘরটির উপরের চাউনি উপড়ে যায়। অসহায় হয়ে পড়েন তিনি। চরম আর্থিক সংকটের কারণে শ্রমিক দিয়ে উপড়ে যাওয়া কুঠিরটি সংস্কারও করতে পারছিলেননা। এভাবে কিছুদিন খোলা আকাশের নিচে থাকার পর ভংগুর শরীর নিয়ে নিজেই সংস্কারের চেষ্টা করতে গেলেন।গত ১০ ই এপ্রিল ঘরের চাউনির উপরে ওঠে অসহায় অবস্থায় একটি মাত্র বাঁশ নিয়ে নড়ছড়া করার দৃশ্যটি চোঁখে পড়লো বারবাকিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা এইচ এম শওকতের। ওই সময় শওকত মোঠোফোনের ক্যামরায় দৃশ্যটি ধারণ করার পর আবদুল মাবুদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট করে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। পরে এ বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়লে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষন হয়। ১৩ এপ্রিল সকালে দেশ বিদেশের দানবীর ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় এবং কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যালেন চেয়ারম্যান ও চকরিয়া পৌর আ’লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু অসংখ্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে উজানটিয়ায় বৃদ্ধের বাড়িতে যায়। এ সময় তারা বাড়িটি সংস্কারের জন্য গাছ, বাঁশ ও টিনসহ আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে যান। সর্বশেষ বাড়িটি সংস্কার করে বৃদ্ধা দম্পতির হাতে কিছু নগদ টাকা প্রদান করে চলে আসেন।
> বাড়িটি সংস্কারের সময় বৃদ্ধ আবদুল মাবুদ ও তার স্ত্রীর চেহেরায় পুড়ে ওঠেছে পৃথিবীর সমস্ত সুখ তার কাছে ধরা দিয়েছে। মহাখুশিতে সে যেন আত্মহারা। এ সময় তিনি বলেন, ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে আমি ওই স্থানে বসবাস করছি। দুটি ছেলে ছিল তারাও আমাদের পর করে দিয়েছে। অনেক চেয়ারম্যান মেম্বার আসে যায় ভাগ্যে ফিরেনা আমার। অনেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছে শুধু পায়নি আমি। বর্তমান ছাত্রলীগের এই সাহসী সন্তানটির সফল উদ্দ্যোগে দেশ বিদেশের অনেক মানুষের সহযোগিতা আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া। মরেও এখন শান্তি পাব। জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান লিটু বলেন, শওকত’রা ছাত্রলীগের উজ্জ্বল নক্ষত্র, শওকতের ডাকে সাড়া দিয়ে আজ অনেকদূরের পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি বৃদ্ধা চাচার দুঃখের বাগিদার হতে। আমরা চাচার পাশে দাড়াতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ছাত্রলীগ নেতার এই রকম সাহসিক উদ্দ্যোগে আমাদের চেতনাকে প্রসারিত করেছে, আমি উজানটিয়াবাসীর পক্ষে থেকে যারা আজকে এতটুকু কষ্ট করে বৃদ্ধা দম্পতির মুখে হাসি ফুটাতে এখানে চলে এসেছেন তাদের প্রতি আমার ব্যক্তিগত তরফ থেকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ধন্যবাদ। এই সময় উপস্থিত জনতার উদ্দ্যশ্যে ছাত্রলীগ নেতা শওকত বলেন, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এরকম অনেক অসহায় দরিদ্র মানুষ পড়ে রয়েছে যাদের খবর আমরা রাখি না।অথচ সামান্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে এই রকম হাজার হাজার সহায় সম্বল হারা মানুষের একটু ভালমত মাথা গোজানোর ঠায় হয়। এই সময় তিনি এই বৃদ্ধা দম্পতি আব্দুল মাবুদের সহযোগিতায় যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সবসময় অসহায় মানুষের সেবায় পাশে পাবেন এই আশা ব্যক্ত করেন। এইসময় উপস্থিত ছিলেন পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুর রহমান, চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রথম ভিপি শাহারিয়া রুস্তম, তোহিদুল ইসলাম তোহা,উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক চৌ, বারবাকিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হেলাল, অত্র ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্পাদক ছাবের, ছাত্রনেতা ইয়াছিন, যুবনেতা কায়ুম রেজা, রবি সহ অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।