সংবাদদাতা :

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও বাজারে বর্ষাকালের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। পানি নিষ্কাশনের ড্রেন বা পথ যা আছে তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। একের পর এক অনুমতি বিহীন অপরিকল্পিত বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন, দালান, কারখানাসহ বিভিন্ন ধরণের অবকাঠামো এখন ঈদগাঁও বাজারসহ আশপাশ এলাকার পানি চলাচলের পথ জলাভূমি ঘ্রাস করে ফেলছে। জাগির পাড়া রোড ঈদগাঁও নিউমার্কেট হতে বায়তুশ শরফ পর্যন্ত পানি নিষ্কাশনের ড্রেন সম্পূর্ণরূপে ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। কোথাও জমে আছে ময়লা আবর্জনার বিশাল স্তুপ। আর এতে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন, জলাভূমি ভরাট হয়ে ঈদগাঁও বাজার ও বাসস্টেশন থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনেরও পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সচেতন ব্যক্তিদের মতে, ঈদগাঁও ডিসি সড়ক সংস্কার হওয়ায় সড়কের দু’পাশের নালা ভরাট হয়ে মূল সড়ক থেকে দোকান, মার্কেটগুলো ১৮ থেকে ২০ ইঞ্চি নিচু হয়ে পড়ছে এবং বাজারের আশপাশে পানি চলাচল ও জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন বন্যার ঝুঁকি রয়েছে বাজারবাসী তেমনি শুষ্ক মৌসুমে অধিক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। পানি নিষ্কাশন এলাকা হিসাবে যা ছিল জাগির পাড়া, তেলি পাড়া, মাইজ পাড়ার বেশির ভাগ এলাকা, যা ছিল জলাভূমি ও নিন্মাঞ্চল কিন্তু এসবের দৃশ্যপট এখন ভিন্ন। পুরো এলাকায় তিল ধারণের জায়গা নেই। একের পর এক গড়ে উঠেছে অনুমতি বিহীন অপরিকল্পিত ভবন, বাসাবাড়ী, রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। জাগির পাড়ার সবচেয়ে বেশি পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে গড়ে তোলা হয়েছে আল্লাহর দান নামক একটি বেকারী। সুতরাং এ অবস্থায় এখন থেকে বুঝা যাচ্ছে বর্ষাকালে ঈদগাঁও বাজারসহ পাশর্^বর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষের করুণ পরিণতি কি হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের আগাম ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন তারা। বর্ষার ভরা মৌসুমে প্রতিবছর ঈদগাঁও নদীর ঢলের পানি রাস্তা, বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বাজার এলাকার বৃষ্টির পানি যদি স্বাভাবিকভাবে চলাচলে বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে তাহলে অন্য বছরের তুলনায় এবছর আরো বেশি পানিবন্দী হয়ে পড়বে মানুষ। এক জরিপে ঈদগাঁও বাজারও পাশর্^বর্তী এলাকার চিত্রে দেখা গেছে গত এক যুগ এ জলাভূমি ও নি¤œাঞ্চলের ৯০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। এতে দেখা যায় যে, জাগির পাড়া ও তার পাশর্^বর্তী এলাকার কংক্রীটের আচ্ছাদন নেই এমন জমির পরিমাণ মাত্র ৩ শতাংশ। আর একই সমীক্ষায় বলা হয় যে, ঈদগাঁও বাজারের চারপাশ ৩০৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মাত্র ৪০ বর্গ কিলোমিটার। আর জলাভূমির পরিমাণ মাত্র ২৫ বর্গ কিলোমিটার। এতে আরো বলা হয়, একযুগ আগেও ঈদগাঁও বাজারের সবুজ এলাকা ছিল ৮০ বর্গ কিলোমিটার। আর জলাভূমি ছিল ৯৫ কিলোমিটারেরও বেশি। ২০০৫ সালে বাজার এলাকার জলাভূমির পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৮০ বর্গ কিলোমিটার। ২০১০ সালে তা কমে হয় ৩ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার। ২০১২ সালে নেমে এসে ৩ বর্গকিলোমিটারে। কক্সবাজার সরকারী কলেজের এক শিক্ষক বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি ভূমি সম্প্রসারণ, শিল্পায়ন ও ভূমি দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা আবাসন তৈরি জলাভূমি হ্রাসের অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, জলাভূমি আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। এটি আমাদের জীবন তাত্ত্বিক ঐতিহ্য। আমরা যদি তরতাজা সুন্দর থাকতে চাই, তাহলে এসব জলাভূমিকেও তরতাজা রাখতে হবে। এগুলিকে ভরাট করে যা কিছু আমরা করি সেটিকে কেউ উন্নয়ন মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে তা উন্নয়নের বিপরীত ঘটনা ঘটায়।