ডেস্ক নিউজ:

এখন থেকে ৫ বছর পর আপনি আর খবর পড়তে চাইবেন না, স্রেফ দেখতে চাইবেন। আর তা টেলিভিশনে না…অনলাইনে।গবেষণা বলছে… ২০১৭ সালেই অনলাইনের কনটেন্টের ৬৯ শতাংশ ভিডিওর দখলে চলে যাবে।

এর মানে পরিবর্তনটা এত দ্রুত আসবে যে অনেকে আঁচই করতে পারবে না, কোথা থেকে কি হয়ে গেলো।

ভিডিওর সুবিধা হচ্ছে এটা একসঙ্গে তথ্য যেমন জানায়, বিনোদনও দেয়। মানুষ ধীরে ধীরে তাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

মার্কেটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকেও ভিডিওই সামনের অনলাইন বাজারের সবচেয়ে বড় মার্কেট দখল করবে। ভিডিওতে বিজ্ঞাপন যত সহজে দেখানো সম্ভব, অনলাইনের আর কোনও প্রক্রিয়াতেই তা সম্ভব নয়।

আরেকটা গবেষণা দেখাচ্ছে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানির অর্ধেকের বেশিই এখন আর তাদের স্ট্যাটিক বিজ্ঞাপন বানাচ্ছে না… বরং ভিডিও ক্লিপিংস কিংবা ভিডিও কমার্শিয়ালস বানাচ্ছে যা তাদের অনেক বেশি মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছে।

নিয়েলসেনের গবেষণা বলছে, নিকট ভবিষ্যতে অনলাইন মার্কেটিংয়ের ৬৪ শতাংশ বিজ্ঞাপনী কনটেন্টই হবে ভিডিও।

ইউটিউব এখন প্রতিমাসে ১০০ কোটি ইউনিক ভিজিটর পাচ্ছে। পৃথিবীর কোনও চ্যানেলেই এটা সম্ভবতো নয়ই, স্বপ্নও হতে পারছে না।

ইন্টারনেটে অ্যাকসেস আছে এমন প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন দিনে অন্তত একটা ভিডিও কনটেন্ট দেখছেন।

আজ থেকে আর পাঁচটি বছর যেতে দিন, তখন আর আমরা হয়তো বলবোই না, রিপোর্টটি পড়েছি, বরং বলবো, রিপোর্টটি দেখেছি। যেভাবে ভিডিওর ব্যবহার বাড়ছে তাতে তেমনটাই হবে।

সিসকোর গবেষণায় বলা হয়েছে ২০১৭ সালের ইন্টারনেট ট্রাফিকের ৬৯ শতাংশ থাকবে ভিডিও কনটেন্টে। অনেকেই থাকবেন যারা অনলাইনে ঢুকবেনই ভিডিওতে রিপোর্টটি দেখার জন্য। আর জরিপ, গবেষণা যাই বলুন, কোনও একটিও পাওয়া যাচ্ছে না, যাতে ভিডিওর এই গুরুত্বের কথা কিংবা ট্রেন্ডের কথা বলা হচ্ছে না।

অনলাইন ভিডিও ক্রমেই মানুষের কাছে সংবাদ ও বিনোদনের প্রধানতম মাধ্যম হয়ে উঠছে। যে সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের কনটেন্টে ভিডিও ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছে না, ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ে তারা পিছিয়েতো থাকবেই, একসময় অস্তিত্ব সঙ্কটেও ভুগবে।

তাই বলা হচ্ছে কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যতটিই ভিডিওতে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে- বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোর অর্ধেকের বেশি কোম্পানি এরই মধ্যে এ ধরনের কনটেন্ট আনতে শুরু করেছে। আর তা ক্রমেই বাড়ছে। নিয়েলসেন দাবি করেছে মার্কেটারদের ৬৪ শতাংশই এখন কনটেন্টে ভিডিও প্রত্যাশি।

কিন্তু কেন?

আসল কাজটি হচ্ছে ভার্চুয়াল জগতের বাসিন্দাদের কাছে কনটেন্ট নিয়ে যাওয়া। আর সে কাজে ভিডিওর জুড়ি নেই। ইউটিউব এখন মাসে ১০০ কোটি ইউনিক ভিজিটর টানছে। তা অন্য চানেলগুলোর যে কোনওটার চেয়ে বেশি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফেসবুক। ইউটিউবের ভিডিওতে জয়জয়কার দেখে ফেসবুকও ভিডিওর দিকে ঝুঁকছে।

মার্ক জুকারবার্গতো রীতিমতো ঘোষণা দিয়েছেন ফেসবুকে একটা ভিডিও সাম্রাজ্য গডে তুলবেন। সামাজিক এই নেটওয়ার্কে তিনি এমন এক ব্যবস্থা চালু করতে চান যাতে ভিডিও কনটেন্ট প্রোভাইডারা টুপাইস কামিয়ে নিতে পারেন।

এত কিছু এই জন্য যে, মানুষের মধ্যে ভিডিও দেখার প্রবণতা বেড়েছে। ব্রিটেনে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন সপ্তাহে অন্তত একবার অনলাইন ভিডিওতে চোখ রাখেন। এই হিসেবে প্রতি সপ্তাহে কেবল যুক্তরাজ্যেই ২০ মিলিয়ন লোক ভিডিও দেখেন।

ভিডিওই আপনাকে সব দিতে পারে। তথ্য-উপাত্ত-ছবি সবকিছু। অন্য কোনও মাধ্যমই তা পারে না।

একটা সাফল্যের উদাহরণ দেওয়া যাক। ভক্সওয়াগেনের একটি সাম্প্রতিক ক্যাম্পেইন ভিডিও দেখা হয়েছে ১৫ কোটি ৫ লক্ষবার। তা থেকে যে রেভিনিউ এসেছে তা গুনতে হবে ১২ ডিজিটে।

গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, একজনের ভালো লেগে গেছে তো দিলেন সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে, তার শেয়ার থেকে অন্যরা দেখেন ও শেয়ার করেন, এভাবেই তা ভাইরাল হয়ে ওঠে। এতে ওয়েবসাইটে পাঠক-দর্শককে ধরে রাখা সম্ভব হয়। বলাই হয়, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন, কিংবা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)’র ক্ষেত্রে সন্দেহাতীতভাবেই ভিডিও সবচেয়ে সেরা উপকরণ।

তথ্যের ছড়াছড়ির এই সময়ে আপনাকে এমন কনটেন্ট দিতে হবে যা সহজপাচ্য। তা না হলে আপনার পাঠক আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে। বলাই হয় একটি ছবি হাজার শব্দের কথা বলে, যদি তাই হয় তাহলে এক মিনিটের একটি ভিডিও ১৮ লক্ষ শব্দের কথা বলে। ফরেস্টার’র গবেষকরা হিসাব কষে এই তথ্য দিয়েছেন। অ্যাক্সনের গবেষণায় বলা হয়েছে, অনলাইন জগতের প্রতি দশ জনের মধ্যে সাত জনই এখন ভিডিও পাগল।

ভিডিও করা কি এতই সহজ? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ। প্রযুক্তি হাতের মুঠোয়। এ জন্য আপনার অনেক বেশি দক্ষ ও পাকাও হতে হবে না। রয়েছে নানা ধরনের অ্যাপস, টুলস, সফটওয়্যার। তবে এ জন্য আসলে অ্যাপস কিংবা টুলসটা নয় আপনার মাইন্ডসেট গুরুত্বপূর্ণ। ভিডিও কনটেন্ট বানাবেন এমন মনোস্থির করুন তো পারবেন।

ভিডিও কনটেন্ট কার কাছে পৌঁছাতে চান সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে, আর মনে রাখতে হবে ওই পাঠক কিংবা দর্শককূলের জন্য ভিডিওটি উপযুক্ত ও তাদের কাজে লাগবে। এখানে ভুলটি করে বসলে আপনার ভিডিও কাজে আসবে না।

তবে স্যোশাল মিডিয়াকে তোয়াক্কা করেই চলতে হবে। আপনাকে বহুবিধ চ্যানেলে ভিডিওটি চালাতে হবে। আর অন্যরা যাতে ভিডিওটি সহজে দেখতে পারেন এবং শেয়ার করতে পারেন সেটিও লক্ষ্য রাখতে হবে।

মোবাইল ফোন একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় মোট ভিডিওর ৪১ শতাংশই দেখা হতো মোবাইল ফোন কিংবা ট্যাবলেটে। আর এই মাত্রা বাড়ছে দ্রুত গতিতে। ভিডিও ধারণের জন্যও ্ওই মোবাইল ফোনের ব্যবহারই যথেষ্ট।

তাহলে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে ভিডিও ধারন করতে হবে ও তা প্রকাশ করতে হবে। তবে তা যেনোতেনো ভাবে যেনো না হয়। আপনাকে এইকাজে সৃষ্টিশীল হতে হবে। কেবল যে ভিডিও তৈরিতে সৃষ্টিশীলতা তা নয়, সে ভিডিওর ক্যাম্পেইন কৌশলেও সৃষ্টিশীলতার পরিচয় থাকতে হবে।

সবচেয়ে বড় সত্যটি এই যে, এখনই মেনে নিতে হবে, অনলাইন কনটেন্টের ভবিষ্যত ভিডিওতেই নিহিত।