বিদেশ ডেস্ক:
শনিবার উত্তর কোরিয়ায় সামরিক প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির পরও উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্যাসিফিক কমান্ডও এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

উত্তর কোরিয়া আগেই জানিয়েছিল, তারা ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষা বা আরও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাবে। এ নিয়ে আগেই যুক্তরাষ্ট্র ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও রবিবার উত্তর কোরিয়ার পূর্বাঞ্চলে সিনপোর কাছে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি। তবে এবার কি ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো হয়েছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শনিবার উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সাং এর ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পিয়ং ইয়ং-এ আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াচের একদিন পরই এ পরীক্ষা চালানো হলো।

দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের পরপরই বিস্ফোরিত হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ দফতর জানিয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া সিনপো অঞ্চল থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে পরীক্ষাটি সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছে।’ তবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের নেভি কমান্ডার ডেভ বেনহাম জানিয়েছেন, ‘রবিবার উত্তর কোরিয়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে তা উৎক্ষেপণের পরপরই বিস্ফোরিত হয়। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটির ধরন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

এর আগে একই জায়গা থেকে উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল। তবে এ সম্পর্কে পিয়ং ইয়ং এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।

ঘটনাটি এমন সময় ঘটলো যখন কোরীয় উপদ্বীপে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। কোরিয়া উপদ্বীপ অভিমুখে রয়েছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ভিনসন স্ট্রাইক গ্রুপ। এ নিয়ে উত্তর কোরিয়া-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে ‘ধৈর্যচ্যুতি’ ঘটেছে বলে ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাচ্ছেন।

শনিবারের সামরিক প্যারেডে ট্যাংক এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামসহ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বড় ধরনের প্রদর্শনী করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা যখন বিরাজ করছে কোরিয়া উপদ্বীপে, তখন নিজেদের সামরিক শক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করে উত্তর কোরিয়া।

এদিন দেশটির নেতা কিম জং উন বলেন, ‘প্রয়োজনে পরমাণু হামলার জন্য প্রস্তুত পিয়ং ইয়ং।’

দেশটির সামরিক কর্মকর্তা চো রেয়ং-হায়ে বলেছেন, ‘যে কোনও হামলার বিপরীতে আমরা নিজস্ব কায়দায় পাল্টা পরমাণু আঘাত করার জন্য প্রস্তুত।’

ওই সামরিক প্রদর্শনীতে সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ যোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রসহ আরেকটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবারের মত জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়। এক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র।

এর আগে কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং রিয়ল মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগ্রাসী টুইটবার্তার মাধ্যমে সমস্যা তৈরি করছেন। মার্কিন প্রশাসন অসৎ উদ্দেশ্যে উপদ্বীপের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করছে।’

উত্তর কোরিয়ার সামরিক নীতি সম্পর্কে তিনি জানান, দু’বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়ার সময় উত্তর কোরিয়া তার সামরিক নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। এখন যে কোনও ধরনের পদক্ষেপ উত্তর কোরিয়া একাই নেবে।

হান আরও বলেন, আমাদের শক্তিশালী পারমাণবিক বোমা রয়েছে। আর মার্কিন হামলার মুখেও আমরা নিশ্চিতভাবেই সে অস্ত্র হাতে নিয়ে বসে থাকবো না। মার্কিন বাহিনী যেভাবে আক্রমণ করবে, আমরা তার সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।

তিনি জানান, ‘উত্তর কোরিয়া মানসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে সরে আসবে না।’

সিরিয়ায় বিষাক্ত সারিন গ্যাস হামলার পর পরই উত্তর কোরিয়ার একটি উপদ্বীপের দিকে নৌবহর পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকেও পাল্টা হুমকি দিতে ছাড়েননি উ. কোরীয় প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। পিয়ংইয়ং অভিযোগ করে বলেছে, এ পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়া উপদ্বীপকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।

সম্প্রতি ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সিরিয়া সরকারের ওপর তিনি এরই মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। আফগানিস্তানেও আইএস জঙ্গিদের ওপর অপারমাণবিক সবচেয়ে বড় বোমা বিস্ফোরণ এরই মধ্যে ঘটিয়েছেন তিনি। উত্তর কোরিয়াকে থামানো না গেলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক অস্ত্র হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারে বলে উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন।

গত ৫ এপ্রিল জাপান সাগরে একটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া। এর আগে ৬ মার্চ উত্তর কোরিয়ার চীন সীমান্তের নিকটবর্তী তংচ্যাং-রি অঞ্চল থেকে জাপান সাগরে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। তখন দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সম্ভবত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম।

পারমাণবিক ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম চালানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং জাতিসংঘ বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ওই কার্যক্রম থেকে সরে আসেনি উত্তর কোরিয়া।