ডেস্ক নিউজ:
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় ফের বাংলাদেশি কর্মীদের সৌদি আরব যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এ হার এতটাই বেশি যে, উল্টো এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি আরবগামী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ার কারণ খুঁজে বের করতে দেশটিতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

দীর্ঘ সাত বছর পর ২০১৬ সালের আগস্টে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকসহ সব ধরনের কর্মী নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সৌদি আরব। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষক, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী এবং সব ধরনের শ্রমিকের সৌদি আরবে যাওয়ার পথ সুগম হয়।

তবে বাজার উন্মুক্ত হলেও বৈশ্বিক মন্দার কারণে সৌদি আরবে আগের মতো কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। এমন অবস্থায় অধিকহারে শ্রমিক যাওয়ার বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তুলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা হঠাৎ করেই লক্ষ্য করছি যে, সৌদি আরবে পুরুষ কর্মী যাওয়ার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে।শিগগিরই উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল সৌদি আরব যাচ্ছে। সেখানে শ্রমিকের কর্মসংস্থান আছে কিনা- তা জানার চেষ্টা করবেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।’

সৌদি আরব যাওয়া প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেবেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আজহারুল ইসলাম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবেই এ মাসের শেষে আমরা সৌদি আরব যাচ্ছি। সেখানে শ্রমিক কল্যাণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, মূল্যায়নসহ পুরুষ কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।’

‘পাশাপাশি নারী কর্মীদের সার্বিক অবস্থা, কল্যাণ ফান্ডের টাকার যথোপযুক্ত ব্যবহার, মৃত শ্রমিকদের পরিবার সঠিকভাবে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কিনা- তাও পর্যবেক্ষণ করা হবে।’

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো জানায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সৌদি আরব গেছেন এক লাখ ৬১ হাজার ৩৫৬ জন বাংলাদেশি কর্মী। এক মাসের তুলনায় পরের মাসে এ সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার করে বেড়েছে।

এ বছরের জানুয়ারিতে সৌদি আরবে যান ৪২ হাজার ২৭২ জন। পরের মাসেই দেশটিতে ৫২ হাজার ২৫৬ শ্রমিক যান। আর মার্চে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ হাজার ৮২৮ জনে। এপ্রিলে তা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে সরকার।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সৌদি আরব মূলত নারী কর্মী নেয়ার আশায় পুরুষ কর্মীর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশটিতে আগের মতো কাজের সুযোগ নেই। কয়েক মাসেই দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশি দেশটিতে গেছেন, যা সত্যিই উদ্বেগজনক।’

‘মন্দার কারণে অনেকে কাজ না পেয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যেতে পারেন। অধিক আয়ের আশায় অর্থ খরচ করে বিদেশ গেছেন তারা’- যোগ করেন ওই কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৌদি আরবে কর্মী যাওয়ায় জনপ্রতি এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে শ্রমিকরা প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি যাচ্ছেন।

গত বুধবার রাতে সৌদি আরব গেছেন নারায়ণগঞ্জের আবু সোহেল। যাওয়ার আগে এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিমানবন্দরের সামনের রাস্তায় বসে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। আলাপকালে জাগো নিউজকে সোহেল জানান, তিনি ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে ক্লিনার হিসেবে সৌদি আরব যাচ্ছেন। জমি বিক্রি এবং স্থানীয়ভাবে ঋণ নিয়ে এ টাকা জোগাড় করেছে তার পরিবার।

সোহেলের ভিসার মেয়াদ মাত্র দুই বছর। এই অল্প সময়ে ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে আরও আয় সম্ভব কিনা- জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিতে পারেননি এ তরুণ।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশি শ্রমিকরা যত টাকা খরচ করে বিদেশে যান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তত টাকা আয় করতে পারেন না। ফলে দেনার ভার কাঁধ থেকে নামাতে পারেন না তারা।

দেনার চিন্তায় অনেক সময় অতিরিক্ত কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। অনেকে জড়িয়ে পড়েন নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে চায় সরকার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাও এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

এ বিষয়ে প্রবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ওয়ারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিবাসন ব্যয়ে লাগাম টানতে না পারলে শ্রমবাজারের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।’

অতিরিক্ত কর্মী যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনই কারণ অনুসন্ধান করে যদি কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকে, তাহলে এত কর্মী যাওয়া বন্ধ করতে হবে।’

‘এর সঙ্গে মুনাফালোভী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দায়ী থাকতে পারে’- উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, ‘চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে কর্মী পাঠায়, প্রমাণ সাপেক্ষে সেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’