মকবুল আহমেদ
আজ থেকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বইমেলা শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্টলগুলো সাাজানো হয়েছে।মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি মঞ্চ ও তার উপরে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের বইয়ের প্যাকেটগুলো স্টলে আসা শুরু হয়েছে। মাঠের মাঝখানে প্যান্ডেল সাজানো ও তার চারপাশে মাইক টাঙানো দেখে বোঝা যাচ্ছে মেলা চলাকালীন গানবাজনাও চলবে। এই লেখার উদ্দেশ্য বইমেলা নয়, বইমেলায় গানবাজনা এবং তার শব্দ সম্প্রচারের সীমা বা মাত্রা নিয়ে।

কক্সবাজার শহরে প্রচারমুখি মাইক দেখলেই আতংকিত হয়ে উঠতে হয়। তাই বইমেলার মাইক দেখেও আতংকিত হই বৈকি। শহরে প্রতিদিন কোনো না কোনো একটা কিছু প্রচারের জন্য প্রচারমুখি মাইক শহরের অলিগলি ঘুরে বেড়ায়। কোনোটা মৃত্যুসংবাদ প্রচার, কোনোটা ওয়াজ-মাহফিল বা ধর্মীয় সভার প্রচার, কোনোটা রাজনৈতিক সভার প্রচার, আর কোনোটা ক্রীড়া ও সামাজিক নানা সংগঠনের কার্যক্রম প্রচারমূলক। কোনো পক্ষই শব্দ সম্প্রচারের ও পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে চলছে না। নীতিমালা মেনে চলছে না বললে খুবই কম বলা হবে। বলতে হবে শব্দ সম্প্রচারের সীমা পরিসীমা মারাত্মকভাবে লংঘন করে চলেছে।

টেক্সি বা রিক্সার সামনে-পেছনে মাইক টাঙিয়ে নিজেদের গৌরব ও মহিমা প্রচারের নামে শব্দদানব এই ছোট্র শহরের জনপদকে সকাল-সন্ধ্যা সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই, থাকলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করার গুরুত্বটা বুঝতে অক্ষম। সেই সক্ষমতা যদি থাকতো তাহলে এমন বেপরোয় নিরবতা সংহারী প্রচারমুখি শব্দদানব মাইকগুলি পরিবেশের শব্দদূষণ কওে শহরের অলিগলি সন্ত্রস্ত করে তুলতে পারতো না। কোনো সভ্য সমাজে এমন সন্ত্রস্ত কায়দায় মাইক দিয়ে জনবসতিতে মানুষের শ্রবন ইন্দ্রিয়ের পক্ষে ক্ষতিকর এমন প্রচার কার্যক্রম চলতে পারে না। আমাদের খুবই অবাক লাগে যখন স্টেডিয়ামস্থলে বা তার আশেপাশের কোনো ধর্মসভার মাইক পুলিস সুপারের কার্যালয়ের গেইটের পাশে এনে মধ্যরাত পর্যন্ত জনবসতিকে বিপর্যস্ত করে বিকট শব্দে প্রচারের জন্য লাগায়।

এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অদূরে কোনো অদৃশ্য স্থলে আয়োজিত কোনো সভা বা ধর্মসভার বক্তব্য প্রচারের জন্য তারের পেছনে তার লাগিয়ে শহরের ব্যস্ততম এলাকায় বা প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ জংশনে শব্দদানব সদৃশ মাইকগুলো হুংকার ছাড়ে। এই মাইকগুলোর সন্ত্রস্ত আওয়াজ মানুষের স্বাভাবিক কাজ-কর্মে, পথচারির চলাচলের পথে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি করে চলেছে। বিকট শব্দে সভা আয়োজনকারীদের অস্তিত্ব প্রচার ছাড়া এইসব প্রচারমুখি মাইকদানবের বক্তব্যেও প্রতি কেউ আকৃষ্ট হয় কিনা কিংবা মনোযোগ দিয়ে তা কেউ শোনে কিনা আমার খুবই সন্দেহ। এইসব প্রচারমুখি মাইক জনজীবনের ও পরিবেশের মারাত্মক দূষণ করে চলেছে।

বলতে চেয়েছিলাম বইমেলার কথা। বইমেলার কথা বলতে গিয়ে এতো কাহিনী বলার অর্থ হলো বইমেলার শব্দ সম্প্রচার ও বইমেলায় আগত দর্শনার্থীর বিড়ম্বনার কথা। এখানেও সেই শব্দ সম্প্রচারের সীমা লংঘনের কমতি থাকে না। বইমেলায় লোক সমাগম হয় মূলত বইপত্র দেখার ও কেনার উদ্দেশ্যে। মেলায় লোক সমাগম বাড়াবার লক্ষ্যে গান-বাজনা হতে পারে, কিন্তু তা যেন শব্দ সম্প্রচারের উৎপাতে মানুষের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে না তোলা হয়। তাছাড়া মনে রাখতে হবে এটি একটি সরকারের আয়োজনের একটি অনুষ্ঠান। এই ধরনের সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকেই জনগণ শব্দ সম্প্রচারের শৈলি ও রীতিনীতি শিখবে। তা না হয়ে যদি সরকারী অনুষ্ঠানের মাইকই শব্দদানব হয়ে মেলার দর্শনার্থীর উপর উৎপাত করে তখন খুবই হতাশ হতে হয়। বিগত বছরগুলোর সরকারী আয়োজনের বইমেলাগুলোতে মাইকের উৎপাত ছিল তা-ই। মেলা চলাকালীন মাইকের আওয়াজ এমনই বিকট ছিল যারা বইয়ের স্টল চালাচ্ছিলেন তাদের কাছে তো তা অসহনীয় ছিলই দর্শনার্থীরা স্টল দেখতে এসে বেশিক্ষণ দাঁড়াবার সাহস করেন নি। মাইকের আওয়াজের উৎপাতের ফলাফল হয়েছিল যেন মেলা থেকে বের হয়ে যেতে পারলেই বাঁচি। বইমেলায় এসে মনে হয়েছিল, বই মেলাটা যেন নিরবে বই দেখার ও কেনার জায়গা নয়; উচ্চস্বরে হৈচৈ করে গান বাজিয়ে কিছু একটা হচ্ছে বলে জানান দেবার জায়গা। মাইকের আওয়াজ যেমন মানুষকে বিরক্ত করে তুলে এবং মানুষের ক্ষতির কারণ হয়; তেমনি শব্দ সম্প্রচাওে ডেসিবলের নিয়ম জেনে সহনীয় মাত্রায় মাইক প্রচার করতে জানলে তা উপভোগ্য হয়।