শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর :

সমৃদ্ধ ইতিহাসের স্বাক্ষী ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক ঈদগাহ জনপদ। প্রাচীন কাল থেকে এ জনপদ সম্পদ ও প্রাচুর্য্যে পরিচয় বহন করে আসছে। ভৌগোলিক অবস্থান, আর্তসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, শিক্ষা সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক অগ্রসরতা বিবেচনায় ঈদগাহ পর্যটন শহর কক্সবাজার জেলার সর্বাধিক জনগুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ফুলেশ্বরী নদীর অববাহিকা জুড়ে গড়ে উঠে এ জনপদের জীবন ও জীবিকার লড়াই। সভ্যতার ক্রম বিকাশের ধারাবাহিকতায় ও প্রয়োজনের তাগিদে নদী নির্ভর বাণিজ্য প্রসারে ফুলেশ্বরী তীরের ঈদগাহতেই বিস্তৃৃত হয় গ্রামীণ হাট। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্টা দিয়ে বাড়ছে আবাসন ও বাণিজ্য প্রসারতা। নাগরিক চাহিদার যোগান ও তাগিদ মেঠাতে হু হু করে বাড়ছে অবকাঠামো। যার পুরোটাই অপরিকল্পিত ও অপরিণামদর্শী। ফলশ্রুতিতে সময়ের ব্যবস্থানুপাতিক হারে বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ, সৃষ্টি হচ্ছে নিত্য নতুন সমস্যা সংকট ও জটিলতার চক্র। এখনই সময় ঈদগাহকে পৌর শহরে রূপান্তরের মাধ্যমে মর্যাদা সম্পন্ন বাসযোগ্য ঠিকানা গড়ে নাগরিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে দীপ্ত শপথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। নাগরিক মর্যাদা ও সেবা পাওয়া সকলের সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার। এ অধিকার আদায় ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বসতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা সদরের বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাহকে শহর এলাকা ঘোষণা করে পৌরসভা কিংবা উপজেলায় উন্নীতকরণের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত আধুনিক পৌর শহর হিসেবে গড়ে তোলার দাবী। এদিকে ঈদগাঁও বাজার ও আশপাশের এলাকায় বিরাজমান নানাবিদ সমস্যা সংকট নিরসনকল্পে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য ঈদগাহকে অবিলম্বে পৌরসভা-উপজেলায় রূপান্তরের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, নাগরিক পরিসেবা বৃদ্ধি ও ঈদগাহকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই বাসস্থান, শারীরিক ও মানসিকতা বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করার পক্ষে মত প্রকাশ করেন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষজন। আবার নাগরিক সেবা বৃদ্ধি ও বিরাজমান সমস্যা নিরসনে প্রয়োজন যথাযথ কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার উত্তরে চকরিয়া পৌর শহর, ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণে ঈদগাঁও বাজারের অবস্থান। ভৌগোলিক অবস্থান, বাণিজ্যিক, নাগরিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ঈদগাহ পৌরসভা দাবীদার। ঈদগাঁওর রাজনীতিবিদ মমতাজুল ইসলাম খান জানান, ঈদগাঁওকে পৌরসভায় রূপান্তর করা এখন সময়ের দাবী। অপরদিকে সংবাদকর্মী গিয়াস উদ্দীন রবিন জানান, বাণিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁওকে পৌরসভা ঘোষণা করে উন্নয়নের রোল মডেল করার দাবী। দীর্ঘদিন ধরে ঈদগাঁওবাসী আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে পৌরসভা কিংবা উপজেলা পাওয়ার আশায়। এমনকি পৃথক পৃথকভাবে পৌরসভা ও উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটিও নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাজারে আগত সওদাপতিরা জানান, বিবিধ উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্তিত করার লক্ষ্যে বিশেষ করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষার স্বার্থে হয় পৌরসভা, নতুনবা উপজেলার প্রয়োজনীয়তা আমাদের মৌলিক অধিকারে পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ কাফি আনোয়ার জানান, দক্ষিণ চট্টলার দ্বিতীয় বাণিজ্যিক নগরী ঈদগাঁওকে উন্নয়নের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে পৌরসভার বিকল্প নেই। অন্যদিকে আদি পুরুষদের প্রবাদ বচন ধীরে ধীরে সত্য রুপে প্রমাণিত হচ্ছে। দূর্গম পাহাড়ী ঢল বেয়ে যৌবনের ঢেউ নিয়ে দূর থেকে দূরে চলে গেছে কালো পিচ ঢালা রাস্তা। ফলে উন্নত হয়েছে যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা। আবার পাহাড়ী ঢলে ভেস্তে যাওয়া অনেক অযোগ্য ইউনিয়ন যোগ্যতার সন্ধান পেয়ে উপজেলা কিংবা পৌরসভায় উন্নতি হয়েছে। সেসব এলাকার নতুন নতুন স্থাপত্যে টিকরে পড়েছে চোঁখ বাধানো সৌন্দর্য্যরে। অথচ এতকিছুর মাঝে ও চির অবজ্ঞায় পতিত আছে, ঈদগাঁও নামক অবহেলিত জনপদটি। বলতে গেলে বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজার। এই বাজারটি একটি বহুমুখী বাণিজ্য কেন্দ্র। এই ঈদগাঁও বাজারে পশ্চিমের মহেশখালীর লোকজন চৌফলদন্ডী হয়ে প্রতিদিন না হলেও অন্ততঃ প্রতি শনি-মঙ্গলবার নানান প্রকার পন্য সামগ্রী ক্রয়/বিক্রয়ের লক্ষ্যে ছুটে আসে। গর্জনিয়া,বাইশারী, ঈদগড়, খুটাখালী, রশিদ নগর, জোয়ারিয়ানালা, ডুলাহাজারা, আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ির লোকজনও বিভিন্ন পণ্য ক্রয়/বিক্রয়ের জন্য এই বাজারে অন্তত ২ বার আসে। বৃহত্তর এলাকার আশপাশের লোকজন তো প্রতিদিন লেগেই আছে। সব মিলিয়ে হিসাব করলে দেখা যায় যে, সপ্তাহে দুইদিন ঈদগাঁও বাজারে কমপক্ষে ৩/৪ লাখেরও বেশি লোক নিয়মিত ভাবে ব্যবসার লক্ষে যাতায়াত করে থাকে। যার কারণে গোটা দণি চট্টগ্রামের এই ঈদগাঁও বাজারটি পরিণত হয়েছে একটি জনবহুল ও ব্যস্ততম বাজার হিসেবে। অথচ এই বাজার থেকে লক্ষ-লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করেছে সরকার। কিন্তু বাজারের চিত্র ধারণ করলে বুঝা যায় যে, এটা যে বর্তমান উন্নত ব্যবস্থার চিন্তা-ভাবনা থেকে কতটুকু পিছিয়ে আছে। তা অতি সহজে অনুমান করা যায়। স্বাধীন হয়েছে কিন্তু দীর্ঘ বছরেও পৌরসভা বা উপজেলার কাঙ্খিত সেই স্বাদ খুজে পাইনি ঈদগাঁওবাসী। সত্যিকার অর্থে বিশাল এলাকাবাসীর সেই লালিত স্বপ্ন কবে পূর্ণ হবে এমন প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে।