মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল

যে যা-ই বলিনা কেন। ইন্টারনেটে আসবোই। আসতে বাধ‌্য। সময়টাই ইন্টারনেটের। আর ইন্টারনেটে এসেই পড়ি বিড়ম্বনায়। নানান বিড়ম্বনা।

মাঝে মাঝে এমন বেইজ্জত হতে হয়; ইচ্ছা হয় দুনিয়া থেকে বিদায় নিই। মাঝে মাঝে এমন অপমান বোধ করি; সহ‌্য করতে না পেরে রেগে যাই। ধরুনঃ

১.

একা বসে আছি। মনটাও খারাপ। কৌতুহলবশতঃ একটু এডাল্ট কন্টেন্টে উঁকি মারলাম। দুনিয়ার সব বস্ত্রহীনরা স্ক্রীনে হাজির। দেখে হোক আর না দেখে হোক। বন্ধ করে দিলাম। অথবা কেউ আসল, বন্ধ করে দিলাম।

বিড়ম্বনাঃ

পরে গুরুত্বপূর্ণ কোন মুহুর্তে সিনিয়রের সামনেই অন‌্য কাজ করার সময় স্ক্রীনে বস্ত্রহীনরা হাজির। করলো তো বেইজ্জতিটা!

২.

জীবনীমুখী, চিন্তাশীল কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে পড়ার আগ্রহ হল। সার্চ দিলেন। লাখ লাখ কন্টেন্ট হাজির। বাছাই করতে লাগলেন আর পড়তে লাগলেন। ভালই লাগছে। বিষয়ের শাখা উপশাখায় বিচরণ করতে লাগলেন। ইন্টারনেট আছে বলেই এতো জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ পাচ্ছি। হুট করে এমন একটি কন্টেন্ট সামনে আসল, আর মাথা আর ঠান্ডা রাখতে পারলেন না। বিশেষ করে ধর্ম অবমাননাকর। রেগে গেলেন।

বিড়ম্বনাঃ

এর বিরুদ্ধে কি কি করা যায় সব করার চেষ্ঠা শুরু করে দিলেন। হয়তো কিছুই করতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত বিরুদ্ধে লিখে মনের সব রাগ উড়ালেন। আর পারলে তো রামুর মন্দির পোড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটিয়ে দিলেন।

আমি কেবল ২টি উদাহরণ তুলে ধরলাম। আপনি ৩, ৪, ৫ এরকম করে ৯৯টার বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন এই ইন্টারনেটে।

ফলাফলঃ

ধরুন যেটার জন‌্য বেইজ্জত কিংবা অপমান বোধ করলেন সেটার বিরুদ্ধে লিখলেন। এতে যে জিনিসটার বিরুদ্ধে লিখেছেন সেটার প্রচার বেড়ে যাবে। এডাল্ট কন্টেন্টের বিরুদ্ধে লিখলে সেটির প্রচার বেড়ে যাবে। আর রামু ট্রাজেডির ফলাফল তো নিশ্চয়ই আপনি জানেন। আর নতুন করে কি আর বলবো। সেই রাতে আমি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। ফোনে কথা বলতে পারছিলাম না। যখন রামুর ঘটনা শুরু হলো। অফিস থেকে ফোন আর ফোন। আমার স্ত্রী কিভাবে কিভাবে সেই রাতে আমার অন‌্য কলিগদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে অফিসে নিউজ ও ফুটেজ পাঠিয়েছিলেন আমি জানিনা। ফেইসবুকের একটা ছবি কি ট্রাজেডির জন্ম দিয়েছে ভেবে দেখতে পারেন!

সমাধানঃ

সমাধান একটাই। জুতোপায়ে ইন্টারনেট ব‌্যবহার করা। প্রশ্ন জাগতে পারে। এটা আবার কেমন জুতো? আরে এই জুতো সেই জুতো না। একটু পরেই বুঝে আসবে।

ইন্টারনেট এ সেন্সর করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কোন কন্টেন্টকে বন্ধ রাখা এখন আর সহজ নয়। বিরুদ্ধে লিখলেও অনেক সময় ব‌্যাকলিংক হিসেবে কাজ করে। উল্টো এসইও হয়ে যায়। এসইও মানে কি? সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। এটি বিশাল একটি সাবজেক্ট। অনলাইনে কন্টেন্টকে সবার সামনে তুলে ধরার বিদ্যা বলতে পারেন।

এটা অনেকটা স্ট্রাইজ্যান্ড ইফেক্ট এর মতো কাজ করে। এটা আবার কি? বলছি। ইংরেজিতে স্ট্রাইজ্যান্ড ইফেক্ট নামের চমৎকার একটা ফেনোমেনা আছে। বারবারা স্ট্রাইজ্যান্ড নামের এক মহিলার নামেই এই ইফেক্ট এর নামকরণ। মেইন থিম হচ্ছে- কোন কিছু ধামাচাপা দিতে গিয়ে সেটা আরও ছড়িয়ে দেয়া!

মূল কাহিনী হচ্ছে- বারবারা স্ট্রাইজ্যান্ড নামের মহিলাটি তার বাড়ির ছবিটি ধামাচাপা দিতে এক ফটোগ্রাফারের বিরুদ্ধে ৫০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছিলেন। ফটোগ্রাফার উপকূলীয় এলাকার অন্তত ১২০০০টি ছবি তুলেছিলেন পলিসিমেকারদেরকে দেখাতে যে কী হচ্ছে উপকূলীয় এলাকায়। মামলার আগে বারবারার ছবিটি মাত্র ৬ বার দেখা হয়েছিল। আর মামলার পরে লক্ষ লক্ষ বার ছবিটি দেখা হয়! এখনো দেখা হচ্ছে। এখন নিশ্চয়ই আপনার ভেতরেও দেখার ইচ্ছা হচ্ছে। গুগুলে সার্চ করবেন। বাড়ির ছবি লুকাতে চেয়ে বারবারা কিন্তু ফলাফল পেলেন উল্টো! সেই থেকে এই রকম ঘটনার নাম হয়ে যায় স্ট্রাইজ্যান্ড ইফেক্ট! এ যেন পাগলকে সাঁকো নাড়ানোর কথা মনে করিয়ে দেয়া! হা হা হা…। খুবই মজার ব‌্যাপার। তাই না।

একটা গাঁজা ইফেক্ট এর কথা বলি। হাঁসতে পারবেন। গাঁজা ইফেক্ট কি আবার। সেটা ২০০৬ সালের দিকের ঘটনা। কক্সবাজার শহরের একটি পানের দোকানে গাঁজা বিক্রি হতো। এক সাংবাদিক ওই গাঁজা বিক্রেতার বিরুদ্ধে স্থানীয় পত্রিকায় একটি নিউজ করে দিল। ফলাফল কি হলো? পরদিন থেকে ওই দোকানে গাঁজা বিক্রি বেড়ে গেলো। ওই এলাকার গাঁজাখোররা আগে জানতোইনা যে এতো কাছের দোকানটিতে এই জিনিসটা পাওয়া যায়। ক্রেতা সামাল দিতে না পেরে পরে ওই বিক্রেতাকে বাধ‌্য হয়ে আরেকটা শাখা খুলতে হয়েছিল। হা হা হা।

তাই যদি চান যে কোন বিশেষ লেখা, ভিডিও, সাইট, বই ইন্টারনেটে না ছড়াক। সেটা নিয়ে নিজেই চুপ থাকুন। সেটা নিজে নিজেই চিপায় পড়ে মরে যাবে! আর যদি বন্ধ করতে স্ট্রাইজ্যান্ড ইফেক্ট কিংবা গাঁজা ইফেক্ট ঘটান, সেটাই ঘটবে।

আসলেই ইন্টারনেট পুরোটা ঝাড়– দেয়া সম্ভব না! আপনি যদি ইন্টারনেটে বিচরণ করতে চান আপনাকে জুতা পরতে হবে! আসুন, জুতোপায়ে ইন্টারনেট ব‌্যবহার করি।

তবে জুতোপায়ে ইন্টারনেট ব‌্যবহার করা জায়েয কি নাজায়েয আমি জানিনা। হা হা হা… ভালো থাকুন।

লেখকঃ সাংবাদিক ও ফ্রিল্যান্সার