নুরুল কবির ,বান্দরবান থেকে :

বাংলা নববর্ষ। বাঙ্গালী-পাহাড়ী সবার কাছে আনন্দের ফল্গুধারা দিন। নববর্ষকে ঘিরে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড় ঘেরা তিন পার্বত্য জেলায়ও আনন্দের ফল্গুধারা বইছে। ধর্ম ও সামাজিক ঐতিহ্যকে সামনে রেখে পাহাড়ে এখন সাজ সাজ রব। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলা অন্যান্য জেলার চাইতে ভিন্নতর। এখানে আদিবাসীদের এগারটি সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। তার মধ্যে মারমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্যাই বেশি। বাংলা নববর্ষকে সাংগ্রাই নামে অবহিত করে মারমা সম্প্রদায়ের লোকেরা। সাংগ্রাইয়ে বিভিন্ন ধরণের উৎসবের মধ্যে মৈত্রী পানি বর্ষণ বা পানি খেলা বা জল খেলা যে নামেই ডাকা হয় না উৎসবের আমেজ একই ধরণের। আজ বুধবার তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু উৎসবে মাধ্যমে বৈসাবি শুরু হচ্ছে । পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি আজ বুধবার বিকালে বালাঘাটায় তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু উৎস উদ্ধোধন করবেন। বৃহস্পতিবার পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব সাংগ্রাই। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার ১৪টি ক্ষুদ্র পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার মধ্যে মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাই নামে উৎসব পালন করে। শহরাঞ্চলে যা ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত। নতুন আশা আজ নব-প্রভাতে, শিশু-নারীসহ সকলে থাকুক শান্তিতে, বন্ধ হোক যত সহিংসতা, মৈত্রীময় স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় আসুক শুভ্রতা, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বান্দরবানের পাহাড়ীদের প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। আদিবাসীদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসবের যেমন ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে, তেমনি মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবের তিনটি দিনের নামও আলাদা। নতুন বছরকে বরণ এবং পুরাতন বছর বিদায়কে ঘিরে পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র জাতিস্বত্বা সমুহ নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য নিয়ে সমন্বিতভাবে সাংগ্রাই উৎসব পালন করে থাকে। মার্মা সম্প্রদায় সাংগ্রাই, ¤্রাে সম্প্রদায় চাংক্রান, খেয়াং সম্প্রদায় সাংগ্রান, খুমী সম্প্রদায় সাংগ্রায়, চাকমা সম্প্রদায় বিঝু ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু। এই চার সম্প্রদায়ের এই উৎসবকে সমষ্টিগত ভাবে “বৈসাবি” বলা হয়। বান্দরবানে মার্মাদের বৈসাবি (সাংগ্রাই) এর মূল আকর্ষন জলকেলি (পানি খেলা) উৎসব। সকল পাপাচার ও গ্লানী ধুয়ে মুছে নিতে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর উৎসবে মেতে উঠে। পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণের জন্য মূলত এই উৎসব। পুরাতন বছরের সব গ্লানী, দুঃখ, বেদনা ধুয়ে মুছে নতুন বছর যাতে সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দময় হয়ে ওঠে সে জন্যই এসব। এই উৎসব শুধু পাহাড়ীরা নয় বাঙ্গালীরাও নানা ভাবে পালন করে থাকে। সাংগ্রাই উৎসবটিকে দেখার জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বহু দেশী বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। সাংগ্রাই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা। তরুণ তরুণীরা একে অপরের প্রতি পানি ছুড়েমেরে পুরাতন গ্লানী ধুয়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। এদিকে বান্দরবানের প্রধান পাহাড়ী জাতিস্বত্বা মার্মা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে ৫ দিন ব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সমবেত প্রার্থনা, ২ দিনব্যাপী জলকেলি (পানি খেলা), পিঠা তৈরি, ঘিলা খেলা, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন, বয়স্ক পূজা এবং পাহাড়ী নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গান ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই উপলক্ষে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। মার্মাদের প্রাচীন ও বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন খেলাধুলা এই উৎসবকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলে। সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানের সাত উপজেলার পাহাড়ী পল্লী গুলোতে রম রজ সাজ। উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক কোকোচিং মারমা জানিয়েছে, সাংগ্রাই উৎসবকে আরো প্রানবন্ত করে তুলতে পাঁচ দিনব্যাপী নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। তার মধ্যে ১৩ এপ্রিল সকালে রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও গুরুভক্তির মাধ্যমে শুরু হবে মহা সাংগ্রাই উৎসব। ১৪ এপ্রিল দুপুরে সাঙ্গু নদীর পাড়ে বুদ্ধ মূর্তি স্নান। ১৫ এপ্রিল এবং ১৬ এপ্রিল বিকালে রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বান্দরবান পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, সাংগ্রাই উপলক্ষ্যে জেলায় বিশেষ শাখার পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকদারী পুলিশও কাজ করবে। ভ্রাম্যমান টিম থাকবে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশ পথ এবং বাহির হওয়ার পথ থাকবে নিয়মন্ত্রীত।