হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :

সব জীর্ণতা-দৈন্যতা বিভেদ ভুলে ভালোবাসা, স্নেহ-মায়া আর মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার দিন পহেলা বৈশাখ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি মিলিত হয় একই আহবানে। দিনটির সঙ্গে বাঙালির বিশ্বাস এবং অভ্যাস অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রয়েছে নানাবিধ রীতি ও সংস্কার। বাঙালির হৃদয়ে অসম্ভব রকমের নতুন উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে দিনটি। তাই নতুন বছরকে বরণ করতে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আয়োজন করা হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান। এবারের অয়োজনমালা অনেকটা ভিন্ন এবং জেলায় তাক লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আয়োজনের মধ্যে রয়েছে, পহেলা বৈশাখ সকালে বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা, দুপুর ১টায় পিঠাপুলি উৎসব, দুপুর ২টায় ঘুড়ি উৎসব, বিকেল সাড়ে ৩টায় মঞ্চ নাটক, বিকাল ৪টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচী। এর আগে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে কক্সবাজার ইন্টরন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একঝাঁক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ। সঙ্গেতো থাকবেই কক্সবাজারে আগত হাজারো পর্যটক সাথে স্থানীয় লোকজন।

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, হাসি-গান আর আড্ডায় সকলে বৈশাখ উদযাপনে প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত। তাদের কেউ কেউ বানাচ্ছে বাঘ, হাতি, ঘোড়া, পেঁচার মুখোশ। আর বটতলি চত্তরে তৈরী হচ্ছে বিশালকার বৈশাখী মঞ্চ।

জানতে চাইলে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এএসএম সাইফুর রহমান বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এইবার স্পেশাল কিছু করবো, প্রতিবার যা যা করা হয় সেই সব থেকে কিছুটা আলাদা, যেটা সচরাচর করা হয় না। এমন কিছু যা সবাই অনেকদিন মনে রাখবে, পহেলা বৈশাখ বলা মাত্রই সবার চোখে সেটা ভেসে উঠবে।’

পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ প্রধান নাঈম আলীমুল হায়দার বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ উদযাপনে সাধ্য অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি বেশ আগে শুরু হয়েছে, কাজ প্রায় শেষের দিকে।’

যেহেতু এবার মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তাই এবার কোনও বিশেষত্ব থাকবে কি না জানতে চাইলে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গণসংযোগ কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর চেষ্টা করি সবচেয়ে ভালো করে আয়োজন করার। এবার আরও ব্যাপক পরিসরে আমরা আয়োজন করবো।

মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার যে কয়েকটি কারণ ইউনেস্কো উল্লেখ করেছে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে, এ প্রতিকী শোভাযাত্রার মাধ্যমে অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসনের হতাশার দিনগুলোতে তরুণেরা এ মঙ্গল শোভাযাত্রার রীতিটি শুরু করেছিল। শিক্ষার্থীরা অমঙ্গলকে দূর করার জন্য বাঙালির নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, প্রাণির প্রতিকৃতি ও মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা করেছিল। সেই থেকে আজও দেশে ও দেশের বাইরে প্রায় প্রতিটি বাঙালি এমনকি বাংলা অনুরাগী কিছু বিদেশীরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান নিয়মিত পালন করে আসছেন।