জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দরনগরীতে পরিণত। যদিও সে নদী আজ মরতে বসেছে। দূষণ ঠেকাতে কার্যকর কোন উদ্যোগ ও গতি নেই। দু’পাড়ের মানুষ সাম্পান বাইচ আর সাম্পান শোভাযাত্রায় যতটা আগ্রহী, দূষণ ঠেকাতে ততটা উদ্যোগী কিনা সে প্রশ্ন পরিবেশবিদদের। তাঁরা বলছেন, সাম্পান শোভাযাত্রা ও সাম্পান বাইচেই সীমাবদ্ধ না রেখে নদী রক্ষা করতে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে।

জানা যায়, দখল-দূষণ রোধে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নানা সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন। সচেতন নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও নদী কমিশনের নানা উদ্যোগের ফলে নদীপাড়ের বেশ কিছু অংশ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদও করেছেন। তবুও রয়ে গেছে কয়েক হাজার অবৈধ দখলদার। কলকারখানা ও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খাল-নালা-নর্দমা দিয়ে বিষাক্ত-দূষিত বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিক, রাবার জাতীয় অপচনশীল দ্রব্য সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে, প্রতিনিয়ত দূষণ বেড়েই চলেছে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিতের তত্ত্বাবধানে দুই তরুণ গবেষক পিয়াল বড়ুয়া ও আল আমিন তাদের সমীক্ষায় দেখিয়েছেন যে, প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরী থেকে নানাভাবে প্রায় আড়াইশ মেট্রিক টন পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এসব বর্জ্য মাছসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এতে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. ওমর ফারুক রাসেলের নেতৃত্বে এক গবেষণা বলছেন, দখল-দূষণে শুধু কর্ণফুলী নদী নয় এর দুই পাড়ের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যও সংকটাপন্ন। এর মধ্যে ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে এবং ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দূষণ ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আরো ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে যাবে।

চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর এক গবেষণায় দেখা যায়, অতীতে কালুরঘাট থেকে মোহনা পর্যন্ত নদীর প্রস্থ ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ মিটার। এখন শাহ আমানত সেতু এলাকায় এর প্রস্থ ৫২০ মিটার।

পুরাতন ব্রিজঘাট এলাকার সাম্পান মাঝি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর পানি কালো হয়ে গেছে। দু’পাড়ের কলকারখানার দূষিত বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিকও রাবারে বিষে বিষাক্ত কর্ণফুলী নদী। এ নদীকে বাঁচাতে হবে সকলের।’

‘সাম্পান শোভাযাত্রা’ অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। চট্টগ্রামের প্রাণ কর্ণফুলী নদী। কর্ণফুলী নদী বাঁচাতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নদী রক্ষায় কাজ করতে হবে। যাঁরা এ নদী ব্যবহার করছেন, তাঁদের যেমন দায়িত্ব আছে; ঠিক তেমনিভাবে যাঁরা নদীর আশপাশে বসবাস করছেন, তাঁদেরও নদী বাঁচানোর দায়িত্ব রয়েছে।’

সাম্পান খেলা ও চাটগাঁইয়া সাংস্কৃতিক মেলা উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী ফরিদ বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী হলো দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। অবৈধভাবে কর্ণফুলী নদীর তীর দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’