অনলাইন ডেস্ক: রেলপথে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার যাত্রা পর্যটকদের দীর্ঘদিনের চাওয়া। দেশের পর্যটন এগিয়ে নিতে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নেওয়া সরকারের এ প্রকল্প ২০২৩ সালে দেখবে আলোর মুখ। পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে কেনা হবে বিশেষ ট্যুরিস্ট কোচ। সাধারণ কোচের তিনগুণ বেশি দামের এ বিলাসবহুল কোচে খাবারের ব্যবস্থাসহ থাকবে নানান সুবিধা। এ ধরনের কোচ বাংলাদেশে এটাই প্রথম। কক্সবাজারের রেলস্টেশনটিও হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন। ঝিনুক আকৃতির অত্যাধুনিক এ স্টেশনে থাকবে লকারসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা। এজন্য ভ্রমণপ্রিয়দের অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত সাত মাস। তবে বিশেষ এ কোচগুলো পেতে অপেক্ষা কিছুটা বাড়তে পারে।

কবে নাগাদ রেলপথে ভ্রমণপিপাসুরা কক্সবাজার যেতে পারবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি আগামী বছরের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করার। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত কাজের মোট অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ। ২০২৩ সালের জুনে সরকার চাইলেই ট্রেন পরিচালনা করতে পারবো।’

‘বর্তমানে প্রকল্পের কোনো সমস্যা নেই। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ডলারের দাম বেড়েছে। এই সংকট কাটিয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।’

পর্যটন বিকাশে রেলপথটি অনেক অবদান রাখবে জানিয়ে মফিজুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে স্বল্প খরচে আরামদায়ক পরিবেশে ভ্রমণ করা যাবে। খুলে যাবে সস্তায় আরামে ভ্রমণের পথ। আপনারা দেখবেন সড়কপথে অনেক ঝুঁকি। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের তুলনায় রেলপথে ভাড়াও অর্ধেক হবে।’

বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, ২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করা হয়। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। তবে কক্সবাজার থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার অংশে আপাতত রেললাইন নির্মাণকাজ হচ্ছে না। ২০১৩ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় ২০১৭ সালে। তখন প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্পে দুটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। দোহাজারি থেকে চকরিয়া তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোং লি.- লট-১, অন্যটি হচ্ছে চকরিয়া-রামু হয়ে কক্সবাজার-সিটি জয়েন্ট ভেঞ্চার (চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লি.)- লট-২। লট-১ এ পাঁচটি স্টেশন হবে: দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ার আধুনগর ইউনিয়ন, হারবাং এবং চকরিয়া। লট-১ এ ব্রিজ হবে ১৮টি, কালভার্ট ৯৮টি, রুট আন্ডারপাস ২৭টি, এলিফ্যান্ট আন্ডারপাস ২টি, এলিফ্যান্ট ওভারপাস হবে একটি। লট-১ এ স্লিপার বসানো হয়েছে প্রায় ১২ কিলোমিটার।

‘প্রকিউরমেন্ট অব ৫৪ ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ ফর অপারেটিং ট্যুরিস্ট ট্রেন ফর ট্যুরিস্ট অব কক্সবাজার’ প্রকল্পের আওতায় বিলাসবহুল কোচ সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪১ কোটি ৫১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এই প্রকল্পে সরকার দেবে ৯৬ কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বাকি ৩৪৫ কোটি ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা প্রকল্প ঋণ হিসেবে চীনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

রেলপথটি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে যেন ট্যুরিস্ট কার চালু করা যায় সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। কারণ ট্যুরিস্ট কার হাতে পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবটি রেল মন্ত্রণালয় ঘুরে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনায় ৫৪টি কোচের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪১ কোটি ৫১ লাখ ৪৮ টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি কোচ আমদানিতে খরচ পড়বে ৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সাধারণত রেলের প্রতিটি মিটার গেজ কোচ আমদানিতে গড়ে ব্যয় হয় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা। এসি কোচ আমদানিতে খরচ এর চেয়ে কিছুটা বেশি পড়ে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্যুরিস্ট ট্রেন চালুর আগে অর্থের সংস্থান করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাও (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। ৫৪টি কোচে ট্যুরিস্টদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকায় দাম কিছুটা বেশি হবে। প্রকল্পের অধীনে থাকছে ছয়টি মিটার গেজ ট্যুরিস্ট কোচ (সিটি), ১৩টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার (ডব্লিউজেসি), ২২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার (ডব্লিইজেসিসি), সাতটি পাওয়ার কার (ডব্লিউপিসি) এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার ও গার্ড ব্রেক (ডব্লিউজেডিআর)।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন) মো. হাসান মনসুর জাগো নিউজকে বলেন, কক্সবাজার পর্যন্ত আরামদায়ক-বিলাসবহল ট্যুরিস্ট কার চলবে। এজন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট কারগুলো হাতে পেতেও সময় লাগবে।

-জাগোনিউজ