ক্ষুদ্র ঋণ আদায়ের জন্য এনজিওগুলোর দায়ের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ইলিয়াস আলী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের দায়ের করা চেকের মামলার কার্যক্রম বাতিল করে রোববার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালত বলেছেন, এখন থেকে কোনো এনজিও চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না। ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে তা আদায়ের জন্য কোনো এনজিও চেক ডিজঅনার মামলা করলে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম মনিটরিং করতে মাইক্রো ক্রেডিট অথরিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেন, এনজিওগুলো বেআইনিভাবে ঋণ আদায়ের জন্য চেক ডিজঅনার মামলা করে আসছে। ক্ষুদ্র ঋণ আদায়ের জন্য মামলা করার কোনো আইনই নেই। তারা একমাত্র দেওয়ানি আদালতে অর্থ আদায়ের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে।

আদালত আরও বলেন, এনজিওগুলো দাদন ব্যবসায়ীর মতো আচরণ করছে। তারা গরিব মানুষের জীবনমান উন্নয়নের নামে জীবন বিধ্বংসী কার্যক্রম করছে। গরিব-দুঃখী মানুষকে জেলে দিচ্ছে। এটা কাম্য হতে পারে না।

এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আশেক মোমেন। ইলিয়াস আলীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান বাসুনিয়া। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে অ্যাডভোকেট জিসান মাহমুদ ও জামিউল হক ফয়সাল উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২৩ নভেম্বর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না বলেও এক মামলায় রায় দেন হাইকোর্ট।

সেদিন হাইকোর্ট বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধুমাত্র ২০০৩ সালের অর্থ ঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। পাশাপাশি বর্তমানে আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

ওই রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না।

আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের হিডেন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে থাকে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।

আদালত বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।

আদালত বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। কিন্তু কোনো গরিবের ঋণ মওফুফ করার কথা কোনোদিন শুনিনি।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স কভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।