ইমাম খাইর, সিবিএন:
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে পর্যটকবাহী জাহাজ বন্ধ রাখায় পুরো দ্বীপে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। প্রায় আবাসিক হোটেল ও খাবার প্রতিষ্ঠানে ‘খরা’ বিরাজ করছে। ক্ষুদ্র দোকানি, ভ্যান, সার্ভিস ট্রলার সংশ্লিষ্টদের পরিবারে ঠিকমতো খাবার জুটছে না। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতায় পিষ্ট দ্বীপের সব স্তরের মানুষ।

পর্যটক নির্ভর সেন্টমার্টিন দ্বীপ বলতে পর্যটক শূন্য। যার প্রভাব পড়েছে সব স্তরে।

পর্যটক গমনাগমনে অবারিত সুযোগ ও জাহাজ চলাচলের দাবিতে আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাক দিয়েছে সকল স্তরের মানুষ।

এই সময় আবাসিক হোটেল, রেস্তুরাঁ, ভ্যান, সার্ভিস ট্রলার, স্পীড বোটসহ সকল ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকবে।

সেন্টমার্টিন আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘টেকনাফ কিংবা বিকল্প পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়ে কোন সুরাহা না হলে আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে আমরা কঠোর কর্মসূচির মাঠে যাচ্ছি। দ্বীপের সকল ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন- আবাসিক হোটেল রেস্তুরাঁ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। ভ্যান, সার্ভিস ট্রলার, স্পীড বোট চলাচল করবে না। এক কথায় সকল ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়ে আমরা দুর্ভিক্ষে মরে যেতে বাধ্য হবো।’

সাবেক মেম্বার এবং বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান বলেন, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল না করলে পুরো দ্বীপবাসী দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। কারণ, এই দ্বীপে ট্যুরিজম ব্যবসা ছাড়া বিকল্প কোন জীবিকার পথ নাই।

তিনি বলেন, হয় আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা হোক, নতুবা জাহাজ চলাচল অনুমতি দেওয়া হোক।

দ্বীপে ৯০ শতাংশ মানুষ পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত। আশানুরূপ পর্যটক না আসায় দ্বীপের মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই মূহুর্তে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌ রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতির জোর দাবি সর্বসাধারণের।

স্থানীয় বাসিন্দা ও তরুণ উদ্যোক্তা এম. কেফায়েত উল্লাহ খান বলেন, ‘জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপবাসীর কঠিন দিন যাচ্ছে। ঠিকমতো দু’বেলা খাবার জুটছে না। নিরব দুর্ভিক্ষের আভাস দেখা যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘জীবিকার একমাত্র অবলম্বন পর্যটনখান উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবিতে ৪ ডিসেম্বর থেকে সর্বস্তরের জনগণ অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাক দিয়েছে।’

এম. কেফায়েত উল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসী দুর্ভিক্ষের দুয়ারে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেঁচে থাকার শেষ আকুতি জানাচ্ছি।’

সেন্টমার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ীরা জানান, নাফ নদীতে নিয়মিত অন্যান্য জাহাজ চলাচল করলেও বন্ধ রয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ।

প্রতি বছর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে ১০ টি জাহাজ চলাচল করতো। বর্তমানে কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১টি জাহাজ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। দ্বীপে আগে নিয়মিত ৫ হাজার পর্যটক যাতায়াত করলেও বর্তমানে চলছে একটি জাহাজ। তাতে পর্যটক গমনাগমন করে ৩০০ থেকে ৫০০ জন।

বে-অব বেঙ্গল ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ৫ লক্ষাধিক লোক বেকার। তারা জীবিকার পথ হারিয়ে অন্ধকারের পথে। টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজারসহ সকল স্তরের কর্মজীবি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহের স্বার্থে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌ-পথ খুলে দেওয়া আবশ্যক।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে নাব্যতা সংকটের কোন সম্ভাবনা নাই। অতীতে যেভাবে জাহাজ পরিচালনা করা হয়েছে এখনও সেভাবে সম্ভব।’