সোয়েব সাঈদ, রামু:
কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাঁকখালী নদীতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহি কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার, ১০ অক্টোবর দুপুর থেকে এ জাহাজ ভাসাকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠে বাঁকখালী নদীর দুই তীর। বাঁশ-বেত ও রঙিন কাগজ দিয়ে তৈরি ৬টি কল্প জাহাজে চলে তারুণ্যের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। নাচ-গানের পাশাপাশি এসব জাহাজে চলে বৌদ্ধ কীর্তনও।
বৌদ্ধদের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও উৎসবের আয়োজন করেছেন রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদ। উৎসবে রামু উপজেলার ছয়টি বৌদ্ধ পল্লীতে নির্মিত ৯টি কল্প জাহাজ অংশ নেয়। বাঁশ, বেত, কাঠ, রঙিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরী জাহাজে সম্রাট অশোকের প্রতিকৃতি, ঈগল, ময়ূর, ঘোড়া, চূড়াসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছয়-সাতটি নৌকায় এক করে সেই নৌকার ভেলায় বসানো হয় এক একটি জাহাজ। এসব জাহাজেই চলে শিশু-কিশোর ও যুবকদের বাঁধভাঙা আনন্দ। তারা নানা বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানে মেতে ওঠবে অন্যরকম উচ্ছ্বাসে।

জাহাজ ভাসা উৎসব উপলক্ষে বাঁকখালী নদীর তীরে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- প্রধানমন্ত্রী একান্ত সহকারি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ সভাপতি ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভ‚ষণ বড়ুয়া। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক অর্পন বড়ুয়া।
সাধারণ সম্পাদক জিৎময় বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আশীর্বাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ও সৌগত সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় থের। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়–য়া, ডিবিসি’র সংবাদ পাঠিকা নাজনীন মুন্নী, কক্সবাজার জেলা, রামু প্রেস ক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

দুপুর দুইটায় রামুর বাঁকখালী নদীর দ্বীপ শ্রীকুল পয়েন্টে জাতীয় ও উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে জাহাজ ভাসানো উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে চলে আনন্দায়োজন। প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসানো উৎসবকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ তিনমাস ব্যাপী রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে আনন্দায়োজনের পর মহাউৎসাহ উদ্দীপনার মাঝে এ উৎসব সম্পন্ন করা হলো।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অর্পন বড়ুয়া জানান, এ বছর রামু উপজেলার মধ্যম মেরংলোয়া, পূর্ব রাজারকুল, শ্রীকুল-হাইটুপী, দ্বীপ শ্রীকুল, মেরংলোয়া (সীমা বিহার), পূর্ব মেরংলোয়া, উত্তর মিঠাছড়ি, রাংকুট, চেরাংঘাটা রাখাইন পল্লী থেকে ৯টি কল্পজাহাজ নদীতে ভাসানো হয়েছে।