বদরুন্নেসা সূখি, মহেশখালী:
মহেশখালীর উপজেলার মাতারবাড়ী, ধলঘাটা ও সোনাদিয়া’সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে সম্প্রতি অতিবর্ষণ দেখা দিলেও ছোট মহেশখালী, পৌরসভা ও কুতুবজোম ইউনিয়নে চলছে তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টি। জমির মাটি ফেটে চৌচির, রোপণ করা যাচ্ছে না আমন ধান। অনেকে বাধ্য হয়ে কলসির মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমন চারা রোপণের চিন্তা করছেন।অপর দিকে পানির পাম্প দিয়ে পানি উঠছে না। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের মাথায় হাত, চোখে দুশ্চিন্তার ছায়া। এখন বর্ষাকাল চলছে। ভরা বৃষ্টির এই ঋতুতে কৃষক আমন চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করেন। সাধারণত আষাঢ় মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে এই অঞ্চলের কৃষকরা আমন রোপণ করেন। কিন্তু এবার বৃষ্টির দেখা নেই। তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টি চলছে। বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জমিতে সম্পূরক সেচ দিয়ে চারা বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিবছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির পানিতে আমন চারা রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষক; কিন্তু এবার মাসব্যাপী অনাবৃষ্টির কারণে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে পানির অভাবে অনেক কৃষক চারা রোপণ করতে পারছেন না।
উপজেলার পৌর এলাকার ঘোনাপাড়া, কুতুবজোম ইউনিয়নের খোন্দকারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলেছেন সাংবাদিক বদরুন্নেছা সুখি(হ্যাপী করিম)।এ সময় কৃষকরা বলেন, মহেশখালীতে আষাঢ় মাস জুড়েই চলছে খরা। ১৫ আষাঢ় থেকে আমন রোপা লাগানো শুরু হয়।

কৃষক ফজল করিম, তিনি ৫ বিঘা জমিতে আমন লাগাবেন। বীজতলা প্রস্তুত কিন্তু বৃষ্টির অভাবে জমি প্রস্তুত করে আমন রোপা লাগাতে পারছেন না। আমন রোপণে দেরি হলে ফলন কম হবে। তবে বৃষ্টি না হলে বিকল্প সেচ দিয়ে রোপা লাগাতে হবে। তাতে খরচ বেশি হবে।

কৃষক আব্দুল মজিদ, ৩ বিঘা জমিতে আমন চাষ করবেন। বৃষ্টির কারণে জমিতে হাল দিয়ে প্রস্তুত করতে এবং রোপা লাগাতেও পারছেন না। খরার কারণে বীজতলা রক্ষা করতে চেষ্টা করছেন মাত্র।

ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের কৃষক রহিম মিয়া বলেন, তিনি অন্যজনের ৩বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আমন চাষ করবেন। আষাঢ় মাসে বৃষ্টি নেই। তাই তিনি শ্যালো মেশিন প্রস্তুত করছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে আমন জমি প্রস্তুত এবং রোপণ শুরু করবেন।

উপজেলার বেশিরভাগ কৃষক এখন বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক পাম্প ও শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের মাধ্যমে চারা রোপণের চিন্তা করছেন। সেচ দিয়ে ধান লাগানোর ফলে আমন উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে বলে কৃষকরা বলছেন। যা অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম। তবে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৃষ্টি শুরু হবে এবং তা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী মৌসুমী কৃষকরা

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক হ্যাপী করিমকে বলেন, সাধারণত আষাঢ় মাসের ২০ থেকে শ্রাবণ মাসের শেষ পর্যন্ত রোপা আমন চাষাবাদ করা হয়। অনাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত খরার কারণে কৃষকদের সামান্য অসুবিধা হলেও তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, মোটা ধানের জন্য একটু অসুবিধা হলেও চিকন জাতের ধান একটু দেরিতে রোপণ করলেও তেমন ক্ষতি হবে না। এখনো সময় আছে যদি দু-এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হয়, তবে প্রয়োজনে গভীর নলকূপগুলো চালু করার জন্য বলা হবে।কৃষি অফিস কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

মহেশখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মহেশখালীতে নদী/হাওড়/বিল/বাওড় এর মোট আয়তন ১১৮২৬ হেক্টর, স্থায়ী জলাশয় এর মোট আয়তন ১৫০০ হেক্টর, উঁচু জমির মোট আয়তন ১৫২৭ হেক্টর, মাঝারী উঁচু জমির মোট আয়তন ৩৫০০ হেক্টর, মাঝারী নিচু জমির মোট আয়তন ৪১১৫ হেক্টর, নিচু জমির মোট আয়তন ১৪০৮ হেক্টর,মাটির গঠনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জমির পরিমাণ:এঁটেল মাটি-জমির মোট আয়তন২০৮৩ হেক্টর, এঁটেল দোআঁশ মাটি-জমির মোট আয়তন ৩২৩৭ হেক্টর, দোআঁশ মাটি-জমির মোট আয়তন ১৫৮২ হেক্টর, বেলে দোআঁশ মাটি-জমির মোট আয়তন ৩৪০৮ হেক্টর, বেলে মাটি-জমির মোট আয়তন ২৪০ হেক্টর, উদ্যান ফসলের জমির পরিমাণ:স্থায়ী ফলবাগান এর মোট আয়তন ১৯০ হেক্টর, বনজ বৃক্ষের আচ্ছাদন এর মোট আয়তন ১১৫০০ হেক্টর, ঔষধী বৃক্ষ আবৃত জমির মোট আয়তন ১০ হেক্টর, অন্যান্য বৃক্ষ দ্বারা আচ্ছাদিত জমির মোট আয়তন ৩ হেক্টর, ফসল উৎপাদন অনুযায়ী জমির পরিমাণ:এক ফসলী জমির মোট আয়তন ২৩৮০ হেক্টর,দুই ফসলী জমির মোট আয়তন ৭৯৪৫ হেক্টর,তিন ফসলী জমির মোট আয়তন ২২৫ হেক্টর,তিন এর অধিক ফসলী জমির মোট আয়তন ০ হেক্টর, আবাদযোগ্য কিন্তু স্থায়ীভাবে পতিত জমির মোট আয়তন ৪১০০ হেক্টর অনাবাদী জমির মোট আয়তন ২৫০ হেক্টর।