বিশেষ প্রতিবেদক:

কক্সবাজারের ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও আত্মীয় স্বজনদের হয়রানি, ভুল চিকিৎসা ও ভুল রিপোর্ট দেয়া এবং ভুল চিকিৎসায় একাধিক মৃত্যুর অভিযোগ আছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু কখনও তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়নি। এই প্রথমবার হাসপাতালটির পরিচালক ও চিকিৎসক ডা. শাহআলম ও রেডিওলজিষ্ট ডা. ওসমানুর রশীদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।

কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে (সদর) মামলাটি করে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তরুণ আইনজীবী মিনারুল কবির আল আমিন।

ওই আইনজীবী হাসপাতালের অবহেলাজনিত কারণে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছেন।

এড. মিনারুল কবির আল আমিন এজাহারে দাবি করেন, ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাহ আলমের অব্যবস্থাপনা ও ডা. ওসমানুর রশীদের ভুল রিপোর্টের কারণে তার অসুস্থ বাবাকে চিরতরে হারাতে হয়েছে।

কক্সবাজারে প্রথমবারের মত ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের দুই স্বনামধন্য ডাক্তার হাসাপাতালের পরিচালক ডাঃ শাহ আলম ও রেডিলজিস্ট ওসমানুর রশীদকে আসামী করে কক্সবাজার সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে (সদর) অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

আদালত বাদীর আবেদনটি আমলে নিয়ে আগামি ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল মনসুর সিদ্দিকীর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলার বাদী মিনারুল কবির আল আমিন কক্সবাজার শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের লাইট হাউজ পাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত মৌলানা আলমগীরের ছেলে।

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ ইমরুল কায়েস বলেন, যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিটি স্ক্যান রিপোর্ট পাওয়া যেতো, তবে অকালে আমার মক্কেলের বাবার মৃত্যু হতো না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা আর দায়িত্বহীনতা এই মৃত্যুর জন্য দায়ী।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর সকালে তার বাবা মৌলানা আলমগীর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়। পরে বিভিন্ন শারিরিক পরীক্ষার পাশাপাশি সিটি স্ক্যান করে রিপোর্ট দেখার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক সৌরভ। কিন্তু হাসপাতালের সিটি স্ক্যান সেবা না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করা হয়। বিকেল আনুমানিক তিনটার দিকে ডা. ওসমানুর রশীদ স্বাক্ষরিত একটি রিপোর্ট দেন তারা।

ওই রিপোর্টে বাদীর অসুস্থ বাবার ‘গুরুতর কিছু হয়নি’, ‘ব্রেইনে কোন সমস্যা নেই’ বলে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু তারপরও বাদীর বাবার সুস্থতার কোনো লক্ষণ নেই দেখে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও আইসিইউতে ভর্তি দিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বেশকিছু পরীক্ষা দেন চিকিৎসক। পরীক্ষার রিপোর্ট পেয়ে জানা যায়, রোগীর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

এরপর চট্টগ্রাম থেকে রোগীকে ঢাকা রেফার করা হলে সেখানেও একই পরীক্ষা দেন চিকিৎসকরা। অথচ কক্সবাজারের বেসরকারি হাসপাতাল আল ফুয়াদের প্রতিবেদনে কোন অসুস্থতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এতে যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন রোগী।

বাদী আল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, আল ফুয়াদের (ফুয়াদ আল খতীব) ভুল রিপোর্টের কারণে সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা পাননি আমার বাবা। পরে আমার বাবাকে আরো উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে ঢাকার শেরে বাংলা নিউরো মেডিকেল সাইন্স হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেও একই পরীক্ষা করা হয়। তাদের রিপোর্টেও মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। তবে যথাসময়ে এই বিষয়টি ধরা পড়লে বাবাকে বাঁচানো যেতো।

তার দাবি, এটি মূলত আল ফুয়াদ হাসপাতাল (ফুয়াদ আল খতীব) কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর লোভের কারণে হয়েছে।

কক্সবাজার ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাহ আলমের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তার সাথে কথা বলতে না পেরে তার ছোট ভাই সুলতান আহমদের সাথে যোগাযোগ করেন সাংবাদিকরা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ডা. শাহ আলমের অপারেশন হয়েছে। তিনি সম্পূর্ণ বিশ্রামে আছেন।

ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ জানান, মামলার বিষয়টি তারা জেনেছেন। মামলার কাগজপত্র সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

মামলার বাদীর অভিযোগ সম্পর্কে জানানো হলে ইকবাল আহমেদ বলেন, ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সিটি স্ক্যান করলে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যায় না। ওই রোগীর সিটি স্ক্যান হয়েছিল ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে।

এদিকে ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা নেয়া সরওয়ার সাঈদ বলেন, ফুয়াদ আল খতীবের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমি ও আমার পরিবার প্রচন্ড বিরক্ত। সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাওয়া যায়, ভালো সার্ভিস নেই। ডাক্তার, কর্মকর্তা কর্মচারীদের আচরণও ভালো নয়।

তার মতে, আল ফুয়াদ হাসপাতাল গলাকাটা বাণিজ্য করছে সাধারণ রোগীদের নিয়ে।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরে তাদের গলাকাটা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে বারবার ভুল চিকিৎসা, রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ, রোগীকে বেঁধে রেখে টাকা আদায়ের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এই ধরণের অভিযোগে হাসপাতালটিতে অতীতে বহুবার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।