আব্দুস সালাম,টেকনাফ(কক্সবাজার):
কক্সবাজারের টেকনাফ দমদমিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিনই ৯টি জাহজ সেন্টমার্টিনে যায়। আবার বিকালে টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এসব জাহাজগুলো টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে অনিয়ন্ত্রহীভাবে চলছে। যাত্রী বহনে কোন নিয়মনীতি মানছেন না জাহাজ কতৃপক্ষ। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। করোনা রোধে সরকারি বিধিনিষেধ থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই জাহাজগুলো চলাচল করছে বলে আইন-কানুনের তোয়াক্কা করছে না এমন অভিযোগ পর্যটকদের।

শনিবার ছুটির দিন (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে দমদমিয়া জাহাজ ঘাটে সরেজমনি গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। অনেকেই অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনেছেন টিকিট। সাড়ে ৯টার দিকে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী উঠিয়ে জাহাজগুলো সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেলেও কোনো নির্দেশনা বা পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। নেই প্রশাসনের নজরদারিও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহাজের মোট ধারণক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিদিন সেন্টমার্টিনে যাওয়ার কথা ১ থেকে ২ হাজার পর্যটকের। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে পর্যটক যাচ্ছেন ৫ থেকে ৬ হাজারের অধিক। তবে শনিবার ছুটির দিনে প্রায় ১০-১২ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন বলে জানা গেছে।

একদিকে পরিবেশ সংকটে সেন্টমার্টিন, অপরদিকে জেটির বেহাল দশা। এ অবস্থায় পর্যটকের চাপে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সচেতনমহল।
পর্যটকদের অভিযোগ, জাহাজে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী নেওয়া হয়। এছাড়া টিকিটের বাইরেও প্রচুর যাত্রী জাহাজে ওঠেন। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র যাতায়াতে জাহাজগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান পর্যটকরা।

ঢাকা থেকে আসা শেখ সফিউদ্দিন নামের এক পর্যটক বলেন, গত তিন বছর আগে ৫৫০ টাকায় কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজ করে সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। কিন্তু এবার টিকিট কিনতে হয়েছে ১২০০ টাকায়। তিনি আরও বলেন, জাহাজে টয়লেট ব্যবস্থা থাকলেও মান সম্মত নয়। অত্যন্ত নোংরা।জাহাজের পর্যটকদের এক করুণ অবস্থায় সম্মুখীন হতে হয়।
চট্রগাম থেকে আসা এক শিক্ষার্থী রুবেল বলেন, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক সেন্টমার্টিন। শুধুমাত্র মাত্রাতিরিক্ত পর্যটক, অব্যবস্থাপনা ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে এ প্রবালদ্বীপ। এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নারাজ জাহাজ কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে সুকান্ত বাবু জাহাজের টিকেট কেটে পর্যটকরা পড়েছে বিপাকে। কারণ জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার আগে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ওই জাহাজের পর্যটকদের বে-ক্রুজ জাহাজে উঠিয়ে দেওয়া হয়। সিটে বসা নিয়ে দুই জাহাজের পর্যটকদের কথা কাটাকটির জের ধরে বাকবিতন্ডা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা ও সুকান্ত বাবু জাহাজের কর্মকর্তারা ইঞ্জিন ঠিক হয়েছে মর্মে যাত্রীদের নামিয়ে নিয়ে আসে। পর্যটকদের জাহাজে তুললেও ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ায় আবার নামিয়ে দেয়া হয়। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জন্য পল্টুনে অপেক্ষামান রয়েছে।

এবিষয়ে সুকান্ত বাবু জাহাজের টেকনাফ ইনচার্জ শোয়েব শরীফের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
টেকনাফ দমদমিয়া জাহাজ ঘাটে কোস্টগার্ডের ডিউটিরত আলম নামে এক কর্মকর্তা বলেন, পর্যটকরা সুকান্ত বাবু জাহাজে করে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়ার জন্য টিকেট কাটে। ওই জাহাজের ইঞ্জিনের ত্রুটি হওয়ায় তাদের বে-ক্রুজ জাহাজে তুলে দেয়া হয়। সিটে বসা নিয়ে পর্যটকদের কথা কাটাকাটি কারনে পর্যটকদের নামিয়ে নিয়ে আসি। পর্যটকদের বে-ক্রুজ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার অভিযোগে সুকান্ত বাবু জাহাজের ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ায় অন্য জাহাজে অন্য পর্যটকরা একেবারে উঠে পড়েছিল। তাদের নিরাপত্তার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। যারা আজকে সেন্টমার্টিন থেকে ফিরবে না তাদের ফিরতি ট্রিপে দ্বীপে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।