রামু প্রতিনিধি :
কক্সবাজারের রামু- মরিচ্যা সড়ক সম্প্রসারণ কাজ চলাকালে প্রায় এক কিলোমিটার অংশে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহষ্পতিবার সকালে কাজে বাঁধা দেয়ার সময় হাতাহাতির ঘটনা ঘটলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মেরংলোয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সড়ক সংস্কার কাজের শুরুতে কোন বাঁধা দেয়া হয়নি। কিন্তু বিটুমিন সহ ঢালাই দেয়ার আগমূহুর্তে বাঁধা দেয়ায় মাসখানেক ধরে ওই স্থানে কাজ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ধুলোবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে পুরো এলাকাবাসী। এ কারনে এলাকাবাসী সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে চাপ দিয়ে শুরু করে। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বৃহষ্পতিবার সকালে ঠিকাদারের নিয়োজিত কর্মীরা কাজ শুরু করে। এসময় স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যক্তি এসে জোরপূর্বক কাজ বন্ধ রাখার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বাঁধাদানকারিদের সাথে বাঁকবিতন্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সংস্কার কাজ চালাতে সহায়তা করে। এসময় এলাকাবাসীও সংস্কার কাজে নিয়োজিত কর্মীদের পক্ষে অবস্থান নেয়।
জানা গেছে- মেরংলোয়া গ্রামের মরহুম শামসুল হুদা চৌধুরীর ছেলে আলমগীর সড়কের জমি নিজেদের দাবি করে বিজ্ঞ আদালতে সম্প্রতি মামলা দায়ের করেন। মামলার করার পর থেকে ওই সড়কে তিনি কাজ বন্ধ করে দেন। এনিয়ে ক্ষুব্দ হয়ে উঠে এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা কন্ঠশিল্পী বশিরুল ইসলাম জানান- টেকনাফ হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এ আরাকান সড়কটি কয়েকশ বছরের পুরনো ও ঐতিহ্যবাহি সড়ক। রামু বাইপাস সড়ক নির্মাণের আগে এটি ছিলো চলাচলের মহাসড়ক। এটি নতুন কোন সড়ক নয়। সংস্কারের জন্য পাশের কোন জমিও নেয়া হয়নি। এরপরও সড়কের কাজ বন্ধ করায় এলাকার মানুষের দূর্ভোগের অন্ত ছিলোনা। তাই এলাকাবাসী সড়কটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলো। তিনি আরো জানান- এমন একটি প্রধান সড়ক মালিকানা দাবি করে সংস্কার কাজ বন্ধ রাখার ঘটনা দূঃখজনক ও নজিরবিহীন। এলাকাবাসী, প্রশাসক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় বৃহষ্পতিবার থেকে বন্ধ রাখা সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য এলাকাবাসী আনন্দিত। এরপরও যদি কোন বাঁধা দেয়া হয়, তবে এলাকাবাসী তা বৃহত্তর জনস্বার্থে প্রতিহত করবে।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানিয়েছেন- সড়কের সংস্কার কাজ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুপক্ষ থানায় জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি আরো জানান- বাঁধাদানকারিদের তিনি সড়কের জমি নিয়ে দাবি থাকলে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার পরাপর্শ দেন এবং অপ্রয়োজনে সরকারি উন্নয়ন কাজে বাঁধা না দেয়ার অনুরোধ করেন।

উল্লেখ্য কক্সবাজার জেলার প্রাচীনতম সড়কগুলোর মধ্যে রামু-মরিচ্যা সড়ক অন্যতম। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই সড়কটি সংস্কার কিংবা সম্প্রসারণের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই সড়কটি গুরুত্ব অনেক। এই সড়কের দুপাশে রয়েছে রামু সেনানিবাস, বিজিবির রামু সেক্টর হেডকোয়ার্টার, বোটানিক্যাল গার্ডেন, দেশের সবচেয়ে বড়ো নারিকেল বীজ বাগান, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তিন হাজার বছর আগের পুরনো একটি তীর্থ স্থানসহ বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ ও দর্শনীয় স্থান। এসব বিবেচনায় সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এই সড়কটির সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটিকে প্রস্থ ৯ ফুট থেকে ৩৬ ফুটে উন্নীত করণসহ সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ২৬৬ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি নির্মিত হলে এটি হবে প্রস্থে এই অঞ্চলের বড় সড়ক। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে এটির সংযোগ ঘটবে। এছাড়া চট্টগ্রামের সঙ্গে টেকনাফের সরাসরি যোগাযোগে ১৭ কিলোমিটার পথ কমে আসবে।