মো: ফারুক.পেকুয়া:

আসন্ন ২৮ নভেম্বর ৩য় ধাপে সারাদেশের মত পেকুয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা তাদের প্রতীক পেয়ে বেশ জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে।

তার মধ্যে বারবাকিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েকজন মনোনয়ন ফরম নিলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ আ’লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী জিএম আবুল কাশেম ও জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম। ইতোমধ্যে তাদের কাংখিত ভোট আদায়ে জনগণের ধারে ধারে যাচ্ছে।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, বিগত ১০ বছর আগে জিএম কাশেম, ইকবাল হোছাইন ও সাকিলকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় মাওলানা বদিউল আলম। বিগত ৫ বছর আগে জিএম আবুল কাশেম ও সাইফুল ইসলামের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জিএম আবুল কাশেমকে অল্পভোটের ব্যবধানে হারিয়ে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় মাওলানা বদিউল আলম।

আসন্ন নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত ইকবাল হোছাইন ও সাকিল মনোনয়ন ফরম নিলেও তা প্রত্যাহার করায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় রয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিএম আবুল কাশেমের সাথে জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা বদিউল আলম।

বারবাকিয়ায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ৯টি ওয়ার্ডে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়াও ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যরা জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী জিএম আবুল কাশেম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা বদিউল আলম ভোট প্রার্থনা করে চলছেন। দুই প্রার্থীই তাদের জয়ের ব্যাপারে ভোটারদের আশ্বস্ত করে চলছেন।

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১০ বছর আগে সৎ প্রার্থী হিসেবে মাওলানা বদিউল আলমকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করলেও প্রতিটি গ্রামের সড়ক ব্যবস্থা খুব নাজুক ছিল। গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থা ছিল ইউপি সদস্যদের হাতে। যার কারণে চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলমের অবর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় বাণিজ্যের শিকার হয়েছেন সাধারণ জনগণ। অবহেলিত ছিল বারবাকিয়া ইউনিয়নের জনগণ।

এরপর বিগত ৫ বছর আগে স্থানীয় আ’লীগের গ্রুপিংয়ে অল্পভোটের ব্যবধানে আবারো হেরে যান জিএম আবুল কাশেম। সেই ভোটেও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ও ইউপি সদস্য দ্বারা বিচার বাণিজ্য বন্ধ করার ঘোষণা দিয়ে মাওলানা বদিউল আলম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও সাধারণ জনগণের দুঃখ লাঘবে কাংখিত সেবা দিতে ব্যর্থ হন। ৯টি ওয়ার্ডে ২৭ টি গ্রামীণ সড়ক কোন ধরণের সংস্কারে হাত লাগেনি। বৃষ্টির সময় অসহনীয় দুর্ভোগে চলাচল করতে হয়েছে সাধারণ জনগণকে। এছাড়াও বিগত ৫ বছরে তথ্য সেবা কেন্দ্রে এককভাবে দখল করে রেখেছিল মোঃ ইউনুছ। চেয়ারম্যানের সততার সুযোগ নিয়ে জন্মনিবন্ধন করার কথা বলে প্রতিজন থেকে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন ইউনুছ। এমন অভিযোগে বেশ কয়েকবার তার বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ট সংবাদও প্রকাশ হয় স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে।

তবে অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যর্থ ও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালত পরিচালনায় ইউপি সদস্যদের হাতে নির্ভর হলেও দুর্নীতি আর অনিয়ম থেকে দূরে ছিলেন চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম। অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ার ভয়ে সরকারি বরাদ্ধ আদায়ে অনীহা থাকায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়াও মাওলানা বদিউল আলমের ইউনিয়ন পরিষদের অল্প কয়েকজন ইউপি সদস্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও অপরাধকর্মে সরাসরি জড়িয়ে পড়ায় সন্ত্রাসের জনপথ হয়ে উঠে বারবাকিয়া। তাদের নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হন চেয়ারম্যান। প্রতিদিন কোন না কোন এলাকায় চুরি আর ছিনতাই হলেও স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থতা ছিল এমন অভিযোগও পাওয়া যায়।

ঠিক এবারের নির্বাচনেও সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম অতিতের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায়ের চেষ্টা করলেও নৌকার প্রার্থী জিএম আবুল কাশেম নির্বাচনী মাঠে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছে।

সূত্রে আরো জানা গেছে, নৌকার প্রার্থী আবুল কাশেম পরিবার পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে বসবাস করেন। ছয় মাস অথবা ১ বছর পর এলাকায় এসে জনগণের সাথে সাক্ষাত দেন। বারবাকিয়া থেকে স্থানীয়রা কক্সবাজারে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা বললে, তিনি সহায়তার চেষ্টা করলেও সাধারণ জনগণ থেকে প্রায় সময় বিচ্ছিন্ন ছিলেন তিনি।
এছাড়াও বারবাকিয়া আ’লীগের নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেনি। যার কারণে আ’লীগের গ্রুপিং সৃষ্টি হয়ে বিগত ইউপি নির্বাচনে অল্পভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এবারে নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় আ’লীগ থেকে তাঁকে নৌকা প্রতীক দিয়ে মনোনয়ন দিলেও আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মী প্রচারণায় অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাওলানা বদিউল আলম সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ গড়নে ভূমিকা রাখলেও নাজুক গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নৌকার প্রার্থীর প্রতি সাড়া দিচ্ছে ভোটারগণ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হাসিটা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে যাবে এমন অভিমত জানিয়েছেন তারা।

নৌকার প্রতীকের প্রার্থী জিএম আবুল কাশেম বলেন, পেকুয়া উপজেলার মধ্যে বারবাকিয়া হচ্ছে অবহেলিত ইউনিয়ন। গ্রামীণ সড়ক দিয়ে চলাফেরা করা কষ্টসাধ্য। বারবার সৎ মানুষের অজুহাত দিয়ে ভোট আদায় করলেও এবারে সর্বস্থরের জনগণ আর ভূল করবেনা। বর্তমান সরকার সারাদেশে যেভাবে উন্নয়ন করে চলছে তার জন্য নৌকাকে বিপুল ভোটে বিজয় করতে মাঠে নেমেছে আ’লীগ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ। আগামী ২৮ তারিখ তার প্রমাণ দিবে বারবাকিয়াবাসী।

তবে চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা বদিউল সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, নৌকার প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে। এমনকি আমার সমর্থকদের ভয়ভীতি ও মামলা দিয়ে হয়রানি করবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। প্রচারণার সময় হামলার পরিকল্পনাও নিয়েছেন তিনি। বিষয়টি আমি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। নৌকার প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বিজয় ঠেকাতে পারবেনা ইনশাল্লাহ।