সোয়েব সাঈদ:
রামুর ১১ ইউপি নির্বাচন আজ। সবকটি ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের দাপটে গতিহীন হয়ে পড়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। অধিকাংশ ইউনিয়নে নৌকার পরাজয়ও যেন সুনিশ্চিত। কয়েকটিতে জয়ের আশা থাকলেও তাদের কঠিন প্রতিদ্বন্ধিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নৌকা প্রতীকের এমন নড়বড়ে পরিস্থিতিতে বিদ্রোহীদের পাশাপাশি জয়ের আশা দেখছেন অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও।
রামু উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬৭ জন লড়ছে। ১১ টি ইউনিয়নেই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। নৌকার প্রার্থীদের জিততে লড়তে হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান সহ জনপ্রিয় শক্তিশালী নেতাদের।
উপজেলা আওয়ামীলীগের দেয়া তথ্য ও প্রতিটি ইউনিয়ন সরেজমিন ঘুরে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, রামুর প্রানকেন্দ্র ফতেখারকুলে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুাবল হক চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো ‘র মধ্যে। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে আরো রয়েছে ফরিদুল আলম চেয়ারম্যান। ওই ইউনিয়নে দুই বিদ্রোহীই নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এছাড়া ফরিদুল আলম গেল ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই চেয়ারম্যান হন।
চাকমারকুলে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী রয়েছে। তবে প্রচার প্রচারণা ও জনপ্রিয়তার কারণে লড়াই হবে নৌকার মাঝি বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার ও বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল আলম প্রকাশ এন. আলমের মধ্যে।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়নে ৭ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল আলম, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যুবলীগ নেতা ওসমান সরওয়ার মামুন, বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ ও জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ চৌধুরীর অবস্থান ভালো।
খুনিয়াপালংয়ে ৮ জন জন চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকলেও মাঠে এগিয়ে রয়েছে নৌকার মাঝি বর্তমান চেয়ারম্যান সাংবাদিক আবদুল মাবুদ ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হক।
দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে আওয়ামীলীগ প্রার্থী খোদেস্তা বেগম রীনার সাথে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের। এখানে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো। ইতিমধ্যেই ইউনুছ ভুট্টো পেশী শক্তির জোরে ইউনিয়ন আওয়ামলীগ অফিসকে তার নির্বাচনী অফিস বানিয়েছেন।
ঈদগড়ে ৪ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে ত্রিমুখি। আওয়ামীলীগ প্রার্থী নুরুল আলম, বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান ফিরোজ ভুট্টো ও বিএনপি নেতা নুরুল আজিম মাইজ্যার মধ্যে যে কেউ হাসতে পারে শেষ হাসি।
গর্জনিয়ায় চেয়ারম্যান পদে ৭ জন মাঠে রয়েছেন। এখানকার সমীকরণে জয়ের মালা পরতে পারেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী মুজিবুর রহমান বাবুল কিংবা গোলাম মৌলা চৌধুরীর মধ্যে যেকোন কেউ। এখানে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
কচ্ছপিয়ায় ৭ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। শেষ হাসি হাসতে পারে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন মেম্বার কিংবা বিএনপি নেতা আবু মো. ইসমাঈল ( নোমান)।
রাজারকুলের ৪ জন প্রার্থী থাকলেও নৌকার মাঝি সরওয়ার কামাল সোহেল ও বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমানের মধ্যেই লড়াই হবে। এখানে জনমতে এগিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান।
রশিদনগরে ৩ জন প্রার্থী থাকলেও মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছে মো. হান্নান সিদ্দিকী ও এমপি কমলের অনুসারি বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আলম। এখানে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন মোয়াজ্জম মোর্শেদ।
জোয়ারিয়ানালার প্রার্থী ৬ জন হলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী কামাল শামসুদ্দীন আহমদ প্রিন্সকে জিততে হলে ডিঙ্গাতে হবে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা আবছার কামাল সিকদার ও বিএনপি নেতা গোলাম কবিরকে। এখানে স্বতন্ত প্রার্থী রয়েছেন রাশেদুল ইসলাম, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনছারুল আলম ও এম. এম নুরুচ্ছাফা।
এবিষয়ে রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শামসুল আলম মন্ডল বলেন, রামুর প্রতিটি ইউনিয়নেই এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা। তারা কোথাও কালো টাকার প্রভাব খাটাচ্ছে। কোথাও স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।
জানা গেছে- রামুর চাকমারকুল, ফতেখাঁরকুল ও জোয়ারিয়ার নালায় অতিরিক্ত চীফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রাজীব কুমার বিশ্বাস, কাওয়ারখোপ, গর্জনিয়া ও ক্চছপিয়ায় সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রাজীব কুমার দেব দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া খুনিয়াপালং রাজারকুল ও দক্ষিণ মিঠাছড়িতে বান্দরবানের জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ নাজমুল হোসাইন এবং ইদগড় ও রশিদ নগরে কুতুবদিয়া চৌকির সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল হক নির্বাচন পর্যবেক্ষন করবেন।
রামু উপজেলা নির্বাচন অফিসার মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন- বুধবার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মতে আজ ভোর রামুর প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। তিনি জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোন অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার ( ভারপ্রাপ্ত ) রফিকুল ইসলাম বলেন, শতভাগ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহন করা হবে। কেন্দ্রে কেউ যদি কোন সমস্যা করার চেষ্টা করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ব্যালেট পেপার ছিনতাই কিংবা ভোট ডাকাতির চেষ্টা করলেই গুলি করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, অবাধ, সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের মাঠে জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা সমন্বিতভাবে কাজ করবে। সব কেন্দ্রকেই সমান গুরুত্বদিয়ে প্রশাসনকে সাজানো হয়েছে। যদি কোন কেন্দ্রে কোন অঘটন ঘটে তবে টহল টিমগুলো সাথে সাথে সে কেন্দ্রে যাবে। এছাড়া আগের নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।