মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু:
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী দোছড়ি এ দুই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এবারের ইউপি নির্বাচনে বিএনপি- জামায়াত অংশগ্রহণ না করায় নৌকা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় বিএনপি,জামায়াতের নেতা কর্মী সমর্থকদের সাথে পাল্লা দিয়ে আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরাও। এদিকে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ হওয়ায় দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মী ও নিজ দলের বিদ্রোহী নেতা কর্মীদের মাঝে বাড়ছে কোন্দল। অপর দিকে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামীলীগের একটি অংশ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে প্রতিপক্ষ হিসেবে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নিজ দলের নেতাকর্মীদের। এ জন্য নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে নাইক্ষ্যংছড়ি আওয়ামীলীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। জানা গেছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ও দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ছে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। যাদের ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ২টি ইউনিয়নে বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী না থাকায় নৌকা ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে জামায়াত-বিএনপির সাথে পাল্লা দিয়ে আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের একটি অংশের নেতা কর্মীরা । এ জন্য আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের আশংকা করছেন আওয়ামীলীগের অনেক নেতারা। তবে বাইশারীর স্থানীয় ভোটার আবুল কালাম ও নুরুল আজিম জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আলম কোম্পানি একজন সহজ সরল ও পরিক্ষিত নেতা তার জনপ্রিয়তা ও কৌশলের কছে হেরে যাবে বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর। বাইশারী ৮ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার ও ৯ নং ওয়ার্ডের সভাপতি আব্দুল খালেক তারা নৌকা বিরোধী আনারসের পক্ষে তার এ প্রতিবেদককে বলেন বাইশারী ইউনিয়নের দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। তবে তাদের মতে জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর এগিয়ে। আলম দলীয় প্রতিকে নির্বাচন করলেও বাহাদুর আওয়ামিলীগের সভাপতি তাই দুইজন একই দলের হওয়ায় সাধারণ ভোটাররা দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারনায় যাচ্ছে।

বাইশারী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আলম কোম্পানি এবং প্রতিপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী বাইশারী ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের (বহিষ্কৃত) সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর আনারস প্রতীক নিয়ে মাঠে অবিরাম প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন তার প্রত্যাশা। তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জেলা আওয়ামীলীগের নেতা আলম কোম্পানি জানান, তিনি গত ৫ বছর দায়িত্ব পালন কালে মানুষের সুখে দুঃখে পাশে ছিলেন। মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির হাত ধরে রাস্তাঘাট,স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসাসহ এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। তাই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য দলমত নির্বিশেষে ১১ নভেম্বর ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি। এদিকে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী এলাকায় কর্মী সমর্থকদের উৎসবমুখর পরিবেশে চালিয়ে যাচ্ছে প্রচার-প্রচারনা। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার আমেজ লক্ষ করা গেছে। ভোটের মাঠে ভোটারদের মন গলাতে প্রার্থীরা দিন রাত নির্ঘুম ভোট ভিক্ষা চেয়ে গ্রামে চষে বেড়াচ্ছে।
বাইশারী ও দোছড়ি ইউনিয়নের মানুষের মাঝে ভোটের হাওয়ায় সরগরম হয়ে দোকান,রাস্তাঘাট ও চায়ের টেবিলে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। হলুদিয়া শিয়া,খরুলিয়া মোড়া ও মধ্যম বাইশারী এলাকার কয়েকজন ভোটার জানান, বিগত নির্বাচনের চেয়ে এবার ইউপি নির্বাচনে প্রচারণায় মরিয়া হয়ে উঠেছে দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় আওয়ামীলীগ প্রাথীর প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ। তাই স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত কৌশলগত কারনে তারা মত প্রকাশ করতে চান না। তবে তারা চায় জাতীয় নির্বাচনের প্রতিশোধ হিসাবে যে কোন ভাবে নৌকার ভরাডুবি হওক এ নির্বাচনে। এদিকে দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী (বহিষ্কৃত) প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাবিবউল্লাহ’র প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়ছেন আওয়ামিলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইমরান মেম্বার। এ ইউনিয়নে তার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ তিনি দলের জন্য প্রবিণ ব্যক্তি সে হিসাবে তার পক্ষে মাঠে নেমেছে উপজেলার বাঘা বাঘা মানুষ তাকে বিজয়ী করতে। মোঃ ইমরান এই সাংবাদিকদের জানান জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হাবিবউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান,সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয় লাভ করবেন। কারণ তিনি বিগত পাঁচ বছরে মানুষের সেবা ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করেছেন এ জন্য আবারো তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন এলাকার মানুষ তিনি এমন প্রত্যাশা করেন। তবে নির্বাচনের বাকি আছে আরো ১০ দিন বাইশারী ও দোছড়ি ইউনিয়নে নির্বাচনী পথ সভা সমাবেশ চোখে পড়ার মত। প্রার্থীদের পোষ্টার হাট বাজার ও নির্বাচনী মাঠে ছেয়ে গেছে। সচেত মহলের মতে এই দুই ইউপিতে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ হচ্ছে বিএনপি- জমায়াত। তারা এখন নির্বচনে মাঠে নেই তাই তাদের ভোট বেশি ভাগ যেদিকে পড়বে তারাই এবার নির্বাচিত হবেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসার আবু জাফর মোঃ ছালেহ বলেন, ভোটাররা যাতে প্রতিটি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারেন সে জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত কোন প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।