নুরুল কবির, বান্দরবান:
বান্দরবানের টংকাবতী বন রেঞ্জ ও আশপাশ এলাকার কয়েকটি মৌজা থেকে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে প্রাকৃতিক বনায়নের গাছ। বহিরাগত সিন্ডিকেট কর্তৃক পাহাড়ের বাইরের আবরণটা ঠিক রেখে ভিতরে বনের কাঠ কেটে সাবাড় করা হলেও বনবিভাগ অদৃশ্য কারণে নিরব। এসব কাঠ পাচার হচ্ছে পাশর্^বর্তী লোহাগাড়া হয়ে চট্টগ্রামে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ৩০৯নং দক্ষিণ হাঙ্গর, ৩১১ হরিণঝিরি, ৩১২ নম্বর পানছড়ি মৌজার বিভিন্ন স্থান থেকে দিনরাত সমানতালে প্রাকৃতিক বন কেটে নিয়ে যাচ্ছে আবদুর রহিম কোম্পানীর নামে একটি সিন্ডিকেট। তবে ওই কাঠ চোরাকারবারী চক্রের দাবি, এসব গাছ কোনও বনায়নের নয়। টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানার জমির গাছ কাটছে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা রুইঅং কারবারী জানান, টংকাবতী ও হরিণঝিরি দুটি মৌজায় এক সময় প্রাকৃতিক বনে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে স্থানীয় কিছু মানুষের সহায়তায় বহিরাগত কাঠ চোরাকারবারী আবদুর রহিম কোম্পানীর লোকজন অব্যাহতভাবে প্রাকৃতিক বনের গাছ কর্তন করে নিয়ে যাচ্ছে। এই চোরাকারবারীরা বনের ভেতর কাঠুরিয়া দ্বারা গাছ কেটে পরবর্তী ৪টি হাতি দিয়ে গাছগুলো বনের বাইরে নিয়ে আসে। বড় গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ইট ভাটার জন্য কচি কচি চারাগাছও সাবাড় করছে চক্রটি।

জানতে চাইলে ৩০৯নং দক্ষিণ হাঙ্গর মৌজার হেডম্যান পাইরিং ম্রো বলেন, তার মৌজায় মাঝে মাঝে কাঠ পরিবহণে কয়েকটি হাতি দেখা যায়। এসব হাতি দ্বারা আবদুর রহিম কোম্পানী নামে লোহাগাড়ার এক ব্যবসায়ী গাছ নিয়ে যান।

আবদুর রহিম কোম্পানী জানান আমরা অনুমতি নিয়ে গাছ কাটছি এতে সমস্যা নেই,

জানা গেছে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুম এলে কাঠ চোরাকারবারীরা সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা বনের ভিতরে শ্রমিক পাঠিয়ে পাহাড়ের গাছগুলো কাটে এবং হাতি দ্বারা বড় বড় গাছগুলো বহন করে টংকাবর্তী এলাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তী সেখান থেকে বিভিন্ন সাইজে করাত দিয়ে কেটে ট্রকযোগে পাচার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শেষে বনের ভিতর থেকে কাঠ পরিবহণের সুবিধার্থে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়। আর ডিসেম্বরের মাঝামঝি থেকে পুরো শুষ্ক মৌসুমে ট্রাকে ভরে কাঠগুলো রঙিমুখ-নাফারটিলা-চরম্বা সড়ক হয়ে লোহাগাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টংকাবর্তী এলাকায় রাস্তার পাশে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন কিছু শ্রমিক। এসময় তাদের সঙ্গে কথা হলে, তারা এই প্রতিবেদককে জানান, তারা লোহাগাড়ার জনৈক আবদুর রহিম কোম্পানীর গাছগুলো কেটে ট্রাকে তুলে দেন। আরেকটি গ্রুপ বনের ভিতর থেকে এই গাছগুলো পাঠান। কাঠের বৈধতার বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।

বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাঈনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন- ‘আমি মাত্র নতুন এই রেঞ্জে যোগদান করেছি, সমতল আর পাহাড়ের বনায়নের আইনকানুন এক নয়। টংকাবর্তী এলাকায় সরকারী কোন বনায়ন নেই। তবে ওইদিকে কাঠ পাচার হয় বলে তিনি শুনেছেন। বিষয়টি প্রয়োজনে সরেজমিন দেখে আসবেন।