এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া:

আগামী ১১ অক্টোবর সোমবার দুর্গা বোধনের মধ্য দিয়ে সুচনা হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুজা। এই দুর্গোৎসবকে ঘিরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যাপক উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এবার দেবী দূর্গা মর্ত্যলোকে আসছেন ঘোটকে চড়ে আর দোলায় ছড়ে দেবলোকে ফিরে যাবেন। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে এবছরও সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই দুর্গোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রতিটি ম-প কমিটি। আর উৎসবকে ঘিরে শেষ মহুর্ত্বে চলছে ম-পগুলোতে চলছে সজ্জিতকরণ কর্মযঞ্জ। বেড়েছে শিল্পীদের ব্যস্ততা। তুলির আঁচড়ে রাঙ্গিয়ে তুলছেন প্রতিটি প্রতিমা।

চকরিয়া উপজেলা পুঁজা উদযাপন সুত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌরসভা এলাকা মিলিয়ে প্রতিমা ও ঘট পুঁজাসহ মোট ৯১ টি পুঁজা মন্ডপে দূর্গোৎসব পালিত হবে। তন্মধ্যে প্রতিমা পূঁজা ৪৮টি আর ঘট পূঁজা ৪৩টি। শান্তিপূর্ণভাবে যাতে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে পারে এ লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্ততি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন , পুলিশ প্রশাসনের সাথে পূজাঁ উদযাপন কমিটি ও স্বস্ব মন্ডপের প্রতিনিধিরা একাধিকবার সভাও করেছেন।

চকরিয়া সার্ব্বজনীন কেন্দ্রীয় হরি মন্দির দুর্গা পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা.অসীম কান্তি রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু দাশ জানান, ঝাঁকজমক পূর্ণভাবে ‘মা’ দূর্গার অর্চনা করার উদ্দেশ্য থাকলেও করোনা মহামারির কারণে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এবারের পুঁজা পালন করতে হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তারমধ্যে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা এবং পুঁজা মন্ডপের ঢুকার মুহুর্ত্বে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা। আমাদের পক্ষ থেকে এসব বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য ব্যবস্থাও নিয়েছি।

তাঁরা আরো বলেন, প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে। শুধু মাত্র রংয়ের তুলিতে মা’কে সম্পন্নরুপে ফুটিয়ে তোলার কাজ বাকি রয়েছে। পেন্ডেলের কাজও শেষ হয়েছে। এবার ৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব আরম্ভ হবে। পুঁজায় অষ্টমীর দিনরাতে পালাগানের আয়োজন করেছি। এছাড়া নবমী পূঁজারদিন দুপুরে প্রসাদের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চকরিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুকুল কান্তি দাশ বলেন, দূর্গা পূঁজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্টান হলেও অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনও এই উৎসবে সামিল হন। দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় চকরিয়া একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এলাকা। এখানে সব ধর্মের মানুষ বিভিন্ন পূজাঁ-পর্বন ঈদসহ নানা আয়োজন মিলেমিশে উদযাপন করি। এবারের দূর্গা পূঁজাও যাতে ঝাঁকজমক পূর্ণভাবে অনুষ্টিত হয় সেজন্য ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা করা হবে।

চকরিয়া উপজেলা পূঁজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ ও সাধারণ সম্পাদক বাবলা দেবনাথ বলেন, এবছর উপজেলার ৪৮টি মণ্ডপে প্রতিমা পূঁজা এবং ৪৩টি মন্ডপে ঘট পূঁজা অনুষ্টিত হবে। এর মধ্যে চকরিয়া পৌরসভায় ৭টি, উপজেলার ফাঁসিয়াখালীতে ৮টি, কাকারায় ৩টি, বরইতলীতে ৬টি, হারবাংয়ে ৮টি, সাহারবিলে ২টি, ডুলাহাজারায় ৭টি, খুটাখালীতে ১টি, চিরিংগা ইউপিতে ১টি, কৈয়ারবিলে ৩টি ও পূর্ব বড় ভেওলায় ২টি মন্ডপে প্রতিমা পূঁজা অনুষ্টিত হবে।

তাঁরা আরো বলেন, দুর্গোৎসব যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্টিত হয়েছে। এবছরও করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পূঁজামন্ডপগুলোতে মাস্ক পরিধান করতে হবে। সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, দূর্গা পূঁজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকবে। মোতায়েন থাকবে পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম। মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশ সদস্যরা টহলে থাকবে। এছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশ পুঁজা মন্ডপের আশপাশে নিয়োজিত থাকবে। আশা করি সুষ্ঠভাবে দূর্গোৎসব সম্পন্ন হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূঁজা। এরমধ্যে পূঁজা কমিটি ও সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সাথে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও করোনা মহামারির কারণে গতবারের মতো বিধিনিষেধ পালন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর সরকারীভাবে যে বরাদ্দ দেয়া হয় আশা করি তা পূঁজো শুরুর আগেই চলে আসবে। পূঁজাতে যাতে আইনশৃঙ্খলায় কোন সমস্যা না হয় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।##