সংবাদ বিজ্ঞপ্তিঃ
নবম বেতন কমিশন গঠন, সচিবালয়ের ন্যায় পদ পদবি পরিবর্তন, বেতন বৈষম্য নিরসন, টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল, মূল বেতনের ৪০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানসহ ৫ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ।

সংগঠনটির কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি মোঃ খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে রবিবার (৩ অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদের নিকট দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়।

দাবিসমূহ হলো-
১। নবম বেতন কমিশন গঠন, বিদ্যমান বেতন কাঠামোতে ২০টি গ্রেডকে ১০টি গ্রেডে রুপান্তর এবং অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় ৪০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান প্রসঙ্গেঃ

২০১৫ সালে ৮ম পে কমিশন কার্যকরের পর ইতোমধ্যে ৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে। দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি, মুদ্রাস্ফিতিসহ নিম্ন আয়ের গণকর্মচারীগণ সীমাহীন আর্থিক সংকটে নিপতিত। পে কমিশন গঠনের কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান না হওয়ায় গণকর্মচারীদের মনে চরম হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এ অবস্থা নিরসন কল্পে আমরা অবিলম্বে নবম বেতন কমিশন গঠন, বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে ১০টি গ্রেডে রূপান্তর সহ বেতন বৈষম্য নিরসনে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একই সাথে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি স্থায়ী পে-কমিশন গঠনের প্রস্তাব থাকলেও তার কোন উদ্যোগ প্রণীত না হওয়ায় অন্তবর্তী ব্যবস্থা হিসেবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মূল বেতনের শতকরা ৪০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদানের আবেদন জানাই।

২। সচিবালয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সমকাজে সমমর্যাদা ও পদবী পরিবর্তন ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ প্রসঙ্গেঃ

সমকাজে সমমর্যাদা ও সমবেতন প্রাপ্তি একটি সাংবিধানিক অধিকার। সে অধিকার থেকে বঞ্চনাহেতু সচিবালয়ের ন্যায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী, স্টেনোগ্রাফার, তত্ত্বাবধায়ক ইত্যাদি সমমানের পদকে ২য় শ্রেণীর পদমর্যাদাসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নামকরণ, স্টেনোটাইপিস্ট, অফিস সহকারী, বাজার সহকারী, নাজির ইত্যাদি সমমানের পদকে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নামকরণ, হিসাব রক্ষক পদকে সহকারী হিসাব কর্মকর্তা, হিসাব সহকারী পদকে উপসহকারী হিসাব কর্মকর্তা নামকরণ এবং অফিস সহায়ক সমমানের পদকে অফিস সহকারী নামকরণ। জজ কোর্ট ও জেলা প্রশাসনসহ সকল সরকারি দপ্তরে কর্মরত ওয়ার্ক চার্জড, কন্টিনজেন্ট পেইড, অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ, পদোন্নতিবিহীন পদ (ইষড়পশ চড়ংঃ) লাইব্রেরীয়ান, ডুপ্লিকেটিং মেশিন অপারেটর, কেয়ারটেকার, হোস্টেল সুপার, প্রসেস সার্ভার, কম্পাউন্ডার, ড্রেসার, এ্যাটেনডেন্ট ইত্যাদি সমমানের পদকে পরবর্তী উর্দ্ধতনস্তরে পদোন্নতির প্রস্তাবসহ সচিবালয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সকল সরকারি দপ্তরে এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি প্রণয়নের আবেদন জানাচ্ছি।

৩। টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড পূনর্বহাল, পূর্বের ন্যায় শতভাগ পেনশন প্রদানসহ
পেনশন গ্র্যাচ্যুইটির হার ১ টাকায় ৫০০ টাকা নির্ধারণঃ

২০১৫ সালে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার ফলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় পদোন্নতিহীন কর্মচারীবৃৃন্দ মারাত্মক আর্থিক নিপীড়নের শিকার বিধায় কর্মচারীদের সর্বক্ষেত্রে টাইমস্কেল ও সিলেকশনগ্রেড পূনর্বহালের আবেদন জানাচ্ছি। সরকারি চাকুরীজীবীদের বিদ্যমান পেনশন নীতিমালা পরিবর্তন করে প্রাপ্য টাকার ৫০ শতাংশ সরকারি তহবিলে স্থায়ী জমা রাখার সিদ্ধান্তে অবসরে যাওয়া কর্মচারীরা চরম আর্থিক সংকটে পরেছে। এমতাবস্থায় আমরা টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড পূনর্বহাল, পূর্বের ন্যায় শতভাগ পেনশন প্রদানসহ পেনশন গ্র্যাচ্যুইটির হার ১ টাকায় ২৩০ টাকার স্থলে ৫০০ টাকা নির্ধারণের জন্য দাবি জানাচ্ছি।

৪। বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট মূল বেতনের ২০ শতাংশ নির্ধারণ ও
আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গেঃ

২০১৫ সালের বেতন কাঠামোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য প্রকট (সবোর্চ্চ ৮৬,০০০/- এবং সর্বনিম্ন ৮২৫০/-) যা নিম্ন আয়ের কর্মচারীদের জন্য চরম হতাশাজনক, এমতাবস্থায় বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে ঘোষিত বাজেটে গণকর্মচারীদের জন্য কোন আর্থিক সুবিধা না রাখায় কর্মচারীগণ হতাশ। এক্ষেত্রে বর্তমান বাজার দর ও বাস্তবতার নীরিখে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের স্থলে ২০ শতাংশ নির্ধারণে, আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি দপ্তরে বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্রীতদাস প্রথার ন্যায় আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করা, ফলে শূন্য পদে পদোন্নতির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে এবং নিয়োগকৃত জনবলের বেতন ভাতার অর্ধাংশ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিচ্ছে। আউট সোর্সিং প্রথায় জনবল নিয়োগের কারনে সারাদেশের কর্মচারী অঙ্গনে চরম হতাশা, তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে বিধায় নিয়োগকৃত জনবলকে রাজস্বখাতে নিয়মিত করণের আবেদন জানাই।

৫। দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে ন্যায্য মূল্যে মানসম্মত রেশন প্রদান,
পাহাড়ী, পর্যটন ও দূর্যোগ ভাতা প্রদানঃ

দুর্গম অরণ্যে পাহাড়ী অঞ্চল, হাওড়, বাওর, সামুদ্রিক অঞ্চলে কর্মরতদের প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর মুখে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকে বিধায় তাদের জন্য মূল বেতনের ৪০ শতাংশ দূর্যোগভাতা, পাহাড়ী পর্যটন ভাতা পূর্বের ন্যায় ৩০ শতাংশ বহাল, জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরতদের বিচারকদের ন্যায় জুডিশিয়াল ভাতা প্রদান, এছাড়া গাড়ী চালক ও ১৮, ১৯, ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদেরকে নার্সদের ন্যায় মাসিক বেতনের সাথে ৩০০০/- (তিন হাজার টাকা) হারে সাজপোষাক ভাতা, হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী, টেকনিশিয়ান, গাড়ী চালক, লিফ্টম্যান, ইলেকট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিতদের মূলবেতনের ২০% ঝুঁকি ভাতা প্রদান, কক্সবাজার পৌর শহরকে সরকার ঘোষিত ব্যয়বহুল শহর হিসাবে ঘোষণা করায় ব্যয়বহুল শহর ভাতা কার্যকর সহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে বিশেষ বিশেষ সরকারি সংস্থার (আর্মি, পুলিশ, বিজিবি, আনসার) সদস্যদের ন্যায় ন্যায্য মূল্যে মানসম্মত রেশন প্রদান এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য রেল এর ন্যায় ৪০ শতাংশ পোষ্য কোটা সংরক্ষনের দাবী জানাচ্ছি।

এ সময় উপদেষ্টা ও তৃতীয় শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি কক্সবাজার জেলার সভাপতি এমডি গোলাম মোর্শেদ, উপদেষ্টা মোঃ আকবর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরফানুল আলম, সহসভাপতি নাছির উদ্দীন পাটওয়ারী, হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া, বাবু অমীর চৌধুরী, আবুল হাশেম, আবু ইসহাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতাউর রহমান, এম মাহমুদুল হক, মোঃ নাজিম উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু কমল কান্তি পাল, মোঃ ইদ্রিস আলী, প্রচার সম্পাদক মোঃ নাছির উদ্দীন, দপ্তর সম্পাদক বাবলা পাল, সিনিয়র সদস্য বকুল লাল বড়ুয়া, সদস্য জসিম উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

তারা বলেন, শেখ হাসিনা বিশ্ব বরেণ্য নেত্রী। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অভূতপূর্ব সফলতার জন্য জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার অর্জন, পদ্মাসেতু বিনির্মাণ, অসংখ্য উন্নয়নে ফলপ্রসু অবদান তারই।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতির সফল উত্তরণে প্রধান মন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রতি আন্তরিক অপরিমেয় শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের ৫ দফা দাবী স্বহৃদয় বিবেচনার জন্য সানুগ্রহ দৃষ্টি একান্তভাবে কামনা করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের জেলা নেতৃবৃন্দ।